দুর্নীতি প্রতিকারে শাসনব্যবস্থায় জবাবদিহিতা জরুরি

মো. আতিকুর রহমান প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩, ২০২২, ১০:১০ এএম
দুর্নীতি প্রতিকারে শাসনব্যবস্থায়  জবাবদিহিতা জরুরি

এদেশের সাধারণ মানুষ দুর্নীতিবাজ নয়। দুর্নীতি তাদেরই হাতে, যাদের আছে কোন না কোনোভাবে ক্ষমতা। রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা। এই ক্ষমতা যাদের হাতে আছে তারাই প্রকৃতপক্ষে দুর্নীতিবাজ হতে পারে। মূলত: যার যত বড় ক্ষমতা, সে ততবড় দুর্নীতিবাজ।

সম্প্রতিকালে দেশে-বিদেশে এই ‘দুর্নীতি’ একটি বহুল আলোচিত শব্দ। বিশেষ করে নিজ স্বার্থে ক্ষমতার অপব্যবহার, ঘুষ, অর্থ আত্মসাৎ, ভীতি প্রদর্শন করে অর্থ আদায়, প্রতরণা, প্রভাববিস্তার, স্বজনপ্রীতি, সম্পদের অপব্যবহার, সরকারি ক্রয়-বিক্রয়, দায়িত্ব পালনে অবহেলাকে মূলত: আমরা দুর্নীতি বলে থাকি।

এছাড়া কখনো দারিদ্র্যের কারণে, কখনো লোভের বশবর্তী হয়ে, আবার কখনো দুর্নীতি করার সুযোগ আছে কিন্তু শাস্তির সম্ভাবনা নেই, এইরূপ কারণেই মূলত মানুষ দুর্নীতিগ্রস্ত হচ্ছে। যা কখনই কাম্য নয়।

বর্তমানে এদেশে শাসনব্যবস্থায়  জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে না পারলে, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে দুর্নীতিমাত্রা আরো বহুগুন বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করি। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে স্বচ্ছ জবাবদিহিতামূলক গণতান্ত্রিক চর্চা নেই বলে রাজনীতি এখন লাভজনক ইজারা নীতিতে পরিণত হয়েছে। যার লাভ ক্ষতির কোনো সীমা পরিসীমা নেই। শুধু মার-কাটো-খাও। দল কর টাকা কামাও।

জবাবদিহিতাহীন রাজনীতির কারণে রাজনীতি এখন টাকা বানানোর মেশিনে পরিণত হয়েছে। ফলে সমাজে রাজনীতিবিদদের ক্ষমতার অপব্যবহার অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে। দেশে রাজনীতির নামে নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে টেন্ডার, চাঁদাবাজী, নিয়োগবাণিজ্যসহ বৈধ ও অবৈধ নানা ধরনের ব্যবসা। যা শুধু দেশে নয়, দেশের বাহিরেও বিস্তৃত। রাতারাতি কালো টাকার মালিক হতে অনেকে রাজনীতিকে ব্যবসা হিসেবে গ্রহণ করেছে।

কেননা অন্য ব্যবসায় ঝুঁকি থাকলেও এই ব্যবসায় সম্মানসহ ঝুঁকি অনেকাংশে কম। আর ক্ষমতাশীল দলের নেতা-কর্মী হলে তো কথাই নেই। ফলে রাজনীতিতে ব্যবসায়িকদের উপস্থিতি দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যদিও মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে সংসদে এ সংখ্যা ছিল ১৮ শতাংশ তা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৮ শতাংশে।

রাজনীতি দলগুলোর মধ্যে স্বচ্ছ জবাবদিহিতামূলক গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে না পারলে দলের জন্যতো বটেই দেশের জন্যে তা ভয়াবহ  পরিণতির কারণ। যদিও এখন নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতি, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের অসততার কারণেও প্রতিটি সেক্টরে এখনও কালো বিড়ালের অবির্ভাব ঘটছে এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে এই দুর্নীতির মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

দেশে সকলপ্রকার উন্নয়ণমূলক কর্মকান্ড বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। দেশের সার্বিক কল্যাণে সরকারের সদিচ্ছা থাকলেও সরকারের আশেপাশে বিরাজমান সুবিধাভোগীরা সরকারকে নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। ফলে জনগণের কষ্টার্জিত অর্থের রাজস্ব একপ্রকার হরিলুটে পরিণত হচ্ছে। তা রুখতে দেশে স্বচ্ছ জবাবদিহিতামূলক গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে সরকারকেই মূখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে।

রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, আমলা, সুশীলসমাজ, সাংবাদিক, কলামিস্টসহ সচেতন যুবসমাজ তথা সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। জাতীয় স্বার্থ ও জনগণের প্রত্যাশাকে বাস্তবে রূপ দিতে কর্মক্ষেত্রে দুর্নীতিকে ‘না’ বলার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।

