রাজনীতিতে ঢাকা উত্তাপ

আবদুর রহিম প্রকাশিত: জুলাই ১৭, ২০২৩, ১১:৩৯ পিএম
রাজনীতিতে ঢাকা উত্তাপ
  • আজ বিএনপির পদযাত্রা আ.লীগের পালটা শোভাযাত্রা 
  • দু’দলের পালটাপালটিতে চলে না গাড়ি, মানুষের ভোগান্তি  
  • ঢাকায় বিএনপির ব্যাপক প্রস্তুতি আ.লীগও শক্তি দেখাবে  

পালটাপালটি কর্মসূচিতে রাজনীতির মাঠ আবারও উত্তপ্ত হচ্ছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নিজের দাবি আদায়ে অনড়। কেউ কাউকে ছাড় দিচ্ছে না। এবার সরকারবিরোধীদের টার্গেট ঢাকা। গত ডিসেম্বর থেকে পালটাপালটি কর্মসূচিতে গরম হাওয়া বইলেও এবার সংঘাতেরও আশঙ্কা করা হচ্ছে। সর্বশেষ গত ১২ জুলাই সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে সমমনা দল ও জোটকে সাথে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা দেয় বিএনপি। একই দিন আওয়ামী লীগ পালটা এক দফা ঘোষণা করে— শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন। ওইদিন এক দফা দাবিতে ঢাকাসহ দেশের জেলা ও মহানগরে দুদিনের পদযাত্রা কর্মসূচির ঘোষণা দেয় বিএনপি। আওয়ামী লীগও পালটা শান্তি ও উন্নয়ন শোভাযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণা দেয়। 

আজ মঙ্গলবার দুই দলের পালটাপালটি এই কর্মসূচি নিয়ে সধারণ মানুষও উদ্বিগ্ন। মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকছে। হেঁটে যেতে হচ্ছে অফিসে। গত ১২  জুলাই ঢাকার মানুষকে নজিরবিহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। আওয়ামী লীগের সমাবেশ ছিল বায়তুল মোকাররমে আর বিএনপির সমাবেশ ছিল নয়াপল্টনে। নারায়াণগঞ্জ থেকে হেঁটে অনেকে ঢাকায় ঢুকেছেন— এমন দৃশ্যপটও দেখা গেছে। আগামীতে সাধারণ নাগরিকের কষ্ট আরো বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

জানা গেছে, কর্মসূচি সফল করতে দুই দলই বেশ প্রস্তুতি নিয়েছে। নেতাকর্মীদের সংযত থাকতে নির্দেশ দিয়েছে আওয়ামী লীগ, যাতে কোনো ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি না হয়। গত রোববার বিভিন্ন মার্কেট ও সড়কে চলাচলকারী যানবাহনের যাত্রীদের মধ্যে লিফলেট বিতরণ করে বিএনপি। বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার ঢাকায় সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত পদযাত্রা চলবে। পদযাত্রা শুরু হওয়ার আগে  সংক্ষিপ্ত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সভাপতিত্ব করবেন ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান। প্রথম দিনের পদযাত্রা শেষ হওয়ার কথা রয়েছে পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজার মোড়ে। এছাড়া জেলা শহরেও পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করা হবে। আর বুধবার শুধু ঢাকায় এ কর্মসূচি হবে। এদিন আবদুল্লাহপুর থেকে পদযাত্রা শুরু হয়ে শেষ হওয়ার কথা যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায়।
নেতারা জানান, এক দফা আন্দোলনের এই প্রথম কর্মসূচি নিয়ে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি। যুগপৎ আন্দোলনের অন্য শরিক দলগুলোও প্রস্তুতি নিয়েছে। পদযাত্রা কর্মসূচি সফল করতে এরই মধ্যে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে গণসংযোগ করছেন, প্রস্তুতি বৈঠক করছেন বিএনপি ও অঙ্গদলের নেতারা। লন্ডন থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে এ বিষয়ে মতবিনিময় করছেন।

এদিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের কার্যালয়ে যায় বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল। সেখানে তারা মঙ্গলবারের পদযাত্রা কর্মসূচির বিষয়ে পুলিশের সঙ্গে আলোচনা করে। আলোচনা শেষে বের হয়ে দলটির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী বলেন, এখানে ( পদযাত্রা কর্মসূচিতে পুলিশের অনুমতির খুব একটা প্রয়োজন পড়ে না। মৌখিক আলোচনা হয়েছে। পুলিশ সহযোগিতা করবে বলে জানিয়েছে। এ ছাড়া মাইকিং থেকে বিরত থাকতে বলেছে। উনারা (পুলিশ) বলেছে, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে প্রচার চালাতে, লিফলেট বিতরণ করতে।

