চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন আগামী ১২ ডিসেম্বর। দীর্ঘ ৭ বছর পর অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে কে কোন পদে আসছেন— চোখ এখন সবার সেদিকে। এ নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনা এবং উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। এ উপলক্ষে পুরো শহরে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। ব্যানার-ফেস্টুনে ভরে গেছে সম্মেলনের স্থান ও শহরের প্রধান সড়কগুলো।
সম্মেলনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই আলোচনা জোরালো হচ্ছে কারা হবেন জেলায় আওয়ামী লীগের আগামীর কাণ্ডারি। সভাপতি পদে বর্তমান সভাপতি চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দার ছেলুনের পাশাপাশি জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুল হক বিশ্বাসের নামও আলোচনায় রয়েছে।
সাধারণ সম্পাদক পদে জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আজাদুল ইসলাম আজাদ সহ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য হাজী আলী আজগার টগর, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক চুয়াডাঙ্গার সাবেক মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন, সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সি আলমগীর হান্নানের নাম আলোচনায় রয়েছে।
এছাড়াও সোশ্যাল মিডিয়ায় জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক নঈম হাসান জোয়ার্দ্দার, অলক রায় চৌধুরী ও জিপু চৌধুরীর পোস্টার ঘুরে বেড়াচ্ছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন ২০১৫ সালের ২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৯ সালে এ কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। চলতি বছর একাধিকবার সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হলেও চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন অসুস্থ থাকার কারণে পরিবর্তন করা হয়।
সর্বশেষ গত ২৮ নভেম্বর সম্মেলনের নতুন তারিখ আগামী ১২ ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হলে হতাশার মধ্যেও কিছুটা উৎসবমুখরতা ফিরে আসে নেতাকর্মীদের মাঝে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ১২ ডিসেম্বর চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। যা নাকি এযাবৎকালে চুয়াডাঙ্গার সবচেয়ে বড় এবং উৎসবমুখর সম্মেলন হবে।
চুয়াডাঙ্গার ঐতিহ্যবাহী টাউন ক্লাব ফুটবল মাঠেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে এ সম্মেলন। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে যেমন সাজসাজ রব দেখা দিচ্ছে, তেমনি চুয়াডাঙ্গা শহর যেন এক অনন্য সাজে সজ্জিত হয়েছে। জেলা শহরের সার্কিট হাউস থেকে শুরু করে শহরের প্রতিটি মোড়ে ও রাস্তার চারপাশে কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের ছবির সাথে শোভা পাচ্ছে ত্রিবার্ষিক জেলা সম্মেলনে যেসব নেতাকর্মী পোর্টফোলিও পোস্টে আসার জন্য অপেক্ষা করছেন, তাদের ছবি।
শহরের একাধিক স্থানে বড় বড় তোরণ নির্মাণ করে নিজেদের ছবির সাথে ঝোলানো হয়েছে কেন্দ্রীয় নেতাদের ছবি। বিলবোর্ডগুলোয় শোভা পাচ্ছে নেতাকর্মীদের হাস্যোজ্জ্বল ছবি। স্থানীয় পত্রপত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পছন্দের নেতাকর্মীদের জন্য দাবি করা হচ্ছে পদ-পদবির।
চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন সম্মেলনের স্থান টাউন ফুটবল মাঠ গতকাল পরিদর্শন করেছেন।
পরিদর্শনকালে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, যারা আওয়ামী লীগের জন্য নিবেদিতপ্রাণ, যারা ত্যাগী নেতা, তারাই ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে পোর্টফোলিও পদে আসীন হবেন।
তিনি বলেন, অভিজ্ঞ, ত্যাগী ও জনদরদী নেতাকর্মীদের সাথে তরুণ ও উদীয়মান নেতাকর্মীরাও নেতৃত্বে থাকবেন বলে আমি আশা করি। আমার বিশ্বাস, কেন্দ্রীয় নেতারাও তেমনটি বিশ্বাস করবেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, আগামী নির্বাচন আমাদের জন্য খুব চ্যালেঞ্জের।
তাই নির্বাচনকে মাথায় রেখে যোগ্যদের নিয়ে একটি শক্তিশালী কমিটি হবে— এটাই আমাদের প্রত্যাশা। সর্বোপরি প্রধানমন্ত্রী যে কমিটি দেবেন এবং যাদের নেতা বানাবেন, তাদের পেছনে আমি কাজ করব, যাতে প্রধানমন্ত্রীর হাত আরও শক্তিশালী হয়। নেতৃত্বের ক্ষেত্রে দ্বন্দ্ব থাকবে— এটা স্বাভাবিক।
তবে আমরা চেষ্টা করেছিলাম সব বিভেদ ভুলে দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ রাখতে। আবারও যদি নেতৃত্বে আসি, তবে আগের মতোই দলকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করব। আর যদি না আসতে পারি, তবে নতুন নেতৃত্বের সঙ্গে কাজ করে যাব।
সম্মেলন উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়ামের প্রবীণ অন্যতম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ। প্রধান অতিথি থাকবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক জনপথ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
প্রধান বক্তা থাকবেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম। বিশেষ অতিথি থাকবেন সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাড. মো. আমিরুল আলম মিলন এমপি, পারভীন জামান কল্পনা, অ্যাড. গ্লোরিয়া সরকার ঝর্ণা এমপি।
সুেম্মলনে সভাপতিত্ব করবেন চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সালায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন, এমপি। সঞ্চালনায় থাকবেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আজাদুল ইসলাম আজাদ।