রেকর্ড উষ্ণতম বছরের হতে পারে ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৪, ০৮:২২ পিএম
রেকর্ড উষ্ণতম বছরের হতে পারে ২০২৪
ছবি: সংগৃহিত

চলতি বছর বাড়তে পারে তাপমাত্র। কারণ ইতোমধ্যে উষ্ণতম জানুয়ারি মাসে হিসাবে ২০২৪ সালে বিগত বছরের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। ধীরে ধীরে তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করছেন বিষেশজ্ঞরা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস (সিথ্রিএস) এর জানুয়ারি মাসের তথ্য মতে, চলতি বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাস ১৯৫০ সাল থেকে সিথ্রিএস-এর তাপমাত্রা রেকর্ড তালিকায় সর্বোচ্চ ছিল। ২০২০ সালের জানুয়ারি মাস ছিল সবচেয়ে উষ্ণতম। তারপর ১৮৫০ সালের পর ২০২৩ সাল পৃথিবীর উষ্ণতম বছরের রেকর্ডে স্থান পায়। সকল রেকর্ডকে পেছনে ফেলে ২০২৪ সালের জানুয়ারি উষ্ণতম মাসের রেকর্ড গড়ে। সেই সাথে বাড়তে পারে তাপমাত্রা।

এ বিষয়ে সিথ্রিএসের ডেপুটি ডিরেক্টর সামান্থা বার্গেস বলেন, শুধু রেকর্ড উষ্ণ জানুয়ারিই নয়, আমরা পুরো ১২ মাস প্রাক-শিল্প সময়ের চেয়ে এক দশমিক পাঁচ সেন্টিগ্রেড (এক দশমিক সাত ফারেনহাইট)-এর বেশি তাপমাত্রার আশঙ্কা করছি। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি বন্ধ করার একমাত্র উপায় হচ্ছে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন দ্রুত হ্রাস করা।

জানুয়ারি মাসের তাপমাত্রার উপর ভিত্তি করে অনেকে মনে করছেন, চলতি বছরজুড়ে থাকতে পারে গরম। তবে এটা স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশি থাকবে বলেও তারা মনে করছেন। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, ২০২৩ সালের তুলনায় চলতি বছরে আরও উষ্ণায়ন বাড়ার  সম্ভাবনা রয়েছে এক-তৃতীয়াংশ। এছাড়া এটি শীর্ষ পাঁচটি উষ্ণতম বছরে র‌্যাংকিংয়ে স্থান পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ৯৯ শতাংশ। গত মাসে বৈশ্বিক সমুদ্র পৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা অন্যান্য যে কোনো বছরের জানুয়ারি মাসের রেকর্ডের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে।

বৈশ্বিক তাপমাত্রাকে লক্ষ্য করে পরিবেশবিদরা বলেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা কমানোর জন্য ২০১৫ সালে প্যারিস চুক্তি নামে একটি জলবায়ু চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন বিশ্ব নেতারা। এই চুক্তির প্রধান লক্ষ্য ছিল বৈশ্বিক উষ্ণতা যেন  এক দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করতে না পারে। এর প্রতিরোধে একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছিল বিশ্ব। তবে এখনো প্যারিস চুক্তির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি। ২০২৪ সালে আরও বৃদ্ধি পাবে বলে ধারনা করা হচ্ছে।  

জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলেন, অতি খরা ও বৃষ্টি এল নিনো ও লা নিনো জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কিত। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বন্যা, খরা, প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য দায়ী এল নিনো ও লা নিনা। লা নিনো বা লা নিনা স্প্যানিশ শব্দ। স্প্যানিশ ভাষায় নিনো শব্দের অর্থ ছেলে আর নিনা শব্দের অর্থ মেয়ে। এল নিনো শব্দের অর্থ ছোট ছেলে এবং লা নিনা অর্থ ছোট মেয়ে। প্রশান্ত মহাসাগরের শীতল পানি ও উষ্ণ পানির তারতম্য বিশ্লেষণ করে পেরুর জেলেরা এল নিনো ও লা নিনোর অস্তিত্ব খুঁজে পান। ১৯৬৩ সালে বিজ্ঞানী গিলবার্ট দেখান যে এল নিনো বা লা নিনার সঙ্গে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ও বায়ুচাপের মধ্যে সম্পর্ক আছে। তখন বিজ্ঞানীরা নড়েচড়ে বসলেন এবং এ নিয়ে বিস্তর গবেষণা করেন।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইএইচএস গেস্নাবাল ইনসাইট জানিয়েছে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বছরে হাজার কোটি ডলার ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষিবিষয়ক সংস্থা এফএও জানিয়েছে, পর্যাপ্ত মজুত থাকায় খাদ্য সংকট এখনো তীব্র হয়ে উঠেনি। কিন্তু সামনের দিনগুলোয় বিশ্ব পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটবে। বাংলাদেশে আমন চাষ সম্পূর্ণ বৃষ্টির ওপর নির্ভরশীল। এখন কোনো কোনো বছর ভরা বর্ষায়ও বৃষ্টির দেখা মেলে না। ফেটে চৌচির হয় ফসলের মাঠ। বাংলাদেশে আমন আবাদের ভরা মৌসুমে নদ-নদীতে পানি পাওয়া যায় না। উন্মুক্ত জলাশয়, পুকুর, খাল-বিল শুকিয়ে চৌচির হয়ে যায়।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, অত্যন্ত শক্তিশালী এল নিনোর প্রভাবে বিশ্বের অনেক অঞ্চলের মানুষ ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার দুর্ভোগে পড়ে। প্রচন্ড খরায় ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। দাবদাহে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। অর্থনৈতিক সংকটের পূর্বাভাস দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এল নিনোর প্রভাবে বিশ্বের দ্বাদশ দীর্ঘ মেকং নদীর পানির স্তর অস্বাভাবিকভাবে নিচে নেমে গেছে। মেকং নদীবিধৌত বিশ্বের শীর্ষ চাল রপ্তানিকারক দেশ ভিয়েতনামে খরা পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। প্রতিবেশী থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়াও সংকটের মধ্যে পড়েছে। পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে মালয়েশিয়ায়ও।

এআরএস