দেশে অবস্থান করা বিদেশি নাগরিকদের মধ্যে ভারতীয়দের সংখ্যাই বেশি

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২৪, ০৭:৩৩ পিএম
দেশে অবস্থান করা বিদেশি নাগরিকদের মধ্যে ভারতীয়দের সংখ্যাই বেশি

বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে ব্যবসা ও বিনিয়োগ, ইমপ্লয়ি ভিসায়, স্টাডি ভিসায় এবং টুরিস্ট ভিসায় বিদেশি নাগরিকগণ এসে থাকেন। বেসরকারি সংস্থার তথ্য মতে, বাংলাদেশে ৪ থেকে ৫ লক্ষ বিদেশি নাগরিক অবস্থান করছে। যেহেতু অবৈধ বিদেশি নাগরিকদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা বা সংখ্যা সঠিক জানা নেই, তাই এগুলো অনুমান নির্ভর বলে দাবি করেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। তবে দেশে অবস্থান করা বিদেশি নাগরিকদের মধ্যে ভারতীয় নাগরিকদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।

বাংলাদেশ পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ এবং সুরক্ষা সেবা বিভাগের রিপোর্ট অনুসারে, ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে অবস্থানরত বৈধ বিদেশি নাগরিকদের সংখ্যা ১ লাখ সাত হাজার ১৬৭ জন। এরমধ্যে অফিসিয়ালি সবচেয়ে বেশি রয়েছেন ভারতীয় নাগরিক যাদের সংখ্যা ৩৭ হাজার ৪৬৪ জন। তাছাড়া ২য় অবস্থানে রয়েছে চীনের নাগরিক ১১ হাজার ৪০৪ জন। এসকল নাগরিকগণের মধ্যে ব্যাবসা ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত ভিসায় রয়েছেন ১০ হাজার ৪৮৫ জন, ইমপ্লয়ি ভিসায় ১৪ হাজার ৩৯৯ জন, স্টাডি ভিসায় ছয় হাজার ৮২৭ জন এবং টুরিস্ট ভিসায় রয়েছেন ৭৫ হাজার ৪৫৬ জন।

আয়কর ফাঁকি দিয়ে অনেক বিদেশি নাগরিক এ-থ্রি ভিসা, বি-ভিসা কিংবা টুরিস্ট ভিসায় বাংলাদেশে এসে কাজ করছেন। অনেক ক্ষেত্রে তারা এক প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজে এসে অন্য প্রতিষ্ঠানে চলে যাচ্ছেন। ২০০৬ সালে প্রণীত ভিসা নীতিমালায় কর্মানুমতি গ্রহণের শর্ত না থাকায় অনেকে আবার অনুমতি না নিয়ে কিংবা ভিসার মেয়াদ না থাকায় বা শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও বছরের পর বছর কাজ করে মাত্র ৩০ হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে দেশ থেকে চলে যান। এক্ষেত্রে দৈনিক ও প্রগ্রেসিভহারে জরিমানার বিধান আরোপ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। সেই সাথে কর্মানুমতি থাকা সাপেক্ষে বিদেশী নাগরিকগণ যদি অন্য প্রতিষ্ঠানে যোগ দিতে চান তাহলে নির্ধারিত ফি প্রদান করে সেই প্রতিষ্ঠানে যেতে পারবেন। তবে সেক্ষেত্রে নিজ দেশে গিয়ে পুনরায় ভিসা করার দরকার পড়বে না বলে জানিয়েছে  বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা)।

