সাত এজেন্ডা বিদেশপাড়ায়

আবদুর রহিম প্রকাশিত: নভেম্বর ১২, ২০২২, ১২:৩৯ এএম
সাত এজেন্ডা বিদেশপাড়ায়

বাংলাদেশে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন, দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতি, আইনের শাসন, গণতন্ত্র উদ্ধারের উদ্দেশ্য নিয়ে কূটনৈতিকপাড়ায় লিখিত সাত এজেন্ডা নিয়ে কাজ করছে বিএনপি। যুক্তরাষ্ট্র এবং নিকটবর্তী দেশগুলোর সাথে বৈঠকে দলের আন্তর্জাতিক উইংয়ের সদস্যরা সাম্প্রতিক সব ঘটনা ও পরিস্থিতির ওপর তা  দাঁড় করায়।

দীর্ঘ সময় আওয়ামী লীগ সরকার নেতৃত্ব দিলেও দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভেঙে পড়েছে। মেগা প্রজেক্টের মাধ্যমে বড় বড় দুর্নীতিতে ক্ষমতাসীন সরকারের অনুসারীদের জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ রয়েছে। বিচার বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও নিজেদের অধীনে করা হয়েছে অভিযোগ তুলে ডাটা তুলে ধরা হচ্ছে। বিএনপির আন্তর্জাতিক উইংয়ের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, যে বিষয়গুলো নোট আকারে তুলে ধরা হচ্ছে, তা হলো—

১. অর্থনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের উপায়, সরকারের পদত্যাগ,  নতুন কোনো সরকার পদ্ধতি ছাড়া এ থেকে বের হয়ে আসার সুযোগ নেই। সরকারের প্রভাবশালী মহলকে বিদায় এবং নতুন লোকের মাধ্যমে সংস্কার করার দাবি তুলে ধরা হয়েছে।

২. বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনা। সরকারের বর্তমান ভুল নীতি এবং উপায়ের পথ তুলে ধরা হচ্ছে।  

৩. মানবাধিকার বিষয় লঙ্ঘনের চিত্র। সরকার দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থেকে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের গুম, খুন, নির্যাতন ইত্যাদির প্রমাণ ও তালিকা ডকুমেন্ট আকারে উপস্থাপন করা হচ্ছে। বিশেষ করে বিডিয়ার বিদ্রোহ, হেফাজতে ইসলাম কর্মীদের ওপর ৫ জানুয়ারির হামলা যে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও সরকারের ইশারায় কিছু বিষয় ঘটেছে, তার কিছু প্রমাণও উপস্থাপন করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে চলমান সরকার ক্ষমতায় থাকলে এটির ঝুঁকি আরও বাড়বে বলে দাবি করা হচ্ছে দলটির পক্ষ থেকে।

৪. সভা-সমাবেশে বাধার তথ্যউপাত্ত। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি, নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি ও ৫ নেতা খুনের প্রতিবাদে গণসমাবেশে সরকারের অঘোষিত কারফিউ জারি, গাড়ি চলাচল বন্ধসহ অতীতে যত কর্মসূচি ঘিরে হামলা হয়েছে— সেগুলোর ভিডিও এবং ছবিচিত্র তুলে ধরা হচ্ছে।

৫.  জোরালোভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে ভোটাধিকার প্রয়োগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যৌক্তিকতা। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে সব জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রভাব এবং একচেটিয়া দখলের মাধ্যমে কোনো নির্বাচনই অংশগ্রহণ ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন হয়নি। বিনা ভোটে সংসদ পরিচালিতের বিষয়টিও বলা হচ্ছে।  একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। অতীতে দলীয় সরকারের অধীনে হওয়া নির্বাচনের প্রশ্ন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হওয়া নির্বাচনের স্বচ্ছতা গ্রাফ দেয়া হচ্ছে বিদেশিদের কাছে।

