মেন্দি সাফাদির সঙ্গে সাক্ষাতের কথা স্বীকার করলেন নুরুল হক নুর

আমার সংবাদ ডেস্ক প্রকাশিত: জুলাই ৩১, ২০২৫, ০৯:১৬ পিএম
মেন্দি সাফাদির সঙ্গে সাক্ষাতের কথা স্বীকার করলেন নুরুল হক নুর

ইসরায়েলি নাগরিক মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়টি স্বীকার করেছেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর। 

বৃহস্পতিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক এক সেমিনারে তিনি এ স্বীকারোক্তি দেন।

সেমিনারে অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ মেন্দি সাফাদির সঙ্গে নুরের কফি মিটিংয়ের প্রসঙ্গ তোলেন। 

এর জবাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে নুর বলেন, “স্যার (কলিমুল্লাহ) একটু বাড়িয়ে বলছেন, যা বিভ্রান্তি তৈরি করবে। আমি বাইরে গেলে অনেকের সঙ্গেই দেখা হয়, হতেই পারে।”

ঘটনার প্রায় দুই বছর পর নুর জানান, “এক কফিশপে দাঁড়িয়ে একটি ছবি তুলেছিলাম, কফি-টফি, মিটিং-টিটিং কিছুই হয়নি। আমি তখন অনেক বিড়ম্বনার মধ্যে ছিলাম, অনেক ধকল সহ্য করতে হয়েছে।”

এর আগে অধ্যাপক কলিমুল্লাহ বলেন, “ইসরায়েলের কারও সঙ্গে কথা বললেও আমাদের দেশে বিপদে পড়তে হয়। যেমন, ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর হাসিনার আমলে মধ্যপ্রাচ্যে ভ্রমণের সময় মেন্দি সাফাদির সঙ্গে কফি মিটিং করছিলেন। তখন তাকে আমি রেসকিউ করেছিলাম। এমনকি তার সঙ্গে অনলাইনে একটি শোতেও অংশ নিয়েছিলাম।”

তিনি আরও বলেন, “মেন্দি সাফাদি ইহুদি নন, তিনি দ্রুজ সম্প্রদায়ের লোক। একজন মুসলমান যদি আরেকজন দ্রুজের সঙ্গে কফি খান, তাতে সমস্যা কোথায়? এসব ট্যাবু ভাঙার জন্য কথা বলার প্রয়োজন আছে।”
তবে অনুষ্ঠানটির সঞ্চালক জিল্লুর রহমান পরে সংশোধন করে বলেন, “দ্রুজ আসলে মুসলিম নয়, এটি একটি স্বতন্ত্র ধর্ম।”

সেমিনারে আরও আলোচনায় উঠে আসে, বাংলাদেশের প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রী খন্দকার মুশতাক আহমেদ ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়’—এই নীতির বাস্তবায়নে ইসরায়েলের রাষ্ট্রপতিকে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন। এতে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার আগ্রহ জানায় ইসরায়েল। তবে ভারতীয় প্রভাব এবং আন্তর্জাতিক চাপের কারণে সেই উদ্যোগ বাস্তবায়ন হয়নি।

২০২৩ সালে সাত বছর পর আবারও আলোচনায় আসেন মেন্দি সাফাদি, যখন তার সঙ্গে নুরের বৈঠক নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। যদিও নুর তখন একে ‘ষড়যন্ত্র’ ও ‘অপপ্রচার’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন, মেন্দি সাফাদি তখন প্রকাশ্যে সাক্ষাৎ হওয়ার কথা বলেন।

জানা যায়, ২০২৩ সালের মাঝামাঝি কাতারে নুর ও সাফাদির মধ্যে ওই সাক্ষাৎ হয়। এরপর বিষয়টি সরকার ও গোয়েন্দা সংস্থার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এ ঘটনার পর নুর রাজনৈতিকভাবে কিছুটা কোণঠাসা হয়ে পড়েন।

মেন্দি সাফাদির নাম প্রথম আলোচনায় আসে ২০১৬ সালে, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠকের পর। তখন তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয় এবং তিনি গ্রেপ্তার হন। এরপর থেকেই মেন্দিকে ঘিরে রাজনৈতিক গুঞ্জন চলতে থাকে। যদিও তাকে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে যুক্ত বলা হলেও তার প্রমাণ মেলেনি।

ইসরায়েলের গোলান মালভূমির বাসিন্দা মেন্দি এন সাফাদি দেশটির ডানপন্থী লিকুদ পার্টির সদস্য। তিনি একসময় সাবেক দ্রুজ নেতা ও মন্ত্রী আয়ুব কারারের চিফ অব স্টাফ ছিলেন এবং বর্তমানে সাফাদি সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল ডিপ্লোম্যাসি নামের একটি সংগঠন পরিচালনা করেন। তিনি দাবি করেন, সংখ্যালঘু অধিকার ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করেন। তবে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম ও অর্থায়ন নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তার দুবাইয়েও ব্যবসা রয়েছে।

সাফাদি নিজেই বলেন, বাংলাদেশসহ সিরিয়া ও কুর্দিস্তান নিয়ে তার আগ্রহ রয়েছে। এমনকি ঢাকার হলি আর্টিসান হামলা নিয়ে একটি প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছে তার প্রতিষ্ঠান।

বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ইসরায়েলের কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকলেও ২০২১ সালে পাসপোর্ট থেকে ‘ইসরায়েল ভ্রমণ নিষিদ্ধ’ লেখা তুলে নেওয়া হয়। একই সময়ে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম Haaretz দাবি করে, বাংলাদেশ সরকার একটি ইসরায়েলি কোম্পানি থেকে নজরদারি প্রযুক্তি কিনেছে। যদিও এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি।

ঢাকায় নিযুক্ত ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত দাবি করেছিলেন, কাতার, দুবাই ও ভারতে নুর-সাফাদি সাক্ষাতের কিছু ছবি তাদের গোয়েন্দাদের হাতে এসেছে।

তবে নুর সবসময়ই বলেছেন, তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে এবং তার দল ভাঙার উদ্দেশ্যেই এসব অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।

ইএইচ