গত ৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) অনুষ্ঠিত কর্মানুমতি ব্যতীত বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি প্রকর্মী ও নাগরিকগণের বিষয়ে করণীয় নির্ধারণের লক্ষ্যে সভায় এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সভায় আরও বলা হয়, অনেকে টুরিস্ট বা বিজিনেস ভিসায় এসে কর্মানুমতি প্রাপ্তির কাগজ পত্র প্রেসেসিং এর জন্য ৩ মাস এবং অনুমদোনের ৩ মাস সময় পেয়ে থাকেন সেই বিষয়েও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ওয়ার্ক পারমিট না নিয়ে কাজ করায় সরকার একদিকে যেমন রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, অন্যদিকে আয়কর আইন ২০২৩ অনুযায়ী কোন বিদেশি বাংলাদেশে অবস্থান করে কাজ করলে আয়কর প্রদান ও কর্মানুমতি গ্রহণ বাধ্যতামুলক, সেই হেতু এটা অপরাধ। সেই সাথে আমরা দেশি ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানসমূহের কাছে আবেদন রাখতে চাই যে যোগ্যতা সম্পন্ন জনবল বাংলাদেশেই রয়েছে তাদের রিপ্লেসমেন্টে যেন বিদেশি কর্মীদের না আনা হয়।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) আয়োজিত নির্বাহী চেয়ারম্যান জনাব লোকমান হোসেন মিয়া বলেন, কর্মানুমতি ব্যতীত বিদেশি নাগরিকদের দেশে কাজ করার ফলে, তাদের অর্জিত অর্থ হুন্ডির মাধ্যমে দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে, ফলে ক্রমান্বয়ে আমাদের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দেশের উন্নয়নের লক্ষ্যে বিদেশি নাগরিকদের নিয়ম মেনেই বাংলাদেশে কাজ করতে হবে। এই জন্য আমাদের একটি বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) নির্বাহী সদস্য মিজ মোহসিনা ইয়াসমিন বলেন, কর্মানুমতি ব্যতীত বিদেশি নাগরিকদের বাংলাদেশে অবস্থানের কারণ, অবৈধ অবস্থানের কারণে সৃষ্ট সমস্যা, ডিজিটালাইজেশন সংক্রান্ত সুপারিশ, এ-থ্রি ভিসা, জরিমানা ও শাস্তি, কর্মানুমতি নিশ্চিতকরণ, কর্মানুমতি প্রদানকারী দপ্তরসমূহের মধ্যে সমন্বয়, ভিসা অন অ্যারাইভাল, কালো তালিকাভুক্ত সংক্রান্ত সুপারিশ সমূহ তুলে ধরেন।

সভা শেষে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, ওয়ার্ক পারমিটের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও অনেক বিদেশি নাগরিক অবাধ ভাবে অন্য প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন এবং বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছেন। সেটি দূর করার জন্য, আমরা তাৎক্ষণিকভাবে তথ্য প্রাপ্তি সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে সুরক্ষা সেবা বিভাগ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বিডা, বেপজা, বেজা, হাইটেকপার্ক কর্তৃপক্ষ, এনজিও বিষয়ক ব্যুরো, এনএসআই, ইমিগ্রেশন, ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর এবং স্পেশাল ব্রাঞ্চের প্রবেশ যোগ্যা সম্পন্ন একটি কেন্দ্রীয় অনলাইন ইন্টারঅপারেবল ডাটা সেন্টার তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যাতে এক প্রতিষ্ঠানের তথ্য অন্য প্রতিষ্ঠান সহজেই অ্যাকসেস করতে পারে। এর ফলে বিদেশি নাগরিকদের যাবতীয় তথ্য সহজেই পাওয়া সম্ভব হবে। যার ফলে বাংলাদেশ অবস্থানরত বিদেশি নাগরিকদের যাবতীয় তথ্য রেগুলারাইজড হবে, সেই সাথে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে এবং অপরাধমূলক কর্মকান্ডের উপরে সহজেই নরজদারি করা যাবে।

এসময়ে তিনি আরো বলেন, কর্মানুমতিসহ ভিসা জটিলতা দূর করার জন্য, বিদেশী নাগরিকগণ বিভিন্ন দেশ থেকে ভিসার আবেদন করতে পারবেন, বিভিন্ন দেশে নিযুক্ত আমাদের রাষ্ট্রদূতগণ অনলাইনের মাধম্যে সে ভিসার আবেদন আমাদের স্পেশাল ব্রাঞ্চে প্রেরণ করবেন, এবং স্পেশাল ব্রাঞ্চ  সাত দিনের মধ্য ভেরিফিকেশন সম্পন্ন করবেন।

এইচআর