তথ্য মতে, ২০১৮ সালে দুর্নীতিগ্রস্ত ১৮০টি দেশের মধ্যে ঊর্ধ্বক্রম অনুযায়ী বাংলাশের অবস্থান ১৪৯তম। অথচ ২০১৭ সালে বাংলাদেশ এই হিসেবে ছিল ১৪৩তম। অর্থাৎ এখানেও ৬ ধাপ অবনতি হয়েছে বাংলাদেশের।১৮০টি দেশের উপর টিআই এই জরিপ চালিয়েছে। জরিপে ০ থেকে ১০০ নম্বরের স্কেলে দেশগুলোকে নম্বর দেয়া হয়েছে। সবচেয়ে কম নম্বর (১০ স্কোর) পেয়ে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হয়েছে সোমালিয়া। তার পরেই রয়েছে (১৩ স্কোর) সিরিয়া ও দক্ষিণ সুদান। তৃতীয় অবস্থানে (১৪ স্কোর) রয়েছে ইয়েমেন ও উত্তর কোরিয়া।

১৮০টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৯ নম্বরে। এর আগে ২০১৭ সালে বাংলাদেশ ছিল ১৪৩ নম্বর অবস্থানে। আর সবচেয়ে বেশি (৮৮ স্কোর) পেয়ে সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ বিবেচিত হয়েছে ডেনমার্ক। কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে এর পরেই রয়েছে (৮৭ স্কোর) নিউজিলন্যান্ড। তৃতীয় অবস্থানে (৮৫ স্কোর) রয়েছে ফিনল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, সুইডেন ও সুজারল্যান্ড। প্রসঙ্গত দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ আফগানিস্তান (১৬ স্কোর)। আর সবচেয়ে কম দুর্নীতি ভুটানে (৬৮)।

এই ভয়াবহ অবস্থা মুল কারণ হচ্ছে বর্তমানে বাংলাদেশে যেসব উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে বা অভিযুক্ত অথবা দুর্নীতি করেছেন, খুব কম ক্ষেত্রেই তারা বিচারের মুখোমুখি হয়েছে, যা দুঃখজনক।

যদিও দুর্নীতিতে আমাদের অবস্থান বৈশ্বিক অবস্থানের চেয়ে অনেক নিচে। তাই বলে আমাদের আত্মতুষ্টির কোনো কারণ নেই। কেননা আমাদের দেশের অপার সম্ভাবনার প্রত্যাশার বিষয়টি শুধুমাত্র দুর্নীতির কারণে আটকে আছে, যা কাম্য নয়। দ্রুত এই অবস্থার অবসান  হওয়াটা জরুরী।

বর্তমান বাস্তবতায় বলতে হয়, বাংলাদেশে দুর্নীতি বেড়ে যাওয়ার প্রধান কারণ হলো রাজনৈতিক দলগুলির জনগণের প্রতি রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও ঘোষণা বাস্তবায়নে অধিক উদাসিনতা। বিপরিতে উচ্চ পর্যায়ের অপরাধীদের যথাযথ বিচারের আওতায় না আনা ও শাস্তি না হওয়া । দেশে সরকারী কর্মকর্তাদের ভয়াবহ দুর্নীতি, ব্যাংক খাতে অবারিত দুর্নীতি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা, জালিয়াতি, ভূমি-নদী-জলাশয় দখল, সরকারি ক্রয় খাতে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণের কারণে দুর্নীতি এক ধরনের ছাড় পেয়ে যাচ্ছে, যা কাম্য নয় ।

কারণ রাজনৈতিক ও ব্যক্তিপর্যায়ের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের স্বার্থের দ্বন্দ্ব প্রকট পরিলক্ষিত হচ্ছে। আমাদের প্রশাসনে, সরকারি ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ও ব্যক্তি অবস্থানকে ব্যক্তিস্বার্থের জন্য প্রভাব খাটিয়ে দুর্নীতির সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে মত প্রকাশের স্বাধীনতাও প্রায় ক্ষুণ্ন যার  অবসান হওয়া জরুরী।

যদিও বলতে গেলে বর্তমানে দুর্নীতিগ্রস্ত বেশ কয়েকটি সেক্টরের মধ্যে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়েছে ব্যাংকিং সেক্টরে  যা সংবাদপত্রে দৃশ্যমান। আমাদের ব্যাংকিং ও ফাইনান্স সেক্টরে দুর্নীতি একেবারে স্পষ্ট। এখানে ব্যাংক জালিয়াতি, ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করা, রাজনৈতিক প্রভাব, সারাদেশে বিভিন্নভাবে ভূমি সেক্টরে দুর্নীতি, রাষ্ট্রীয় ক্রয়খাতে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ ও ক্রমবর্ধমানহারে বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে অর্থ পাচারের দৃষ্টান্ত খুবই খারাপ।

