বহুল প্রতীক্ষার পর চালু হলো দেশের প্রথম মেট্রোরেল। প্রধানমন্ত্রী ও আ.লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎচালিত এ মেট্রোরেল চলাচল শুরু হলো। দেশের অন্যতম এই মেগা প্রকল্পের উদ্বোধনীতে আবারও একত্রে দেখা গেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দুই স্বপ্নবাজ কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে। আন্দোলন-সংগ্রাম কিংবা দলীয় সংকটে সব সময় পাশে থেকে সাহসী সহযোগী দিয়ে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা ও প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা।
রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ না থাকলেও নেপথ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। অবশ্য তার সক্রিয় অংশগ্রহণ দেখা গেছে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে। এর আগে দেশের অর্থায়নে সরকারের সবচেয়ে বড় প্রকল্প স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন অনুষ্ঠানেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে তার সঙ্গী হিসেবে ছোট বোন শেখ রেহানাকে পাশে রেখেছেন। রাজনীতিতে শেখ হাসিনা ‘আপা’ হিসেবে পরিচিত আর শেখ রেহানা ‘ছোট আপা’ হিসেবে পরিচিত হয়ে আসছে। গতকাল বুধবার উদ্বোধনের পর টিকিট কেটে প্রথম যাত্রী হিসেবে মেট্রোরেলে ওঠেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা। আর এর-ই মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করে দেশের প্রথম মেট্রোরেল।
শেখ রেহানাকে বিশেষায়িত করলেন ওবায়দুল কাদের : মেট্রোরেল উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত সুধী সমাবেশে শেখ রেহানাকে নতুন করে বিশেষভাবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন আ.লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়েদুল কাদের। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানা উপস্থিতি ছিলেন।
মেট্রোরেল উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা-ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর ছোটকন্যা শেখ রেহানাকে বিশেষভাবে সম্বোধন করেন এবং পরিচয় করিয়ে দেন সেতুমন্ত্রী। উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের সি-ব্লকের খেলার মাঠে মেট্রোরেল উদ্বোধন উপলক্ষে এই সুধী সমাবেশ হয়। ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের আজকের অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনার পাশে যিনি বিশেষ অতিথি বসে আছেন, তিনি বঙ্গবন্ধুর আরেক কন্যা।
বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব যেমন সংকটে বঙ্গবন্ধুর পরিবার ও পার্টিকে সামলিয়েছেন, তেমনি সংকটে শেখ হাসিনার পাশে সাহসী সহযোদ্ধার নাম শেখ রেহানা। এ সময় শেখ রেহানা চেয়ার উঠে দাঁড়িয়ে সবাইকে হাত উঁচিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এসময় শেখ রেহানার বড় বোন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাততালি দেন।
শেখ রেহানা সম্পর্কে কাদের বলেন, তিনি সাদাসিধা জীবন যাপন করেন। লন্ডন সিটিতে চাকরি করেন। বাসে চড়ে যাতায়াত করেন। আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক এর আগেও শেখ হাসিনা বা শেখ রেহানাকে নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। কিছু দিন আগে তিনি বলেন, যে বুলেট বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে এতিম করেছে, সেই বুলেটই বেগম খালেদা জিয়াকে বিধবা করেছে। জেনারেল জিয়া যদি বঙ্গবন্ধু হত্যার সাথে জড়িত না থাকত তাহলে অন্য একটি খুনিচক্র তাকে হত্যা করার দুঃসাহস করত না। ইতিহাস বড়ই নির্মম, সেদিন বাঁচতে পারেননি জেনারেল জিয়াউর রহমান। বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যাকে এক সাথে বিভিন্ন সামাজিক, পারিবারিক ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে দেখা গেছে।
এর আগে বাবা বঙ্গবন্ধুর কবর জিয়ারতে টুঙ্গিপাড়া যাওয়ার পথে পদ্মা সেতুতে ১৪ হাজার ৬৫০ টাকা টোল দেন শেখ রেহানা। চতুর্থবারের মতো পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে টুঙ্গিপাড়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে জানান শ্রদ্ধা। এবার যাত্রাপথে মাঝ সেতুতে না নামলেও গাড়িতে বসেই উপভোগ করেন সৌন্দর্য।
