সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ

ভারতকে টাইব্রেকারে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ

ক্রীড়া প্রতিবেদক প্রকাশিত: মার্চ ১০, ২০২৪, ০৫:৩৬ পিএম
ভারতকে টাইব্রেকারে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ

দক্ষিণ এশিয়ায় মেয়েদের ফুটবলে দাপট দেখাচ্ছে বাংলাদেশের মেয়েরা । একের পর এক সাফ টুর্নামেন্ট জিতে নিজেদের শক্তিমত্তা প্রমাণ করেই চলেছে লাল-সবুজের মেয়েরা। সাফের আরও একটি ফাইনাল, প্রতিপক্ষ ভারত। আরও একবার খেলা গড়ালো টাইব্রেকারে। 

তবে এবার অবশ্য টস নাটক হয়নি। নেপালের কাঠমান্ডুর আনফা কমপ্লেক্সে রোববার ফাইনালে ভারতকে টাইব্রেকারে হারিয়ে সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতে বাংলাদেশ। এর আগে নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলা ১-১ গোলে ড্র ছিল।

এর আগে অনূর্ধ্ব-১৯ মেয়েদের ফাইনাল, নির্ধারিত সময়ে ১-১ সমতার পর টাইব্রেকারেও দুই দলের ১১ শটের সবগুলোতে গোল হওয়ার পর ম্যাচ রেফারির এক অদ্ভুত সিদ্ধান্ত এল। টস করলেন, তাতে ভারত জিতে যায়। কিন্তু বাংলাদেশ আপত্তি জানানোর পর ম্যাচ রেফারি নিজের ভুল স্বীকার করেন। এরপর ভারত আর নামতে রাজি না হওয়ায় দুই দলকেই যুগ্মভাবে জয়ী ঘোষণা করা হয়।

নেপালে এবার অনূর্ধ্ব-১৬ মেয়েদের সাফে আর অত নাটক হলো না। রুদ্ধশ্বাস নাটকীয়তা যা হওয়ার হয়ে গেল টাইব্রেকারে দুই দলের প্রথম পাঁচ শটেই। তাতে ভারতের তিনটি শট ঠেকিয়ে নায়িকা বনে গেলেন বাংলাদেশের ‘এমিলিয়ানো মার্তিনেস’ ইয়ারজান বেগম!

নির্ধারিত সময়ে এবারও ১-১ সমতার পর টাইব্রেকারে ৩-২ ব্যবধানে ভারতকে হারিয়ে শিরোপা জিতে গেল বাংলাদেশ!  

অনূর্ধ্ব-১৯ সাফের মতো এবারও ফাইনালে শুরুতে এগিয়ে গিয়েছিল ভারত। ৫ মিনিটে আনুশকা কুমারীর দারুণ ফিনিশিং এগিয়ে দেয় ভারতীয়দের। একে তো ফাইনাল, তারওপর শুরুতেই গোল খাওয়াতেই কি না, বাংলাদেশের মেয়েদের পায়ে ফুটবল সেভাবে আজ ফুল হয়ে ফুটল না প্রথমার্ধে। একের পর এক ভুল পাস, কখনো বলের নিয়ন্ত্রণ ঠিকঠাক হলো না। অন্যদিকে ভারতের মেয়েদের প্রেসিং ছিল বেশ ক্ষিপ্র।

কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে নিজেদের গুছিয়ে নেয় বাংলাদেশ। সাইফুল বারী টিটুর শিষ্যরা ধীরে ধীরে পাসিং ফুটবল খেলার চেষ্টা করে। তাতে ম্যাচে নিয়ন্ত্রণ বাড়ে বাংলাদেশের, দাপট বাড়ে। কিন্তু গোলটা তো আসছিল না, তাই বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীদের উশখুশ হয়তো বাড়ছিল।

স্বস্তি এল ৭০তম মিনিটে। কর্নার পেয়েছিল বাংলাদেশ, সেই কর্নার থেকে ভারতের বক্সে ভিড়ের মধ্যে লাগে মরিয়মের পায়ে। ঠিকঠাক হয়নি শটটা, তবে অতটুকুই যথেষ্ট হলো। বল জড়ালে জালে!

