বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করতে চায় সরকার: রিজভী

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রকাশিত: মার্চ ১৫, ২০২৪, ১২:৪৫ পিএম
বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করতে চায় সরকার: রিজভী

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, গত ৭ জানুয়ারি ডামি নির্বাচনের পরে ডামি সরকার নতুন দূরভিসন্ধিতে লিপ্ত রয়েছে। তারা দেশ ও দেশের জনগণকে মহাসংকটে ফেলে একটি মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন করছে। সেটি হলো—বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করা। আর তাই বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দিয়ে, উন্নত চিকিৎসার সুযোগ না দিয়ে জীবন বিপন্ন করার পাশাপাশি তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ক্রমাগত কুৎসা রটিয়ে তার ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।

আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, সরকার আবারও তারা টার্গেট করেছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ জিয়া পরিবারকে। গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করে বা কব্জায় নিয়ে মিথ্যা অপপ্রচারের গোলক ধাঁধায় শুরু করেছে বানোয়াট প্রোপাগান্ডা। তারেক রহমানের সফল নেতৃত্বের যে তরঙ্গ সারাদেশব্যাপী গণতন্ত্রকামী মানুষকে আন্দোলিত করেছে সেটি শেখ হাসিনা কোনোভাবেই সহ্য করতে পারছে না। 

তিনি বলেন, অপপ্রচার আর মিথ্যার পুরোনো কাসুন্দি ব্যবহার করছেন নিরন্তরভাবে। নিজ দলের লুটপাট, সম্পদ পাচার, দখল, রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার আওয়ামী নেতাদের গল্প যে ‘আলিফ লায়লা’র গল্পকেও হার মানাচ্ছে সেটি শেখ হাসিনা।

রিজভী আরও বলেন, এই রমজানে ক্ষুধার্ত ক্ষুব্ধ মানুষের হাহাকারের ‘এসওএস বার্তা’ শেখ হাসিনা কি শুনতে পান? নিমজ্জমান মানুষের অনুচ্চারিত যন্ত্রণাকে পাত্তা দেয় না ডামি সরকার। এদের স্নায়ু শিথিল হয়ে মস্তিষ্ক অলস হয়ে গেছে। সুতরাং দারিদ্র—অনটনের পিস্টনযন্ত্রে যাদের অষ্টপ্রাহরিক জীবনটা পেষাই হয়ে ছিবড়ে হয়ে গেছে, সেই জনগণের কল্যাণ সাধন এদের লক্ষ্য নয়।

তিনি বলেন, বিস্ময়কর বিষয় হলো—এদেশের স্বাধীন সাংবাদিকতাকে মুছে দিতে শেখ হাসিনার ক্রুদ্ধ হুংকারে ভয়ের যে বাতাবরণ তৈরি হয়েছে, তাতে মনে হয়—কিছু গণমাধ্যমের চৈতন্য লোপ পেয়েছে। সত্যাসত্য বিবেচনায় না এনে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা না করে শুধু শেখ হাসিনার মনঃতুষ্টির জন্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রকাশ করা যেন রীতিতে পরিণত হয়েছে। গতকালও একটি দৈনিকের অনলাইনের এহেন রিপোর্ট গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর হুকুমে করা হয়েছে বলে জনগণ বিশ্বাস করে। কিন্তু এখানে প্রতিষ্ঠান হিসেবে পত্রিকার নিরপেক্ষতা বজায় রাখা হয়নি।

রিজভী বলেন, ক্ষমতাবিলাস, দুর্নীতির ওপর জেনারেল লাইসেন্স, যাদের একজন মন্ত্রীর বিদেশে দুই শো মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের ৩৫০ টিরও বেশি সম্পত্তি থাকা, এছাড়াও দেশের সম্পদের বিরাট অংশ দুবাই, কুয়ালালামপুর, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকার পাচার করা, ছাত্রলীগের সীমাহীন চাঁদাবাজির কারণে মানুষের ঘরবাড়ি তৈরি করা বন্ধ, এর ওপর তাদের আইনের শাস্তি থেকে রেহাই দেওয়ার বিষয়ে প্রমাণিত হয় দেশ চলছে আওয়ামী লুটতরাজ ও এক ব্যক্তির হুকুমে। ডামি সরকার গৃহস্থের বদলে চোরের পাহারায় অধিক ব্যস্ত। কই এগুলো নিয়ে প্রতিবেদন করতে তো কোনো সংবাদপত্রকে সাহসী হতে দেখি না।

