২০২৩ সালে সহিংসতায় নিহত ১২২২

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩১, ২০২৩, ০৫:৫০ পিএম
২০২৩ সালে সহিংসতায় নিহত ১২২২
ছবি: সংগ্রহীত

সারাদেশে ২০২৩ সালে মানবাধিকার পরিস্থিতি ভয়াবহ রুপ ধারণ করেছে। রাজনৈতিক সহিংসতা, নির্বাচনী সহিসংতা, সীমান্তে বিএসএফের হামলা, পারিবারিক সহিংসতা, সাংবাদিকদের উপর হামলা, গণপিটুনির ঘটনা, বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড, শিশু নির্যাতনের ঘটনায় নিহত ১২২২ জন। সম্প্রতি মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) এক বছরের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

জানা যায়, বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ এবং এইচআরএসএস এর তথ্য অনুসন্ধানী ইউনিট ও স্থানীয় প্রতিনিধিদের তথ্যের ভিত্তিতে ২০২৩ সালের মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে তৈরি করা হয়েছে।

হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস) বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালে রাজনৈতিক সহিংসতার ৯৩৩টি ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৯৬ জন ও আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৯২৫৮ জন। যার অধিকাংশই ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের অন্তর্কোন্দল, নির্বাচনী সহিংসতা এবং বিএনপির পদযাত্রা ও সমাবেশকে কেন্দ্র করে আওয়ামীলীগের পাল্টা শান্তি সমাবেশ কেন্দ্রিক সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনা ঘটে। তাছাড়া আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলির দ্বারা ৮৫৫৬ জন রাজনৈতিক কর্মী গ্রেফতারের শিকার হয়, তন্মধ্যে বিএনপি-জামায়াতের ৮২৭৭ জন। বিরোধীদলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে কমপক্ষে ৪৫৬ টি মামলায় ১৪৪০০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরো ৫৮৯৪০ জনকে অজ্ঞাত আসামী হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়। এছাড়া আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের দ্বারা বিরোধাীদলীয় কমপক্ষে ৬২৮ টি সভা-সমাবেশ আয়োজনে বাধা প্রদানের ঘটনা ঘটেছে। এসময় তাদের সাথে সংঘর্ষে ৩৩৯১ জন আহত এবং সমাবেশ কেন্দ্রিক ৬০৫০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়াও নির্বাচনী সহিংসতার ২৫৬টি ঘটনায় নিহত হয়েছেন ০৯ জন এবং আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৪৩৯ জন।  শুধুমাত্র ডিসেম্বর মাসেই নির্বাচনী সহিংসতার ১৮৭টি ঘটনায় নিহত হয়েছেন ০৫ জন এবং আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৯০২ জন ।

বিগত বছর ১৯৪টি হামলার ঘটনায় ৩৬৭ জন সাংবাদিক হত্যা, নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। ২জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন অন্তত ১৮৬ জন, লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন ৮৬ জন, হুমকির শিকার হয়েছেন ২৬ জন, গ্রেফতার ১১ জন ও ৫৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। একই সময়ে আশঙ্কাজনকভাবে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ ও সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩ এর অধীনে দায়ের করা ৫৮টি মামলায়  গ্রেপ্তার হয়েছেন ৬০ জন এবং অভিযুক্ত করা হয়েছে ১৮৮ জন। এছাড়া ‘সংখ্যালঘু’ সম্প্রদায়ের উপর ২৭ টি হামলার ঘটনায় আহত হয়েছেন ৪৩ জন এবং ১৭ টি মন্দির, ৩১ টি প্রতিমা ও ২৫ টি বসতবাড়িতে  হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। মার্চ মাসে পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনায় ১ জন নিহত ও অন্তত ৬০ জন আহত হয়েছেন। এ হামলার ঘটনায় কমপক্ষে ১০১টি বাড়ি ও ৩০টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।

