পবিত্র ঈদুল আজহা মুসলিম উম্মাহর ত্যাগ ও নিবেদনের এক অনন্য অনুশীলন। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কোরবানি করা প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমানের জন্য ইবাদত ও সুন্নাত।
তবে এই গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতের প্রস্তুতির সময় অনেকেই পড়েন এক দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতিতে—যখন কোরবানির পশু চুরি হয়ে যায় বা হারিয়ে যায়।
ইসলাম এমন অবস্থায় আমাদের কী করতে বলে? এ বিষয়ে কোরআন-সুন্নাহ ও আলেমদের ব্যাখ্যা কী—তা নিচে তুলে ধরা হলো।
নিয়তের গুরুত্ব সবচেয়ে বড়
ইসলামে ‘নিয়ত’ অর্থাৎ ইচ্ছা ও অভিপ্রায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন— "সমস্ত আমলের বিচার হবে নিয়তের উপর ভিত্তি করে।" (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১)
যদি কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কোরবানির পশু কিনে রাখেন এবং তা কোনোভাবে হারিয়ে যায় বা চুরি হয়ে যায়—তাহলে নিয়তের কারণে আল্লাহর পক্ষ থেকে তার প্রতিদান পাওয়া যাবে, ইনশাআল্লাহ।
হারিয়ে গেলে নতুন করে কোরবানির চেষ্টা করুন
যদি কোরবানির পশু চুরি হয়ে যায় বা হারিয়ে যায়, এবং কারো সামর্থ্য থাকে, তাহলে নতুন একটি পশু কিনে কোরবানি করা উত্তম। এটি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাহের অনুসরণ হবে।
আলেমরা বলেন, "যদি কারও কোরবানির পশু হারিয়ে যায় এবং সে কোরবানি করতে চায়, তবে পুনরায় পশু সংগ্রহ করে কোরবানি দেওয়া উত্তম।"
তবে সামর্থ্য না থাকলে তিনি গুনাহগার হবেন না। কেননা তিনি নিয়ত করেছিলেন এবং পরিস্থিতি তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
চুরি হলে কী করণীয়?
শরীয়তের দৃষ্টিতে চুরি একটি গর্হিত অপরাধ। কোরআনে বলা হয়েছে— "চোর, পুরুষ হোক বা নারী—তাদের হাত কেটে দাও, এটি তাদের কৃতকর্মের প্রতিফল এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।" (সূরা মায়েদা: ৩৮)
তবে, কোরবানির পশু চুরি হলে দ্রুত প্রশাসন বা স্থানীয় থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা উচিত। ইসলাম মানুষকে সতর্ক হতে, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ও অন্যায় প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে উৎসাহ দেয়।
ধৈর্য ও তাওয়াক্কুল (আল্লাহর উপর ভরসা)
এমন পরিস্থিতিতে একজন মুমিনের করণীয় হচ্ছে—সবর (ধৈর্য) করা ও আল্লাহর ওপর ভরসা রাখা। হাদিসে এসেছে— "আশ্চর্যজনক হলো মুমিনের ব্যাপার, তার সব কিছুই কল্যাণকর।" (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৯৯৯)
চুরি বা ক্ষতির মুখে ধৈর্য ধারণকারী বান্দার জন্য রয়েছে আল্লাহর অশেষ প্রতিদান।
বিকল্প ইবাদত ও সদকা
যদি কেউ আর্থিক বা পরিস্থিতিগত কারণে নতুন করে কোরবানি দিতে না পারেন, তাহলে তিনি চাইলে সদকা বা দান করতে পারেন। যদিও এটি কোরবানির বিকল্প নয়, তবে সদকার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশা করা যায়।
উল্লেখ্য, কোরবানির পশু চুরি হয়ে যাওয়া বা হারিয়ে যাওয়া অবশ্যই দুঃখজনক, কিন্তু এটি ইবাদতের দরজা বন্ধ করে না। ইসলাম আমাদের নিয়তের মূল্য দেয়, ধৈর্য ধারণের নির্দেশ দেয় এবং সদিচ্ছার জন্য প্রতিদান দেয়।
আল্লাহ আমাদের সকলের কোরবানি কবুল করুন, এবং যারা এমন দুর্ঘটনার শিকার হন, তাদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করে দিন—এই প্রার্থনায় আমরা সবাই শামিল হই।
ইএইচ