৬. দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সম্ভব নয়। এ নিয়ে দেশের বুদ্ধিজীবী ও বড় অংশের মতামত রয়েছে— তাও এজেন্ডায় যুক্ত করা হয়েছে।

৭. গণমাধ্যমে প্রকাশিত এ সরকারের দুর্নীতি চিত্র বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যচিত্র বিদেশিদের কাছে জমা দেয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে বিএনপি আগামী সংসদ নির্বাচনে বিদেশিদের ভাবনা জেনে নিচ্ছে। বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোড় সাথে বৈঠক থেকে সহযোগিতার আশ্বাসও পাওয়া যাচ্ছে বলে বিএনপি থেকে অনেকে বলছেন।

এদিকে বাংলাদেশে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে— এমনটাই প্রত্যাশা করছে যুক্তরাষ্ট্র।  বিরোধী রাজনৈতিক দলসহ সবার জন্য কোনোরকম ভয়ভীতি-দমন ছাড়া শান্তিপূর্ণ সমাবেশের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র আহ্বান জানিয়েছে।  

গেল সপ্তাহে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নেড প্রাইস এ আহ্বান জানান। নেড প্রাইস বলেন, ‘বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা রয়েছে। আমরা আশা করি নাগরিক সমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে জনগণ একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের সরকার বেছে নিতে পারবে। এটাই আমাদের প্রত্যাশা। এ লক্ষ্যের প্রতি আমাদের সমর্থন অব্যাহত থাকবে।’ তাই বাংলাদেশে বিরোধী রাজনৈতিক দলসহ জনগণের জন্য কোনোরকম ভয়ভীতি-দমন ছাড়া শান্তিপূর্ণ সমাবেশের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য বাংলাদেশ সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছেন তারা।

গত মঙ্গলবার রাজধানীর একটি মিলনায়তনে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস জানিয়েছেন, সম্প্রতি রাজনৈতিক ইস্যুকে কেন্দ্র করে কিছু মানুষের আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এটি উদ্বেগের। এখানে যেন কোনো রাজনৈতিক সংঘর্ষ না ঘটে, সেজন্য আমরা সবার প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে অবাধ, স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচন চাওয়া হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি আফরিন আক্তার।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ তিনটি রাজনৈতিক দল এবং সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে এ বার্তাই জোরালোভাবে দেয়া হয়েছে। সব নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ, গ্রহণযোগ্য ও আন্তর্জাতিক মানের হতে হবে। ভোটের মাধ্যমে জনগণ যাতে তার নেতা বেছে নিতে পারে, এটি দৃঢ়ভাবে চায় যুক্তরাষ্ট্র।

সাম্প্রতিক বিষয়গুলো নিয়ে বিএনপপি স্থায়ী কমিটি সদস্য ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান আমীর খসরু মাহমুদ বলেছেন, সর্বশেষ সুইডেন ও নরওয়ের রাষ্ট্রদূত এসেছেন, আমাদের সাথে আলাপ করেছেন। মূলত বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সার্বিক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। রাজনীতিতে সম্প্রতি যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, সেগুলো নিয়ে কথা হয়েছে। বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে বেশি অগ্রধিকার পেয়েছে আলোচনায়।

বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নির্বাচিত সরকার আসুক, একটি নির্বাচিত সংসদ আসুক— সবার এমনটি প্রত্যাশা। ন্যাচারালি সবাই সুষ্ঠু নির্বাচন চাচ্ছে। জাতিসংঘ প্রতিনিধিদলের গোয়েন লুইসও বলেছেন, তারা অংশগ্রহণ ও প্রতিযোগিতামূলক অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন চান। সবাই চাচ্ছেন একটি নির্বাচিত সরকার। একটি নির্বাচিত সংসদ আসুক। এখন অনেকে জানতে চাচ্ছেন আগামী নির্বাচন কেমন হবে। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতি, আইনের শাসন, গণতন্ত্রের বিষয়ে কী হবে, জীবনের নিরাপত্তার বিষয় কী হবে— সব মিলিয়েই আলোচনা হচ্ছে।