গণপিটুনির ১১৩টি ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৭৩ জন এবং আহত হয়েছেন ৮৮ জন। এ সময়ে ১৯৮টি শ্রমিক নির্যাতনের ঘটনায় পুলিশের গুলিতে ৩ জন সহ নিহত হয়েছেন ৪০ জন এবং আহত হয়েছেন ৩৫০ জন। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং শ্রমিকদের সুরক্ষামূলক সরঞ্জামের অভাবে দুর্ঘটনায় ১৪৮ জন শ্রমিক তাদের কর্মক্ষেত্রে মারা গেছেন। এ সময়ে ২৪ টি গৃহকর্মী নির্যাতনের ঘটনায় ১০ জননিহত ও ১৪ জন আহত হয়েছেন। এছাড়াও“ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী”(বিএসএফ) কর্তৃক ৫৮ টি হামলার ঘটনায় ৩০ জন বাংলাদেশী নিহত এবং৩১ জনআহত ও ১৩ জন গ্রেফতার হয়েছেন। এ সময়ে ভারতীয় সীমান্তে আরও ৯ জন বাংলাদেশীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

২০২৩ সালে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ¦ারা বা হেফাজতে বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের ৩১টি ঘটনার শিকার হয়েছেন ৩৩ জন। যাদের মধ্যে ০৭ জন তথাকথিত ক্রসফায়ার বা বন্দুকযুদ্ধের নামে, ০৭ জন নির্যাতনে এবং ১৪ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর  হেফাজতে থাকা অবস্থায় ৫ জন মারা গিয়েছে। এছাড়াও কারা হেফাজতে ৮৬ জন মারা গেছেন। শুধুমাত্র ডিসেম্বর মাসেই কারা হেফাজতে ১৫ জন মারা গেছেন যার মধ্যে বিএনপি-জামায়াতের ৮ জন।
উল্লেখ্য এ বছর আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে তুলে নেয়া হয়েছে কমপক্ষে৩১ জনকে যাদেরকে অন্তত ৭২ ঘন্টার মাঝে আদালতে সোপর্দ কিংবা তাদের পরিবারকে আটকেরর বিষয়ে অবহিত করা হয়নি। ১৯ জনকে পরবর্তীতে গ্রেফতার দেখানো এবং ৬জন ছেড়ে দেয়া হলেও বাকি ৬ জন এর কোনো খবর পাওয়া যায়নি। এছাড়াও ২৪ ঘন্টায় নিন্ম আদালতে সোপর্দ এবং ১২ ঘন্টার মাঝে পরিবারকে জানানোর বিষয়ে আদালতের সুস্পষ্ট নির্দেশ থাকলেও অন্তত ১৬ জনকে অবৈধ ভাবে আটকে রাখা হয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গিয়েছে যাদের মধ্যে ৬জনকে মুক্তি দেয়া হলেও বাকি ১০ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

২০২৩ সালে ২৩৬১ জন নারী ও কন্যা শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৯৯০ জন, যাদের মধ্যে আশঙ্কাজনকভাবে ৫৫৭ জন (৫৬%) ১৮ বছরের কম বয়সী শিশু। এটা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয় যে ১৯২ জন (১৯%)  নারী ও শিশু গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন এবং ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৪৩ জনকে যাদের মধ্যে শিশু ২৮ জন এবং ৯ জন ধর্ষণের শিকার নারী আত্মহত্যা করেছেন। ৭০২ জন নারী ও শিশু যৌন নিপীড়ণের শিকার হয়েছেন তন্মধ্যে শিশু ৩৯৪ জন।  যৌতুকের জন্য নির্যাতনের ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৭৩ জন নারী এবং শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৬৩ জন ও আত্মহত্যা করেছেন ৭ জন। পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন ২৯৯ জন, আহত হয়েছেন ৯৮ জন এবং আত্মহত্যা করেছেন ১১৮ জন নারী। এসিড সহিংসতার শিকার হয়েছেন ৯ জন নারী যাদের মধ্যে ২ জন মারা গেছেন। অন্যদিকে, এটি উদ্বেগজনক যে, ২১৭৮ জন শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন যাদের মধ্যে ৫২৬ জন প্রাণ হারিয়েেেছন এবং ১৬৫২ জন শিশু শারীরিক ও মানষিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

এআরএস