আওয়ামী লীগ সরকার কোনোদিক দিয়ে সফল হতে পারছে না। দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ছেই। আজকে প্রধামন্ত্রীকে বলতে হয় চাঁদাবাজি বন্ধের জন্য। এটা ভাবতে পারেন! আসলে কোনো কিছুর ওপরই তাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
বলেন, নির্বাচনেও তারা দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে ডামি প্রার্থী দিয়ে গন্ডগোল লাগিয়েছে। আসলে পতনকালে এমন ভুল হয়। এই সরকার সেই ভুলের মধ্যে আছে। তাদেরকে খেসারত দিতে হবে।
মঙ্গলবার বিকলে রাজধানীতে আয়োজিত এক সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমরা জনগণের সঙ্গে আছি এবং জনগণও আমাদের সঙ্গে আছে। আমাদের বিজয় অবশ্যম্ভাবী। তবে কিছু সময়ের প্রশ্ন থাকে। তাদের পতন হতেই হবে। আধুনিক জামানায় ১৫ বছর সময় লাগবে না। খুব দ্রুত আমরা ফ্যাসিস্ট সরকারের হাত থেকে মুক্ত হবো। যারা কারামুক্ত হয়েছেন তারা রক্তাক্ত বাঘ। তাদের পায়েতো শিকল পড়ানো যাবে না। আন্দোলনও বন্ধ হবে না।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমাদের আন্দোলন চলছে এবং চলবে। সম্প্রতি নির্বাচনের নামে যে খেলা হলো তা আমরা কেউই চাইনি। দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ এই খেলায় যুক্ত হয়নি। যারা ক্ষমতায় আছে বলে দাবি করে তারা জোর করে ক্ষমতায় আছে। তারা জনগণের সরকার নন। নিজেদের স্বার্থ বিকিয়ে অন্যের সাহায্যে ক্ষমতায় আছে। যেসব দেশের সহায়তায় ক্ষমতায় আছে তাদের প্রত্যেককে অবৈধ সুবিধা দিয়েছে। জনগণ এটা মানবে না। আন্দোলন আরও বেগবান এবং সফল হবে ইনশাআল্লাহ।
সম্প্রতি ১২ দলীয় জোটের সমন্বায়ক ও বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, জাতীয় পার্টির (জাফর) মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকন ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি জাকির হোসেনের কারামুক্তি উপলক্ষ্যে ‘কারামুক্তি আন্দোলনের শক্তি ও গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে ১২ দলীয় জোট।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দারের সভাপতিত্বে ও জাগপার সিনিয়র সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধানের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন- নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বায়ক জোনায়েদ সাকি, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরি, ন্যাশনাল পিপসল পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, গণঅধিকার পরিষদের আরেক অংশের আহ্বায়ক কর্নেল (অব.) মিয়া মসিউজ্জামান, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু, ১২ দলের নেতাদের মধ্যে ইসলামি ঐক্য জোটের শওকত আমিন, কল্যাণ পার্টির শামসুদ্দিন পারভেজ, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ফারুক রহমান, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ চেয়ারম্যান মনসুরুল হাসান রায়পুরী, বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিমসহ কারামুক্ত নেতারা।
সভাপতির বক্তব্যে মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচনের নামে প্রহসন করেছে। জনগণ এটাকে মানেনি। আমাদের সংগ্রাম চলছে এবং চলবে। এই সরকারের বিজয় সুনিশ্চিত ইনশাআল্লাহ।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, সরকার যা ইচ্ছা তাই করতে পারে না। ৭ জানুয়ারি দেশে কোনো ভোট হয়নি। সেদিন কোনো ভোট হয়নি। ওই ভোট আওয়ামী লীগকে ভেঙ্গে দিয়েছেন। এমনকি সেদিন দেশবাসী প্রমাণ করেছে যে, তারা নিরঙ্কুশভাবে এই সরকারকে ঘৃণা করে। আর সরকার বলছে তারা নাকি বিএনপিকে নিয়ে নয়, দ্রব্যমূল্য নিয়ে চিন্তিত। কিন্তু সেটাতেও কিছু করতে পারেনি। কারণ আওয়ামী লীগে চাপার জোর বেশি। কদিন পরই রোজা। সেসময় ৪টি অতি নিত্যপণ্যের দামও কমেনি। আজকে সরকার ভয়ে আছে। তাদেরকে কেউ সমর্থন দেয়নি। তবে আমাদের লড়াই চালু আছে। আমাদের ডাকে লাখো জনতা রাস্তায় নেমেছে। কারণ আমরা জনগণের ভাত ও ভোটের অধিকার আদায়ে লড়াই করছি।
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, আজকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পর জাতিকে বিভক্ত করতে ষড়যন্ত্র করছে। সরকারের উপরে হাসি কিন্তু ভেতরে লজ্জা। এর বিরুদ্ধে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করতে হবে। যা করেছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও মশিউর রহমান যাদু মিয়ার মতো বরেণ্য ব্যক্তিরা।
তিনি বলেন, এই বাংলাদেশ আমাদের। দেশের যেকোনো ধরনের বিভক্তি ঠেকাতে আমাদেরকে রুখে দাঁড়াতে হবে। এসময় বেগম খালেদা জিয়া, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান, মিয়া গোলাম পরওয়ার, রফিকুল ইসলাম খানসহ গ্রেপ্তারকৃত নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবি করেন।
তিনি বলেন, জামায়াত আন্দোলনে ছিল, আছে এবং থাকবে। আমরা চাই যুগপৎভাবে আন্দোলন হোক। সবাইকে সেই আন্দোলনে শরিক হওয়ার আহ্বান জানাই।
সাইফুল হক বলেন, এই অবস্থা চলতে দেওয়া যায় না। আজকে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। আমাদের প্রিয় ভূখণ্ডটি ক্রমেই ঝুঁকিপূর্ণ হচ্ছে। দেশের জনগণ অনিরাপদ। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আকাশচুম্বী মূল্যে খেটে খাওয়া মানুষ দিশেহারা। আমরা এই অবস্থা চলতে দিতে পারি না। সরকারের পতন পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, আমাদের সামনে কঠোর আন্দোলন সংগ্রাম ছাড়া কোনো পথ নেই। এই অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করার মতো কঠোর আন্দোলনে সকলকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিতে হবে।
এ আর/ ইএইচ