টেকনাফ-উখিয়া বাংলাদেশের অনিরাপদ অঞ্চল হয়ে উঠছে। স্থানীয়রা রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের ভয়ে এলাকা ছেড়েছে। মাঝিরাও রাত হলে ভয়ে ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়ে যান। গভীর রাতে অভিযান চালিয়ে সন্ত্রাসীদের আটক করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও ভাবতে হচ্ছে।
টেকনাফ ও উখিয়ার পাহাড়ে রোহিঙ্গারা গড়ে তুলেছে ‘অপহরণ সংগঠন’। চলছে বিদেশি পিস্তল, বিদেশি ইয়াবার রমরমা বাণিজ্য। বাধা দিতে গেলে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও গুলি চালাচ্ছে রোহিঙ্গারা।
এছাড়া বিশ্বের উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে ক্যাম্পে। তৈরি হচ্ছে পাসপোর্ট ও নকল এনআইডি কার্ডও। ওই চক্রের সদস্যদের নিয়মিত অভিযানে আটক করেও ঠেকানো যাচ্ছে না। হত্যাকাণ্ড, আধিপত্য বিস্তার, ইয়াবার কারবার, অপহরণ, ধর্ষণ, স্বর্ণের চোরাচালান, অবৈধ সিগারেট পাচারসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যকলাপে অপরাধের রাজ্যে তৈরি করেছে রোহিঙ্গারা।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থানেও তাদের দমানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়কে কেন্দ্র করে হত্যার ঘটনা ঘটছে। এ কারণে অধিকাংশ হত্যাকাণ্ডই পরিকল্পিত। ক্যাম্পে খুন এখন নিয়মিত ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে একটু মাথাচাড়া বা পরিচিত হয়ে উঠছে তাকেই খুন করা হচ্ছে।
এ ইস্যুগুলোর পেছনে মিয়ানমারের বড় হাত রয়েছে বলে মনে করছেন দেশের গোয়েন্দা সংস্থা ও বিশেষজ্ঞ মহল। তারা বলছেন, মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের বিশ্ব দরবারে খুনি ও বিশৃঙ্খল হিসেবে পরিচিত করতে চাচ্ছে। এদের সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যায়িত করে দেশটি আর কখনোই রোহিঙ্গাদের ওই দেশে ফেরত নেবে না।
কক্সবাজার জেলার উখিয়া, টেকনাফ ও নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচরসহ সরকার ঘোষিত প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছে। তবে বেসরকারি কয়েকটি সংস্থার ভাষ্য— দেশে রোহিঙ্গা সংখ্যা প্রায় ১৮-১৯ লাখ হবে। এছাড়া প্রতি বছর ৩০ লাখের উপরে রোহিঙ্গা শিশু জন্ম নিচ্ছে তাদের সংখ্যা এখনো যোগ হয়নি এবং তাদের পরিচয় কী হবে তাও সরকার থেকে বলা হচ্ছে না।
আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার সহায়তায় খাবারসহ মানবিক সেবা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু এসব রোহিঙ্গা আগমনের প্রায় পাঁচ বছর হলেও এখনো একজনকেও ফেরত নেয়নি মিয়ানমার। রোহিঙ্গাদের ওই দেশে ফেরত পাঠাতে ব্যর্থতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। বাংলাদেশের ভূখণ্ড বাঁচাতে যেকোনো মূল্যে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে পাঠানো দেশের জন্য এখন অনেক বেশি জরুরি হয়ে পড়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, বর্তমানে রোহিঙ্গা ক্যাম্প অপরাধের স্বর্গরাজ্য। এখানে অস্ত্র ও মাদকের কারবার, মানবপাচার, একটু কথা কাটাকাটি হলেই খুন, অপহরণ, ডাকাতি, আধিপত্য বিস্তারের মহড়া, যৌন নির্যাতন, অবৈধ সিম বাণিজ্য, জমি দখল, হুন্ডি, জাল টাকার কারবার, ধর্ষণ এখন নিত্য অপরাধ।
এদিকে সমপ্রতি কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয় শিবিরে দুর্গম ক্যাম্পগুলোতে সংঘবদ্ধ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা ‘টার্গেট কিলিংয়ে’ নেমেছে। শিবিরে একের পর এক মাঝি (রোহিঙ্গা নেতা) খুন হচ্ছেন।
