নির্বাচনকালীন সরকার ‘জনগনকে বিভ্রান্ত করার জ্বাল’ :মান্না

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: মে ১৭, ২০২৩, ০৪:২৫ পিএম
নির্বাচনকালীন সরকার ‘জনগনকে বিভ্রান্ত করার জ্বাল’ :মান্না

রাজনৈতিক মিত্রদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনকালীন সরকারের ইঙ্গিত ‘জনগনকে বিভ্রান্ত করার জ্বাল’ বলে মন্তব্য করেছেন মাহমুদুর রহমান মান্না। 

বুধবার দুপুরে গণতন্ত্র মঞ্চের এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি এই মন্তব্য করেন। 

তিনি বলেন, উনি (শেখ হাসিনা) কোনো অন্তবর্তিকালীন সরকারের প্রস্তাব দেননি।উনি নিজে ক্ষমতায় থাকবেন…. থেকে প্রথম দিকে বলেছিলেন, তার সেক্রেটারিসহ অন্যান্যদের নিয়ে মন্ত্রণালয়ে জায়গায় দেবেন। পরে যখন বিএনপি মূল অপজিশন বললো যে, আমরা এটাতে যাবোই না। তখন বললো যে, ওদের কেনো নেবো?..... তখন তারা (সরকার) বলছে, ওদের (বিএনপি) নেবো না, যারা সংসদে আছে তাদেরকে দিয়ে..। সংসদে যারা আছে তারা তো তাদের সাথে আছেই। তারা কি করতে সেটা তারা জানেন।  

আমাদের বক্তব্য যে, এই সরকারকেই যেতে হবে। তারপরে নতুন করে একটা অন্তর্বতী সরকারের প্রশ্ন। বাকি যেগুলো ওরা বলেছেন ওইগুলোতে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য, জ্বাল বিছানোর জন্য বলছেন, ওইগুলোতে আমরা খুব কেয়ার করছি না।

প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রী তার নেতৃত্বে সংসদে থাকা তার রাজনৈতিক মিত্রদের নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের যে ইঙ্গিত দিয়েছেন তা কোনোভাবেই গ্রহনযোগ্য নয়। এই ধরনের সরকার বর্তমান কর্তৃত্ববাদী নিপীড়নমূলক সরকারের সম্প্রসারণ।

২০১৪ ও ২০১৮ সালের তামাশাপূর্ণ জ্বালিয়াতির নির্বাচন প্রমাণ করেছে যে, আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ন্যুনতম কোনো অবকাশ নেই। সেই কারণে আমরা গণতন্ত্র মঞ্চ নির্বাচনের পূর্বে বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, জাতীয় সংসদ বিলুপ্তি ও অন্তর্বতীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা এবং সর্বোপরি সরকার ও শাসন্যবস্থা পরিবর্তনের সুনির্দিষ্ট ১৪ দফার ভিত্তিতে যুগপত ধারায় বিএনপিসহ বিরোধী দলসমূহের সাথে গণসংগ্রাম জোরদার ও বিস্তৃত করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখছি।

ঢাকায় অবস্থানরত ছয় দেশের কুটনীতিকদের বাড়তি নিরাপত্তা প্রত্যাহারের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই ঘটনা কুটনৈতিক সম্পর্ক ও বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে অবিশ্বাস ও অস্থিরতা যে তৈরি করবে তা অনুমান করা কঠিন নয়। সরকারের এসব আচরণ থেকে বুঝা যায় যে, বিশাল বহর নিয়ে তিন দেশে প্রধানমন্ত্রীর ১৫ দিনের সফর দেশও সরকারের জন্য তেমন কিছু অর্জিত হয়নি, অর্থাত ক্ষমতায় থেকে আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে কথিত এসব উন্নয়ন অংশীদারদেরকে তিনি ম্যানেজ করতে পারেননি।  

গত ১৫ মে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন ও বিবিসিতে দেয়া তার সাক্ষাতকার এবং সরকারের পদক্ষেপই তার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। এসব ততপরতায় সরকারের রাগ ও ক্ষোভেরও বহির্প্রকাশ ঘটেছে। হতাশা ও ক্ষোভ থেকে নেয়া এসব বক্তব্য ও পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক কুটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নিসন্দেহে বড় ঝুঁকি সৃষ্টি করঠে যার সম্ভাব্য মাশুল দিতে হবে দেশ ও দেশের জনগনকে।

বেলা ১২ টায় তোপখানা রোডে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির কার্যালয়ে সংহতি মিলনায়তনে এই সংবাদ সম্মেলন থেকে ঢাকা থেকে দিনাজপুর অভিমুখে রোডমার্চ ও পদযাত্রার পাঁচদিন কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়। মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আমরা যে কর্মসূচি দিয়েছি এটা সরকার পতনের চূড়ান্ত কর্মসূচি নয়। এটা হচ্ছে সরকার পতনের লক্ষ্যে ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ। চূড়ান্ত যে কর্মসূচি সেটা চূড়ান্ত সময় আসবে। 

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, আমরা জনগনকে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করার নানা কর্মসূচি নিয়ে এগুচ্ছি। এই সরকার পতনের লক্ষ্যে জনগনের যে একটা অভ্যুত্থান সেটা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ঘটবে।দিন ক্ষন ঠিক-ঠাক করে আন্দোলনের বিষয়টি আমরা এ্ভাবে বিশ্বাস করি না। 

আমরা মনে করি, আন্দোলনটা জনগনের ভেতর থেকে তৈরি হচ্ছে এবং সেই আন্দোলন তার সময় মতো তার ভূমিকা পালন করবে। সরকার কিন্তু আন্দোলনের প্রস্তুতিতেই ইতিমধ্যে ভয় পেয়ে গেছে। তার মধ্যে ইতিমধ্যে প্রস্তুাব দিয়েছে যে নির্বাচনকালীন সরকারে বিএনপিকে তারা নিতে চায়। 

তার মানে হচ্ছে যে, তারা আগে-ভাগে একটা আপোষের দিকে এগুচ্ছে। আন্দোলনের গতি যত বাড়বে আমরা দেখবো যে, সুর বিভিন্নভাবে বদলাচ্ছে। এসব করে কোনো লাভ হবে না। তাদেরকে ক্ষমতা ছাড়তে হবে, জনগন আর তাদেরকে ওই ২০১৪ ও ২০১৮ এর মতো ভোট করতে দেবে না। 

তিনি বলেন, সরকার সম্ভাব্য গণঅভ্যুত্থানে তার পতন দেখছে এখন আগে-ভাগেই এই পতন জনগন করে নাই, এই পতন আমেরিকা করেছে, ওমুক করেছে, তমুক করেছে- এটাই এখন সরকারের প্রধান যাকে বলে রাজনৈতিক প্রচারণা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিদেশী দেশগুলোর ওপর দায় দিয়ে একাত্তর সালের সেন্টিমেন্টকে আবারো মানুষের মধ্যে জাগিয়ে তুলে নিজেদের অপশাসনটাকে জায়েজ করতে চাচ্ছে। ভোটের অধিকারকে কেড়ে নেয়া জায়েজ করতে চাচ্ছে সেটা আর জনগন ভুলবে না।

সংবাদ সম্মেলনে সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম, ইমরান ইমন, সাকী আনোয়ার রাষ্ট্র জেএসডির শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, মোশাররফ হোসেন মন্টু, নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার, ভাসানী অনুসারী পরিষদের হাবিরুর রহমান রিজু, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির বহ্নি শিখা জামালী, আকবর খান প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।

এইচআর