আজকের গণমাধ্যমেও অর্থপাচারের দৃষ্টান্তের খবর অত্যন্ত বিব্রতকর ও নেতিবাচক। অবৈধভাবে অর্থ পাচারকারীদের চিহ্নিত করে টাকা ফেরত আনাসহ তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে সচেষ্ট হতে হবে। যা দেশের স্বার্থে জরুরী। যদিও বর্তমান সরকার দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকায় অনেককেই গ্রেপ্তারও করেছে  যা ইতিবাচক বলে মনে করি। এই ধারা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে এমনটিই আমাদের প্রত্যাশা।

এক্ষেত্রে আমরা মনে করি যতক্ষণ পর্যন্ত আইনের সঠিক প্রয়োগ না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সুশাসন নিশ্চিত হবে না, দুর্নীতি প্রতিহত করা যাবে না। গত মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। এরই মধ্যে আমরা সাফল্য পেতে শুরু করেছি। জনগণের প্রত্যাশা, এবার তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করবেন এমনটি প্রত্যাশা। এবারের জাতীয় নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতির ব্যাপারে জিরো টলারেন্স এর কথা বলেছেন। বলেছেন দুর্নীতিগ্রস্ত কারো এদেশে ঠাঁই হবে না।

তার ওই ঘোষণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করি। এখন বাস্তবায়নের পালা। আমার বিশ্বাস করি, দুর্নীতি প্রতিহত ও সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী যে পদক্ষেপই নেবেন, জনগণ তাতে সার্বিক সহায়তা দেবে।

এক্ষেত্রে আমাদের নিজ নিজ জায়গা থেকে দুর্নীতি প্রতিহত করা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করা উচিত। দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ব্যাপারে কোনো ধরনের শৈথিল্য দেখানো যাবে না বরং প্রতিহত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কারো কোনো তদবির মানা যাবে না। নিজ নিজ জায়গা থেকে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় না দিয়ে বরং কঠোর হতে হবে তাহলেই অধস্তনরা দুর্নীতি করার সাহস পাবে না। তাই আগে নিজেকেই ঠিক হতে হবে।

এক্ষেত্রে আমি যদি অনিয়ম না করি, তাহলে অফিসের অন্যরাও অন্যায়-অনিয়ম করার সাহস পাবে না। এভাবে একে একে বদলাবে সবাই। প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদের জবাবদিহির ব্যাপারে অবহেলা করা যাবে না। কাউকে বড় কোনো কাজের দায়িত্ব দেয়ার আগে তার যোগ্যতা, দক্ষতা, প্রজ্ঞা, সততা, বিচক্ষণতা, নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষমতা, সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সক্ষমতা ইত্যাদি বিবেচনায় নিতে হবে। অনেক সময় অযোগ্য ব্যক্তি গুরুত্বপূর্ণ পদে বসে। সেসব জায়গায় ভালো কাজ হয় না। তার দুর্বলতার সুবাদে দুর্নীতির সুযোগ তৈরি হয়।

এ বিষয়ে নজর দিতে হবে। বাস্তবায়নে প্রত্যেক সেক্টরে জবাবদিহিতা বাধ্যতামূলক করতে হবে।  দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের উপযুক্ত শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে। দুর্নীতি রোধ ও সুশাসনের জন্য যত রকম পন্থা আছে সেটা প্রয়োগ করতে হবে। বর্তমান সরকার শুদ্ধাচারের বিষয়ে অনেক গুরুত্ব দিচ্ছে তা দৃশ্যমান বাস্তবায়ন করতে হবে। এক্ষেত্রে কর্মীরা সময়মতো অফিস করছে কিনা ও দায়িত্ব ঠিকঠাক পালন করছে কিনা বা কোন অনৈতিক কাজে যুক্ত কি না সেই বিষয়ে নজর দিতে হবে।

মুলতঃ  দেশ ও জনগণের কল্যাণে সকলকে আত্মনিয়োগ করতে হবে। আমাদেরকে নৈতিক শিক্ষার বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। প্রতিটি বিদ্যাপীঠে নৈতিকতার শিক্ষা দিতে হবে। পরীক্ষায় নকল করা যে অন্যায়, তা স্কুল থেকেই শেখাতে হবে। কোমলমতি ছেলেমেয়েদের শ্রেণীকক্ষেই  নীতি-নৈতিকতার শিক্ষা দিতে হবে, সেটা তারা ধারণ করবে।