গত ১০ আগস্ট মঙ্গলবার মধ্যরাতেও দুই মাঝিকে সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করে। এ নিয়ে গত পাঁচ বছরে সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হয়েছেন অন্তত ১৫ জন মাঝি। গুমের শিকার হয়েছেন আরো অন্তত ১৫ জন। এর মধ্যে গত দুই মাসেই খুন হয়েছেন আট রোহিঙ্গা।
গোয়েন্দা তথ্যমতে, ক্যাম্পের সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী মাস্টার মুন্না গ্রুপ, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ত্রাস ডাকাত হাকিম গ্রুপ, জাবু গ্রুপ, ইসলাম গ্রুপ, নবী গ্রুপসহ ২০টি থেকে ৩০টি ছোট-বড় সন্ত্রাসী গ্রুপ জোট বেধেছে। তাদের হাতে বিপুল সংখ্যক দেশি-বিদেশি অস্ত্র রয়েছে।
এম-১৬ ও একে-৪৭ সব সন্ত্রাসীদের হাতে হাতে। মজুত অস্ত্র সম্পর্কে যেসব মাঝি জানেন তারা কেউ জীবনের ভয়ে রাতে ক্যাম্পে থাকেন না। সমপ্রতি ক্যাম্প থেকে পাঁচ শতাধিক গুলিসহ মার্কিন তৈরি এম-১৬টি উদ্ধার করা হয়।
ফ্রান্স সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্যারিস পিস ফোরাম, ২০২১ আয়োজিত ‘মাইন্ডিং দ্য গ্যাপ : ইম্প্রুভিং গ্লোবাল গভর্ন্যান্স আফটার কোভিড-১৯’ আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করেন এবং রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে দ্রুত প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান।
রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশ যে সুরক্ষা ঝুঁকিতে রয়েছে তা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সঙ্কট থেকে উদ্ভূত সুরক্ষা ঝুঁকিগুলো কেবল আমাদের সীমান্তের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। আমরা ইতোমধ্যেই এর লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি।’
রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা স্থানীয়দের অপহরণ করছে : টেকনাফের গহীন পাহাড়ে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা গড়ে তুলেছে সংঘবদ্ধ অপহরণকারী চক্র। ওই চক্রটি স্থানীয় লোকজনকে অস্ত্রের মুখে জিন্মি করে পাহাড়ি এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানে নির্মম নির্যাতনের পর হত্যার হুমকি দিয়ে পরিবারের কাছে মোটা অঙ্কের মুক্তপণ দাবি করে।
ওই চক্রের হাতে অপহরণের শিকার দুই কিশোরসহ চারজনকে সমপ্রতি উদ্ধার করেছে র্যাব ও পুলিশের যৌথ টিম। ধরা পড়ছে অপহরণকারী চক্রের এক সদস্যও। ১ আগস্ট টেকনাফের শামলাপুর ইউনিয়নের নোয়াখালীয়া পাড়া এলাকা থেকে স্থানীয় চার বাসিন্দাকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয় গহীন পাহাড়ে।
সেখানে তাদের হাত-পা বেঁধে নির্মম নির্যাতন চালানো হয়। পরে পরিবারের কাছে ফোন করে অপহূতদের আর্তনাদ শুনিয়ে চাওয়া হয় মুক্তিপণ। উদ্ধার হওয়া আমিনুর রহমান জানায়, অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর পাহাড়ে তাদের প্রচুর মারধর করা হয়েছে। হাত-পা বেঁধে রাখা হতো সবসময়। অপহরণকারীরা ১১ জন ছিল। মারধরের যন্ত্রণা সইতে না পেরে আর্তনাদ করলে সেগুলো ফোন করে শোনানো হতো পরিবারের সদস্যদের।
এর আগে আগস্টের শুরুতে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায় বাহারছড়া ইউনিয়ন থেকে স্থানীয় দুই কিশোরসহ চারজনকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করছে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা। পরে অভিযান চালিয়ে তাদের উদ্ধার করা হয়।
দেশের অনিরাপদ অঞ্চল হয়ে উঠেছে টেকনাফ-উখিয়া : বিদেশি পিস্তল-মাদকসহ প্রতিদিনই আটক হচ্ছে রোহিঙ্গারা। দেশের অনিরাপদ অঞ্চল হয়ে উঠেছে টেকনাফ-উখিয়া। বিদেশি অস্ত্র , বিদেশি মাদকসহ সব সময় রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা আটক হচ্ছে।
