বাড়ছে পাঁচ হাজার পদ

বেলাল হোসেন প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১২, ২০২২, ০১:৫২ পিএম
বাড়ছে পাঁচ হাজার পদ

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের পদসংখ্যা নিয়ে অনেক কথা বলাবলি হলেও অবশেষে শিক্ষকের পদ বাড়ছে। বিষয়টি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সূত্রে জানা গেছে। এর আগে গেল মাসে সহকারী শিক্ষকের পদসংখ্যা বাড়িয়ে ৪৫ হাজার শিক্ষক নিয়োগের কথা থাকলেও এটি হচ্ছে না বলে জানায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।

এসময় বলা হয়, বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত পদ অনুসারে ৩২ হাজার ৫৭৭ পদেই নিয়োগ দেয়া হবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে চূড়ান্ত ফল প্রকাশের অপেক্ষায় থাকা প্রার্থীরা পদসংখ্যা বাড়নোর দাবিতে মানববন্ধনও করেন।

এরমধ্যেই গতকাল গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রকৃত শূন্যপদ যাচাই-বাছাই করে আরও পাঁচ হাজার সহকারী শিক্ষকের পদসংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আগামী ১৪ ডিসেম্বর ৩৭ হাজার ৫৭৭ জনের চূড়ান্ত ফলাফল দেয়া হবে। বিগত ২০২০ সালের ২০ অক্টোবর সহকারী শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।

এরপর ২৫ অক্টোবর নিয়োগ পরীক্ষার আবেদন শুরু হয়। শেষ হয় ২৪ নভেম্বর। ৩২ হাজার ৫৭৭টি পদের জন্য আবেদন করেন ১৩ লাখ ৯ হাজার ৪৬১ জন। প্রতি পদের বিপরীতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন ৪০ জন। সহকারী শিক্ষকের মোট ৩২ হাজার ৫৭৭টি শূন্য পদের মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ে ২৫ হাজার ৬৩০ জন এবং প্রাথমিক পর্যায়ে ছয় হাজার ৯৪৭ জনকে নিয়োগ দেয়া হবে। বিজ্ঞপ্তিতে ৩২ হাজার ৫৭৭ পদে শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার কথা থাকলেও পরে এটি বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল।

চলতি বছরের মার্চে মন্ত্রণালয়ের এক সভায় সাংবাদিকদের বলা হয়েছিল, ৪৫ হাজার সহকারী শিক্ষক নেয়া হবে। অবসরের কারণে ১০ হাজারের বেশি পদ খালি হওয়ায় পদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। এতে সিদ্ধান্ত হয়, অবসরজনিত কারণে বিজ্ঞপ্তির বাইরে আরও ১০ হাজারেরও বেশি সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য হয়েছে।

এতে  বিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষক ঘাটতি দেখা দিয়েছে, যা পাঠদান কার্যক্রমকে ব্যাহত করছে। এ সমস্যা নিরসনে মন্ত্রণালয় আগের বিজ্ঞপ্তির শূন্যপদ এবং বিজ্ঞপ্তির পরের শূন্যপদ মিলিয়ে প্রায় ৪৫ হাজার সহকারী শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। প্রায় এক লাখ ৫১ হাজার প্রার্থীর ভাইভা নেয়া হয়। প্রাথমিকের ইতিহাসে বড় এই নিয়োগে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা তিন ধাপে নেয়া হলেও চূড়ান্ত ফল এক সাথেই প্রকাশ করা হবে। 

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, যেহেতু এটি একক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, তাই লিখিত ও মৌখিক তিন ধাপে নেয়া হলেও চূড়ান্ত ফল একসাথে প্রকাশ করা হচ্ছে। এ নিয়োগে প্রথম ধাপের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ৪০ হাজার ৮৬২ জন, দ্বিতীয় ধাপে ৫৩ হাজার ৫৯৫ এবং তৃতীয় ধাপে ৫৭ হাজার ৩৬৮ জন। চাকরির জন্য আবেদন করেছিলেন ১৩ লাখ ৯ হাজার ৪৬১ প্রার্থী। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয় শাখার এক কর্মকর্তা আমার সংবাদকে জানান, গত নভেম্বরে ফল প্রকাশের কথা ছিল। তবে অনলাইন বদলিতে একটু সমস্যা থাকার করণে এটি থেমে যায়। এখন ফাইনালি শূন্যপদ যাচাই-বাছাই করে প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষকের পদ বাড়ানো হয়েছে। আগামী ১৪ ডিসেম্বর চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হবে বলেনও জানান তিনি।  

এদিকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে চলমান নিয়োগপ্রক্রিয়ায় ৫৮ হাজার নিয়োগের দাবিতে মানববন্ধন করছেন চূড়ান্ত ফল প্রকাশের অপেক্ষায় থাকা প্রার্থীরা। রাজধানী ঢাকাসহ কয়েকটি জেলায় মানবন্ধন করেছেন তারা। এই দাবিতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি দিয়েছেন চাকরিপ্রার্থীরা।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, অনুমোদনকৃত পদ ৩২ হাজার ৫৭৭টি হলেও করোনার দুই বছরে অবসরের কারণে ১০ হাজারের বেশি পদ শূন্য থাকায় ৫৮ হাজারের প্রার্থী নিয়োগ দেয়ার কথা বলেছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিদায়ী সচিব। কিন্তু এখন পদ সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে না। এটি করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত বেকারদের জন্য অত্যন্ত হতাশাজনক। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বলা আছে, শূন্য পদে নিয়োগ দেয়া হবে। তাহলে কেন এই ১০-১৫ হাজার অবসরজনিত শূন্য পদে নিয়োগ নিশ্চিত করা হবে না।