দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন

সংস্কারের কণ্টকাকীর্ণ পথে বাংলাদেশ: নির্বাচন সামনে, প্রশ্ন বহুবিধ

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: মে ১৬, ২০২৫, ১০:৩৫ পিএম
সংস্কারের কণ্টকাকীর্ণ পথে বাংলাদেশ: নির্বাচন সামনে, প্রশ্ন বহুবিধ

বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ঘোষণানুযায়ী আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তবে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও কাঙ্ক্ষিত সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জে মুখোমুখি এই সরকার।

দ্য ইকোনমিস্ট-এর শুক্রবার প্রকাশিত এক বিশ্লেষণে বলা হয়, ২০২৪ সালের আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেয়। সরকার গঠনের পর প্রায় নয় মাস পার হলেও, প্রতিশ্রুত রাজনৈতিক ও বিচারিক সংস্কারে এখনও দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি।

ড. ইউনূস এক বক্তব্যে বলেন, “১৬ বছরের ভূমিকম্পের মতো রাজনৈতিক আতঙ্কের পর বাংলাদেশের সামনে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। আমরা ধ্বংসস্তূপের মধ্যে থেকে পুনর্গঠনের চেষ্টা করছি। জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে। তবে বাস্তবায়ন সহজ নয়।”

তবে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিস্তৃত অভিযোগসহ ১৬ বিলিয়ন ডলার অর্থপাচারের শ্বেতপত্র প্রকাশ এবং শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হত্যা ও গণহত্যার মামলাগুলো পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে। যদিও হাসিনা নিজে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

সরকার ইতোমধ্যে নির্বাচন, বিচারব্যবস্থা ও সংবিধান সংস্কারে একাধিক কমিশন গঠন করেছে। এদের সুপারিশের ভিত্তিতে ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’ কাজ করছে একটি ‘চার্টার অব কনসেনসাস’ তৈরিতে। জুলাইয়ের মধ্যে এটি প্রকাশের কথা রয়েছে। কমিশন ইতোমধ্যে ১৬৬টি সুপারিশ ও ৩৫টি রাজনৈতিক দলের মতামত সংগ্রহ করেছে।

তবে ঐকমত্যে পৌঁছানো সহজ হচ্ছে না। বিশেষ করে নারী অধিকার কমিশনের ইসলামি উত্তরাধিকার আইনে সংশোধনী প্রস্তাবে কট্টরপন্থি গোষ্ঠীগুলো তীব্র বিরোধিতা করছে। অন্যদিকে, শিক্ষা ও বস্ত্রখাতে আলাদা কমিশনের অনুপস্থিতি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

অন্তর্বর্তী সরকার মূল্যস্ফীতি ও ব্যাংক খাতে কিছুটা স্থিতিশীলতা আনলেও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দুর্বল রয়ে গেছে। সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, ৬০ শতাংশের বেশি নাগরিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি দেখছেন না। রাজপথে প্রতিদিনই চলছে বিক্ষোভ।

এরমধ্যে সরকার বিচারের আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সকল কার্যক্রম স্থগিত করে এবং দলটির নিবন্ধন বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়। এতে দলটি আর কোনো নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। তবু রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আওয়ামী লীগের সমর্থন এখনও সমাজে দৃঢ়ভাবে টিকে আছে এবং জনসমর্থন হারালে অন্তর্বর্তী সরকার ভবিষ্যতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।

এই অবস্থায় সরকারপন্থি ও বিরোধী—দু’পক্ষ থেকেই পারস্পরিক অভিযোগ বাড়ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের দাবি, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ অস্থিতিশীলতা তৈরির ষড়যন্ত্র করছে।

সব মিলিয়ে সামনে নির্বাচন থাকলেও, একটি টেকসই গণতান্ত্রিক কাঠামো গড়তে অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে কঠিন ও অনিশ্চিত পথই অপেক্ষা করছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

ইএইচ