সর্বশেষ গত ১৪ আগস্ট রাত ৮টার দিকে ১৬ এপিবিএন টেকনাফের নয়াপাড়া ক্যাম্পের একটি টিম অভিযান চালিয়ে এক রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীকে বিদেশি পিস্তলসহ গ্রেপ্তার করেছে। এর পরদিন নয়াপাড়া রেজিস্টার্ড ক্যাম্পের ৮০২/৫ নম্বর শেডের ব্লক-সি থেকে এক রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীকে আটক করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের পর তার দেহ থেকে তল্লাশি করে একটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করে জব্দ করা হয়।
এদিকে গত ১৩ আগস্ট বিকেলে উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ওই এলাকা থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় অভিযান চালিয়ে মানবপাচারকারী চক্রের এক রোহিঙ্গাকে আটক করেছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদস্যরা। সমপ্রতি কক্সবাজার টেকনাফে-২ বিজিবি ব্যাটালিয়ন সদস্যরা দুই দিনে চারটি অভিযান পরিচালনা করে বিপুল মাদকদ্রব্য উদ্ধার করেছে।
এসময় আটক করা হয়েছে দুই রোহিঙ্গা কারবারারিকে। যার মধ্যে রয়েছে এক কেজি ৬১ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথ বা আইস, ২০ হাজার পিস ইয়াবা, ১৮০ প্যাকেট সিগারেট, ৭৯ বোতল বার্মিজ মদ ও ৬৪৬ ক্যান বিদেশি বিয়ার। উদ্ধারকৃত মাদকের আনুমানিক বাজার মূল্য পাঁচ কোটি, ৯৩ লাখ, ৮৪ হাজার ৫০০ টাকা। চলছে একের পর খুনের ঘটনাও।
গত রোববার কক্সবাজারের টেকনাফে পাহাড়ি এলাকায় সালমান শাহ ও জকির গ্রুপের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুদল রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীর মধ্যে গোলাগুলিতে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের নয়াপাড়া নিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন পাহাড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।
একই দিন টেকনাফ নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প চারটি দেশীয় বন্দুক ও দুই রাউন্ড গুলিসহ এক রোহিঙ্গাকে আটক করেছে র্যাব। এ ছাড়া গত ২ আগস্ট কক্সবাজারের টেকনাফে নাফ নদী সীমান্ত থেকে পৌনে ২৬ কোটি টাকা মূল্যের ক্রিস্টাল মেথ আইস ও ইয়াবা উদ্ধার করেছে বিজিবি।
বাংলাদেশের পুলিশকে গুলি চালাচ্ছে রোহিঙ্গারা : শুধু অপরাধ করেই ক্ষান্ত হচ্ছে না রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা। বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপরও হামলা চালাচ্ছে তারা। গত ২ আগস্ট দুপুরে কক্সবাজারের টেকনাফের নয়াপাড়া মুচনী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সংঘর্ষে কাউসার আহমেদ (২৮) নামে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) এক সদস্যর গুলি করে রোহিঙ্গারা।
গুলিবিদ্ধ ওই পুলিশ সদস্যকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। কাউসার আহমেদ এপিবিএন-১৬ এর মুচনী ক্যাম্প পুলিশ ফাঁড়ির কনস্টেবল। ১৪ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। এ নিয়ে সন্ত্রাসী রোহিঙ্গাদের চিন্তিত দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রাত হলে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা হিংস্র হয়ে উঠে। পুলশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ভাষ্য, গভীর রাতে তথ্য পেলেও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অভিযান চালাতে প্রশাসনকে ভাবতে হয়।
গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে কুতুপালং শিবিরে আরসা সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হন রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস (এআরএসপিএইচ) সংগঠনের সভাপতি মহিব উল্লাহ। মহিব উল্লাহ রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরার দাবি-দাওয়া নিয়ে কাজ করছিলেন। মহিব উল্লাহ হত্যাকাণ্ডের পর গেল বছরের ২২ অক্টোবর বালুখালী শিবিরের মাদ্রাসায় একই সন্ত্রাসী দলের হাতে খুন হন ছয়জন নিরীহ রোহিঙ্গা। মহিব উল্লাহ ও আজিমুদ্দিন হত্যার ঘটনায় এ পর্যন্ত জড়িত ৩২ জন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার হয়েছেন।
তাদের মধ্যে অন্তত ১২ জন হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। জাতিসংঘ গঠিত দ্য ইনডিপেনডেন্ট ইনভেস্টিগেটিভ মেকানিজম ফর মিয়ানমারের (আইআইএমএম) বার্ষিক প্রতিবেদনে এক পর্যবেক্ষণ উঠে এসেছে। বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের অনেকেই তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরতে চায়, কিন্তু এই ফেরা নির্ভর করছে তাদের ওপর সংঘটিত নৃশংসতার জবাবদিহির ওপর। সেই জবাবদিহি ও ন্যায়বিচারের সুযোগ এখনো সীমিত।
অতিরিক্ত রোহিঙ্গা শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার সামছুদ্দৌজা নয়ন জানিয়েছেন, শিবিরগুলোতে দুই হাজারের বেশি রোহিঙ্গা মাঝি রয়েছেন। এই মাঝিরাই সাধারণ রোহিঙ্গাদের নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন। সন্ত্রাসীরা স্বদেশে ফিরতে ইচ্ছুক সাধারণ রোহিঙ্গাদের মনোবল দুর্বল করতে এবং মাঝিদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে নানা কার্যক্রম থেকে হাত গুটিয়ে নিতে বাধ্য করতেই এসব হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে যাচ্ছে বলে রোহিঙ্গা শিবির সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন। সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হওয়ার ভয়ে বহু রোহিঙ্গা মাঝি রাতের বেলায় শিবিরের বাইরে রাত কাটান।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের কাছে যে তথ্য আছে, তা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, রোহিঙ্গারা খুনোখুনি, অপহরণ, ধর্ষণ, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, মানবপাচার, অগ্নিসংযোগসহ ১৪ ধরনের অপরাধে জড়িত। এসব অপরাধের দায়ে ২০১৭ থেকে ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত থানায় এক হাজার ৯০৮টি মামলা হয়েছে। আর এ সময়ের মধ্যে খুনের ঘটনা ঘটেছে ৯৯টি।
সাবেক সচিব ও সাবেক রাষ্ট্রদূত এ কে এম আতিকুর রহমান বলেছেন, সেদিন হয়তো বেশি দূরে নয় যেদিন অধিকাংশ রোহিঙ্গা, বিশেষ করে যুবকরা, জঙ্গিবাদ আর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত হয়ে পড়বে। তখন তার খেসারত শুধু বাংলাদেশই দেবে না, তার প্রভাবে সমগ্র ইন্দো-প্রশান্ত অঞ্চলের শান্তিই বিঘ্নিত হবে।
যেভাবে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড রোহিঙ্গাদের মধ্যে বিস্তার লাভ করছে, তা ইতোমধ্যেই ক্যাম্পগুলোর চৌহদ্দি পেরিয়ে গেছে এবং যতই রোহিঙ্গা প্রত্যবাসন বিলম্বিত হবে ততই তা ভয়াবহ হয়ে উঠবে এবং একসময় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে, তাতে সন্দেহ নেই।
আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অপেক্ষা না করে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে রোহিঙ্গারা সন্ত্রাস আর বেআইনি কাজ করার কোনো দরজা খোলা না পায়। আর এ কাজটি করার জন্য নেতৃস্থানীয় রোহিঙ্গাদের সহযোগিতা অবশ্যই নিতে হবে। যতদিন না তাদের প্রত্যবাসন প্রক্রিয়া সমাপ্ত হয়, ততদিন সতর্ক থাকতে হবে এবং নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে হবে।