৭ অক্টোবর সকালে পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাতে সড়ক পথে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া আসার পথে পদ্মা সেতুতে অবস্থান করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ছোট বোন শেখ রেহানা। এসময় একটি সাদা খামে করে পদ্মা সেতুর টোলের টাকা তুলে দেন শেখ রেহানা। আর এমন একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এছাড়া গত বছরের শেষ দিন ছোট বোন শেখ রেহানাকে সাথে নিয়ে স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে হাঁটলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গতকাল সকাল সাড়ে ৭টায় সড়কপথে গণভবন থেকে সরাসরি পদ্মাপাড়ে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে পদ্মা সেতুর ৭ নম্বর পিলার থেকে ১৮ নম্বর পিলার পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার হেঁটে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার আগে গত বছর ২৮ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া থেকে ঢাকায় ফেরার সময় আকাশপথে পদ্মা সেতু দেখেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তখন হেলিকপ্টার থেকে তিনি সেতুর ভিডিও ধারণ করেন নিজের মোবাইল ফোনে। এ সময় তার পাশে ছিলেন ছোট বোন শেখ রেহানা। এর আগে গত বছরের ১৭ মার্চ টুঙ্গিপাড়া আসা-যাওয়ার পথে হেলিকপ্টার থেকে সরাসরি পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ দেখেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তখন পদ্মা সেতুর পূর্ণাঙ্গ কাঠামো নির্মাণকাজ শেষ হয়নি।
১৯৭৫ সাল। কিশোরী শেখ রেহানা। পুরো পরিবার নিহত হওয়ার কথা শুনে নিজের জন্যও মৃত্যু কামনা করেছিলেন। তবে এরপর দিনে দিনে নিজেকে সামলে নিয়েছেন তিনি। ঘুরে দাঁড়িয়েছেন বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা। শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। লন্ডনে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন শেখ রেহানা। দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হয়েও কখনো রাজনীতিতে আসেননি শেখ রেহানা। তবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন-সংগ্রামে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ সক্রিয় রাজনীতিবিদদের অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতা দিয়ে গেছেন সবসময়।
এসব আন্দোলন-সংগ্রাম এবং আওয়ামী লীগের প্রতিটি সংকটে বড় বোন শেখ হাসিনার পাশে থেকে সহযোগিতা করে গেছেন শেখ রেহানা। দেশ ও জাতির কল্যাণে অনেকটা নেপথ্যে থেকেই ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুর এই কনিষ্ঠ কন্যা। জনহিতৈষী কাজেও সবসময়ই ভূমিকা রয়েছে শেখ রেহানার। মানবিক হূদয়ের জন্য মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন শেখ রেহানা। যিনি সাধারণ হয়েও অসাধারণ।
এছাড়া ধানমন্ডিতে তার নামে বরাদ্দ বাড়িটিও দিয়েছেন দেশের কাজে। বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা সবার কাছে ‘ছোট আপা’ বলে পরিচিত। ২০০৭ সালে সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে (সংস্কারের নামে) যে বিভক্তিকরণ দেখা দিয়েছিল, তা রুখতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলেন শেখ রেহানা। শেখ হাসিনা তখন জেলে। ওই সময়ে পর্দার অন্তরালে থেকে দলের ঐক্য বজায় রাখতে ব্যাপক ভূমিকা নিয়েছিলেন শেখ রেহানা। দেশি-বিদেশি মিডিয়ায় তুলে ধরেছেন সাহসী উচ্চারণ।
এছাড়া পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রামাণ্যচিত্র ‘হাসিনা : এ ডটারস টেল’-এ শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি যখন রাজনীতি শুরু করি, তখন জয় ও পুতুলের ভবিষ্যৎ শিক্ষার বিষয়টি চিন্তা করে তাদের বাইরে পড়তে পাঠানোর বিষয়ে শেখ রেহানার ছিল অনমনীয় সিদ্ধান্ত। উল্লেখ্য, এমআরটি লাইন-৬ প্রাক্কলিত ব্যয় (দ্বিতীয় সংশোধিত) হচ্ছে ৩৩ হাজার ৪১৭ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। যার মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দিয়েছে ১৩ হাজার ৭৫৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা এবং জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) সহজ শর্তে ১৯ হাজার ৭১৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকার ঋণ দিয়েছে।