আওয়ামী লীগ ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়নি, বরং ইতিহাসের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। এটি নিশ্চয়ই সংবাদপত্রগুলোর মনে থাকার কথা। সুতরাং এখন যারা শেখ হাসিনার নব্য বাকশালের রুদ্র শাসনের মুখপাত্র হয়েছেন, ইতিহাস এদের ক্ষমা করবে না।

তিনি বলেন, অসত্য কখনোই টিকে থাকবে না। দুর্নীতিতে পাগলা ঘোড়ার মতো বেসামাল হয়ে পড়া ডামি সরকারের বিরুদ্ধে জনাব তারেক রহমান এক প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর। দুর্নীতিতে বিশ্বমিডিয়ায় শিরোনাম হওয়া আওয়ামী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের এক নির্ভিক নেতৃত্ব তারেক রহমানকে নিয়ে অসত্য মনগড়া অপপ্রচারে মানুষ কখনোই বিভ্রান্ত হয়নি। গণমাধ্যম নিজেদের রক্ষার তাগিদে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত যে কুৎসা রটানো হচ্ছে সে সম্পর্কে জনগণ ওয়াকিবহাল। ডামি সরকারের প্রভাবিত মিডিয়ায় অপপ্রচারের ধুম্রজাল সৃষ্টিতে তারেক রহমানের কোনো ক্ষতি হবে না। শেখ হাসিনা রাষ্ট্রশক্তিকে নিজেদের সুবিধা মতো ব্যবহার করে গণমাধ্যমকে হুমকি দিয়ে তারেক রহমান এর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। অথচ দেশে শোকে—সংকটে—সংগ্রামে এক আপোসহীন নেতৃত্বের নাম তারেক রহমান। স্বৈরাচার, রাজনৈতিক টাউট, অপপ্রচারকারী কেউই কখনোই সময়ের নির্মমতা ও প্রাকৃতিক প্রতিশোধ থেকে রেহাই পায়নি।

রিজভী আরও বলেন, ওবায়দুল কাদের সাহেব আপনি যতই চিৎকার করেন, দেশবাসীর কাছে এটি প্রমাণিত যে, আওয়ামী লীগ সরকারের অপর নাম সিন্ডিকেট আর লুটপাট। কোনো কিছু সামাল দিতে না পেরে সরকার নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এখন ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দিয়েছে ধর্মপ্রাণ মুসলমানের ইফতার ভাঙার কর্মসূচিতে। যখনই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে তখনই তারা মুসলমানদের ধর্মীয় বিশ্বাস, সংস্কৃতির ওপর আঘাত হানে এবং আলেম সমাজের ওপর নিপীড়ন নেমে আসে। এর কারণ প্রভুদেরকে খুশি করা। 

বিশ্ববিদ্যালয়ে সভা ও সবধরণের অনুষ্ঠান বিদ্যমান রয়েছে। এসব অনুষ্ঠান ওবায়দুল কাদের, হাছান মাহমুদ সাহেবদের সাড়ম্বর উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে অথচ ইফতার মাহফিলে নিষেধাজ্ঞা ও হামলা এটা কি গভীর চক্রান্তের অংশ? মুসলমানদের কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠান করতে গেলে ওবায়দুল কাদের সাহেবদের গা জ্বালা করার অর্থ কি?

আওয়ামী লীগ তাদের স্বার্থে কখনো ইসলামকে ব্যবহার করে, আবার কখনো ছুঁড়ে ফেলে দেয়। দেশবাসী ভোট—পার্লামেন্ট হারিয়েছে, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন হারিয়েছে, শেষমেষ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানরা নিজেদের সংস্কৃতি ও মূল্যবোধও হারাতে বসেছে।

বিআরইউ