যদিও দুঃখ হয় বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কতটুকু সততা, মূল্যবোধ শেখানো হচ্ছে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। এক্ষেত্রে কোর্স কারিকুলামে ন্যায়, নীতি, নিষ্ঠা, সততা, আদব-কায়দা ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। যতদিন পর্যন্ত না এগুলো আমরা শেখাতে পারব, ততদিন পর্যন্ত সমাজ উন্নত হবে না। সংশ্লিষ্টদের এ নিয়ে ভাবা দরকার।

পরিশেষে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের প্রত্যাশা, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা। পাশাপাশি দুর্নীতি ঠেকাতে যুগোপযোগী আইন প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ এবং সেই আইনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ ও বাস্তবতা হওয়াটা জরুরি। যাতে আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে দুর্নীতিবাজরা বেরিয়ে যেতে না পারে। আমরা যদি দুর্নীতিবাজদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে পারি  তাহলে এই ভয় থেকে  মানুষের ধীরে ধীরে দুর্নীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে।

এসব বিষয় নিয়ে সরকারকে এখনই চিন্তাভাবনা করতে হবে। বিশেষ করে নৈতিকতামূলক শিক্ষা এবং আইনের সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে দুর্নীতি রোধে উদ্যোগী হতে হবে। এক্ষেত্রে আমরা মনে করি, দেশের জাতীয় উন্নয়নের স্বার্থে সরকার তথা এই দেশবাসীকে দুর্নীতি রোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে হবে। সচেতন মানুষ তথা যুব সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। সকলকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে শপথ নিতে হবে আমি নিজে দুর্নীতির কাজ করবো না, অন্য কেউকে তা করতে দেব না।

এই শপথ কার্যকর করার পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণবিহীন স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশনকে স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষমতা অর্পণ, প্রশাসনিক সংস্কার, দলীয় নিয়োগ বন্ধকরণ, প্রতিষ্ঠানের ভিতরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ, ন্যায়পাল কার্যকরকরণ, স্বাধীন আইন ও বিচার বিভাগের উপর থেকে সকল প্রকার প্রভাব দূরীকরণ, বিচারহীনতার সংস্কৃতি রোধ করে দ্রুত বিচার কার্য্য সুসম্পন্ন ও শাস্তির বিধান নিশ্চিতকরণ, সুশীল সমাজকে কার্যকরকরণ, দলীয় সুযোগসন্ধানীদের অপতৎপরতা রোধ, রাজনীতি নামক ইজারানীতি চিরতরে বন্ধকরণ, কেন্দ্রীয় ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ ও স্থানীয় সরকারকে ক্ষমতায়ন, প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালকে শক্তিশালীকরণ, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ, গণমাধ্যমগুলোকে স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশের ক্ষমতা অর্পণ এবং দলীয় প্রভাবমুক্তকরণ, রাজনৈতিক নেতাদের কথায় না কাজে মানসিকতার পরিবর্তন করে নির্বাচনের প্রাক্কালে জনগণের সামনে দেওয়া ওয়াদা পালনসহ স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠান থেকে দুর্নীতিরোধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা জরুরি।

যদি সকলে মিলে এই কাজগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় তবে দুর্নীতি কিছুটা হলেও রোধকরা সম্ভব হবে বলে মনে করি। যদিও এই কথাটি অধিক সত্য, দুর্নীতি থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজন সরকারের পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতাদের সদিচ্ছা, সততা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা । দেশের প্রতিটি কর্মকর্তা-কর্মচারী যদি সততা ও নিষ্ঠার সাথে নিজ নিজ দায়িত্বপালন করেন সেইক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি প্রতিটি কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে কর্মক্ষেত্রে যেসব বৈষম্য রয়েছে তা যৌক্তিক সমাধান করতে হবে। ধনী গরিবের মধ্যে বৈষম্য রোধ করা সম্ভব হলে দুর্নীতি ও সামাজিক অবক্ষয়ের এই ভয়াবহতা থেকে দেশবাসী কিছুটা হলেও রক্ষা পাবে।

এর ধারাবাহিকতায় হয়তো বা দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার পথ প্রসস্ত ও সুগম হতে পারে। এই কাজগুলো বাস্তবায়ন করতে পারলে জাতীয় উন্নয়ন ও জনগণের স্বার্থ হতে পারে ত্বরান্বিত। কেবল আইন বা চাপ প্রয়োগ করে দেশ থেকে দুর্নীতি ও অসমাজিক কার্যকলাপ রোধকরা সম্ভব হবে নয়, যদি না জনগণ নিজ নিজ জায়গা থেকে ইহা প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারেন। সরকারকে উক্ত চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে দুর্নীতিরোধে শক্ত অবস্থান নিতে হবে এবং দেশে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। একটি দুর্নীতিমুক্ত সুন্দর সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাই হউক সরকার তথা সকলের ব্রত।

লেখক- কলামিষ্ট ও সাবেক জনসংযোগ কর্মকর্তা, বিইউএফটি।