তারেক রহমান

৫ আগস্টের ঘটনা বিশ্বের ইতিহাসে নজিরবিহীন

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: আগস্ট ৫, ২০২৫, ১১:৫১ এএম
৫ আগস্টের ঘটনা বিশ্বের ইতিহাসে নজিরবিহীন

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বাংলাদেশে যা ঘটেছে, তা শুধু দেশের নয়, বিশ্ব ইতিহাসেও নজিরবিহীন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) সকালে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি এসব কথা বলেন।

তারেক রহমান বলেন— “৫ আগস্ট—আজ থেকে ঠিক এক বছর আগে ২০২৪ সালের এই দিনে ফ্যাসিস্ট সরকার বাংলাদেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। রাহুমুক্ত হয় বাংলাদেশ। স্বাধীনতাপ্রিয়, গণতন্ত্রপ্রিয় জনগণের জন্য দিনটি আনন্দের, দিনটি বিজয়ের। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দিনটিকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। এই দিনটি এখন থেকে প্রতিবছর সরকারি ছুটির দিন হিসেবে উদযাপিত হবে।”

তিনি বলেন, একবিংশ শতকের বাংলাদেশে এক পলাতক স্বৈরাচার ভয়াবহ দমন-পীড়নের রাজত্ব কায়েম করেছিল। গুম-খুন, অপহরণ, হামলা-মামলা, নির্যাতন-নিপীড়নকে সাধারণ ঘটনা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। এক দশকের বেশি সময় ধরে চলা গণতন্ত্রের আন্দোলনে লাখ লাখ নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলায় জর্জরিত করে ঘরছাড়া করা হয়। অনেকের পরিবার ভেঙে যায়।

“পলাতক স্বৈরাচারের নির্দেশে দেশে শত শত গোপন বন্দীখানা—‘আয়নাঘর’—গড়ে তোলা হয়। যেখানে দিনের পর দিন, বছরের পর বছর মানুষকে আটকে রাখা হতো। কেউ কেউ আজও নিখোঁজ, যেমন বিএনপির সাবেক এমপি ইলিয়াস আলী এবং কমিশনার চৌধুরী আলম।”

তারেক রহমান আরও বলেন, বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশনসহ সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে অকার্যকর করা হয়েছিল। ভোটাধিকার হরণ করে নির্বাচনী ব্যবস্থাকে প্রহসনে পরিণত করা হয়। শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে শিক্ষার্থীদের হাতে বইয়ের বদলে অস্ত্র তুলে দেওয়া হয়েছিল।

তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করা হয়। ব্যাংকগুলো দেউলিয়া হয়, প্রায় ২৮ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়। দুর্নীতি, লুটপাট, অব্যবস্থাপনাই ছিল দৈনন্দিন চিত্র।

“তবে শেষ পর্যন্ত ফ্যাসিবাদের রক্ষা হয়নি। সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে নেমে আসে। রিকশাওয়ালা, গার্মেন্টস শ্রমিক, হোটেলকর্মী, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, নারী ও শিশু—সকলেই রুখে দাঁড়ায়। হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালিয়ে মানুষ হত্যা করা হয়। শিশু শহিদ আবু সাঈদ, ওয়াসিম, মুগ্ধদের বুক ঝাঁঝরা করে দেওয়া হয়।”

তারেক রহমান বলেন, শুধুমাত্র ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে দেড় হাজারের বেশি মানুষ শহিদ হন। আহত হন অন্তত ৩০ হাজার। অনেকেই চিরতরে পঙ্গু হন, কেউ কেউ চোখ হারান।

তিনি বলেন, “১৯৭১ ছিল স্বাধীনতা অর্জনের যুদ্ধ, আর ২০২৪ ছিল স্বাধীনতা রক্ষার যুদ্ধ। শহিদদের রক্তে আমরা ঋণী। সেই ঋণ পরিশোধ করতে হলে আমাদের গণতান্ত্রিক, ইনসাফভিত্তিক, মানবিক রাষ্ট্র গঠন করতে হবে।”

তারেক রহমান বলেন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের প্রথম শর্ত হচ্ছে—জনগণের ভোটে নির্বাচিত, জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই লক্ষ্যেই কাজ করছে।

তিনি আরও বলেন, “যারা বর্তমান সরকারের সঙ্গে ফ্যাসিস্ট শাসনের তুলনা করছেন, তারা ভুল করছেন। হিটলারের নাৎসিবাদের মতোই, ফ্যাসিস্ট শাসনামল নিয়ে গর্ব করার কিছু নেই। কেউ যেন সেই শাসনামলের সাফাই গাইতে না যান।”

তারেক রহমান স্মরণ করিয়ে দেন— “৫ আগস্ট গণভবন ছেড়ে ফ্যাসিস্ট পালিয়েছে, সংসদ ভবন ছেড়ে সাংসদ পালিয়েছে, আদালত ছেড়ে প্রধান বিচারপতি পালিয়েছেন, বায়তুল মোকাররম ছেড়ে খতিব পালিয়েছেন, ক্যাবিনেট ছেড়ে মন্ত্রীরা পালিয়ে গেছেন। কিন্তু এই দোসরদের মধ্যে এখনো অনুশোচনা নেই।”

তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশে আর কখনো ফ্যাসিবাদ আসতে পারবে না, কেউ গণতন্ত্র হত্যা করতে পারবে না।

“গণতন্ত্রে মতভিন্নতা থাকবে, এটাই তার সৌন্দর্য। কিন্তু এই ভিন্নমত যেন চরমপন্থার জন্ম না দেয়, সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। প্রতিটি রাজনৈতিক দল জনগণের আদালতে যাবে, জনগণই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।”

তিনি বলেন, জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকার ছাড়া রাষ্ট্রে জনগণের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত হবে না। স্থানীয় সরকার থেকে শুরু করে জাতীয় সংসদ পর্যন্ত জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

“জনগণকে শক্তিশালী না করতে পারলে কোনো কিছুই টেকসই হবে না,” বলেন তারেক রহমান।

বক্তব্যের শেষদিকে তিনি ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের ঐতিহাসিক ঘটনা স্মরণ করে বলেন— “আমি আগেও বলেছি—বিজয়ীর কাছে পরাজিতরা নিরাপদ থাকলে বিজয়ের আনন্দ মহিমান্বিত হয়। কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না, সহিংসতা করবেন না, নারীর প্রতি সহিংস আচরণ করবেন না, অন্যের স্বাধীনতাকে সম্মান করুন।”

“আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গড়তে চাই, যেখানে দলমত-ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সবাই নিরাপদে থাকবে। ৫ আগস্ট হোক গণতন্ত্র ও মানবিকতার প্রতিজ্ঞার দিন। সেই যাত্রায় বিএনপি দেশের গণতন্ত্রকামী সকল মানুষের সহযোগিতা কামনা করে।”

ইএইচ