রাজনৈতিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের ওপর জোর সেনাপ্রধানের

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: মে ২১, ২০২৫, ১১:৫১ পিএম
রাজনৈতিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের ওপর জোর সেনাপ্রধানের
সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। ছবি: আইএসপিআর

একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে শিগগিরই রাজনৈতিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি বলেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত।

বুধবার সকালে ঢাকা সেনানিবাসে আয়োজিত সেনা কর্মকর্তাদের একটি অভ্যন্তরীণ সভায় (অফিসার্স অ্যাড্রেস) তিনি এই দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য প্রদান করেন। সভায় ঢাকার বাইরের বিভিন্ন ইউনিটের কর্মকর্তারাও ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন। 

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। তবে রাতে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বক্তব্য দেয়নি।

সেনাপ্রধান সভায় বলেন, "রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের জন্য ক্ষতিকর এমন কোনো কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কখনো যুক্ত হবে না এবং কাউকে তা করতেও দেওয়া হবে না।" 

তিনি সেনাসদস্যদের পেশাদারিত্ব, শৃঙ্খলা ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখার আহ্বান জানান। আসন্ন নির্বাচনে সেনাবাহিনীর দায়িত্ব পালনে সততা ও নিষ্ঠার ওপরও তিনি জোর দেন।

মানবিক করিডোর ইস্যুতে সেনাপ্রধান স্পষ্টভাবে বলেন, “রাখাইন রাজ্যের সঙ্গে করিডোর স্থাপনের মতো সিদ্ধান্ত একটি নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমেই আসতে হবে। এটি হতে হবে বৈধ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এবং জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে।”

তিনি জানান, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনও করিডোর ইস্যুর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এবং এ বিষয়ে অস্থায়ী সরকার কোনো একক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।

জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, “গত আগস্ট থেকে সেনাবাহিনীর ধারাবাহিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও কিছু মহল আমাকে এবং বাহিনীকে অন্যায্যভাবে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করছে।”

তিনি আরও জানান, বাংলাদেশে জাতিসংঘের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের বিষয়ে সেনাবাহিনীর সঙ্গে কোনো আলোচনা করা হয়নি কিংবা মতামত নেওয়া হয়নি।

সভায় তিনি নির্যাতিতদের অধিকারের পক্ষে সেনাবাহিনীর অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন এবং অফিসারদের উদ্দেশে বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, মব ভায়োলেন্স রোধ এবং ঈদে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে।

বন্দর ইস্যু ও স্থানীয় উন্নয়ন বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে সেনাপ্রধান বলেন, “এ ধরনের সিদ্ধান্ত স্থানীয় জনগণ ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের মতামতের ভিত্তিতে নেওয়া উচিত। এটি রাজনৈতিক সরকারের কাজ।”

সংস্কার ইস্যুতে সেনাপ্রধান বলেন, “কী সংস্কার হচ্ছে বা কিভাবে হচ্ছে— সে বিষয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই।”

সভায় এক ঘণ্টাব্যাপী প্রশ্নোত্তর পর্বে বরখাস্ত সেনাসদস্যদের বিষয়ে আইএসপিআরের মাধ্যমে তথ্য প্রকাশের পরামর্শও উঠে আসে। সেনাপ্রধান এ সময় সব ধরনের প্রশ্নের উত্তর দেন এবং দায়িত্ব পালনে সেনাবাহিনীর সদাসচেতন ভূমিকার কথা তুলে ধরেন।

ইএইচ