নির্ধারিত সময়ে আর গোল হলো না, ম্যাচ গড়াল টাইব্রেকারে। ভারতের গোলকিপারের উচ্চতার কারণে ভয় ছিল, না জানি বাংলাদেশ টাইব্রেকারে কতটা কী করতে পারে! শঙ্কাটা পারদ চড়ল একেবারে প্রথম শটে। টস জেতায় বাংলাদেশ আগে শট নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে, তাতে প্রথম শটটাই ঠেকিয়ে দিলেন ভারতের গোলকিপার। শটটাও কার, টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ গোলদাতা সুরভী আকন্দ প্রীতির!

প্রমাদ গুনল বাংলাদেশ। ভারতের প্রথম শট নিতে এসে স্বেতা যখন বল জালে জড়িয়ে দিলেন, শঙ্কা বাড়ল। বুঝি বাংলাদেশ এবার আর পারছে না!

হাহাকার  যখন বাতাসে, দল যখন এত কাছে এসেও শিরোপা ছুঁতে না পারার সত্যিকারের শঙ্কায়, ‘এমিলিয়ানো মার্তিনেস’ হয়ে দেখা দিলেন বাংলাদেশ গোলকিপার ইয়ারজান বেগম। নাহ, মার্তিনেসই বা বলবেন কেন, ইয়ারজান তো একদিক থেকে তাঁর চেয়েও এগিয়ে। আর্জেন্টিনাকে কাতার বিশ্বকাপ জেতানোর পথে টাইব্রেকারে ফ্রান্সের দুটি শট ঠেকিয়ে দিয়েছিলেন মার্তিনেস, ইয়ারজান ঠেকিয়েছেন তিনটি!

ভারতের দ্বিতীয় ও তৃতীয় শট – দুটিই দারুণ ক্ষিপ্রতায় ফিরিয়ে দিলেন। অন্যদিকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ও তৃতীয় শটে মরিয়ম ও থুইনুই মারমা বল জালে জড়ানোয় তিন শট শেষে বাংলাদেশই এগিয়ে। কিন্তু নাটকীয়তার তো তখনো বাকি।

বাংলাদেশের চতুর্থ শট নিতে এসে আলপি আক্তার হলেন দুর্ভাগ্যের শিকার। তাঁর শটটা খারাপ ছিল না, কিন্তু পোস্টে লেগে ফিরে আসে শটটা। অন্যদিকে ভারত চতুর্থ শটে গোল পেয়ে গেল। ইয়ারজান ঠিক দিকে ঝাঁপিয়েও শটটা ঠেকাতে পারলেন না।

পঞ্চম শট। নেপালের কাঠমান্ডু থেকে বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে তখন উত্তেজনা। ধুপধুপ ধুপধুপ! বাংলাদেশের পঞ্চম শট নিতে গেলেন সাথী। এবং মুহূর্ত পর বাংলাদেশ স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ল। সাথীর শট জড়িয়েছে জালে।

এবার ভারতের পালা। শট জালে না গেলেই বাংলাদেশের শিরোপা। উত্তেজনা, আশা, চাপা উচ্ছ্বাস আর উল্টো পিঠের শঙ্কা…সব মিলিয়ে টাইব্রেকারের চূড়ান্ত রোমাঞ্চ আর কী! ভারতের খেলোয়াড় শট নিলেন…এবং সেকেন্ডের ভগ্নাংশ বাদেই দেখা গেল অপূর্ব সেই দৃশ্য - ইয়ারজান দারুণ ঝাঁপিয়ে ঠেকিয়ে দিচ্ছেন ভারতের পঞ্চম শট!

সেকেন্ডখানেকের নিস্তব্ধতা। শটটাতে যে ভারত গোল পায়নি, তা বুঝতে যতটা সময় লাগে আর কী! এরপর তো যা হওয়ার কথা তা-ই হলো, উচ্ছ্বাসে ভেসে গেল বাংলাদেশ।

আরএস