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব পদযাত্রার রুট অবহিত করেছেন। তিনি রুটটি একটু পরিবর্তন করার অনুরোধ জানিয়েছেন। সেই অনুযায়ী আমরা পরিবর্তন করেছি। নির্বাচন কমিশনার আগারগাঁও পরিকল্পনা কমিশন বাদ দিয়ে রুট করতে বলেছেন। আমরা তাতে সায় দিয়েছি। এখন মঙ্গলবারের পদযাত্রার রুট হচ্ছে— গাবতলী, টেকনিক্যাল মোড় হয়ে মীরপুর-১, মীরপুর-১০ গোলচত্বর, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, তালতলা, বিজয় সরণি, কারওয়ান রাজার, এফডিসি গেট, মগবাজার, মালিবাগ, কাকরাইল, নয়াপল্টন, ফকিরাপুল, মতিঝিল (শাপলা চত্বর), ইত্তেফাক মোড়, দয়াগঞ্জ হয়ে রায়সাহেব বাজার মোড় গিয়ে শেষ হবে। তিনি বলেন, গাবতলী থেকে পদযাত্রা শুরু করবে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি।

মগবাজারে থেকে পদযাত্রায় যুক্ত হবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি। ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ বলেন, এক দফা আন্দোলনের প্রথম কর্মসূচিকে সফল করতে লোকসমাগমে আমাদের ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে। এ কর্মসূচিতে দলের নেতাকর্মী পাশাপাশি জনগণেরও অংশগ্রহণ থাকবে। যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলোও পদযাত্রার রুট দিয়েছে। গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক জানিয়েছেন, তাদের জোট মঙ্গলবার বেলা ১১টায় ঢাকায় মীরপুর ১২ নম্বর থেকে, বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে পদযাত্রা শুরু করবে। ১২ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা সৈয়দ এহসানুল হুদা জানিয়েছেন, তাদের জোট মঙ্গলবার আড়াইটায় কাকরাইল থেকে এবং বুধবার ৩টায় কমলাপুর থেকে পদযাত্রা শুরু করবে। লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি মঙ্গল ও বুধবার দুপুর ১২টা থেকে এফডিসির কাছে দলীয় অফিসের সামনে থেকে পদযাত্রা শুরু করবে বলে জানিয়েছেন দলের যুগ্ম মহাসচিব সালাউদ্দিন রাজ্জাক।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস সালাম বলেছেন, ব্যবসায়ী নয়, ঋণখেলাপি এবং হত্যাকারীরাই এ সরকারকে আবার ক্ষমতায় বসাতে চায়। রোববার নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু করে বিভিন্ন মার্কেট ও রাস্তায় চলাচলকারী যানবাহনের যাত্রীদের কাছে লিফলেট বিতরণ শেষে তিনি এসব কথা বলেন। 

মঙ্গল ও বুধবার শান্তি ও উন্নয়ন শোভাযাত্রা করবে আওয়ামী লীগ। পাল্টা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকলেও সংঘাত বা অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়িয়ে সংযতভাবে কর্মসূচি পালন করতে দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দলটির নেতারা জানান, শান্তি ও উন্নয়ন শোভাযাত্রায় সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের চিত্র তুলে ধরা হবে। এ ছাড়া বরাবরের মতো এসব কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের সজাগ ও সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে কেন্দ্র থেকে। কেউ যেন হটকারী আচরণ করে বিরোধীদের হাতে কোনো ধরনের ইস্যু সৃষ্টির সুযোগ করে না দেয়, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ জন্য সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণ করারও নির্দেশ দেয়া হয়। তবে বিরোধীদের কর্মসূচি থেকে অপ্রীতিকর কোনো ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টা করা হলে তা জনগণকে নিয়ে প্রতিহত করা হবে বলে জানানো হয়। 

১৮ ও ১৯ জুলাই শান্তি ও উন্নয়ন শোভাযাত্রা কর্মসূচি নির্ধারণসহ আগামী দিনের কর্মসূচি ঠিক করতে গত শুক্রবার ঢাকা মহানগর ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বসেন ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। ওই বৈঠক থেকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন থেকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর পর্যন্ত এবং উত্তরের উদ্যোগে ১৯ জুলাই বিকেলে রাজধানীর সাতরাস্তা থেকে মহাখালী পর্যন্ত শান্তি ও উন্নয়ন শোভাযাত্রা কর্মসূচি পালনের নির্দেশ দেয়া হয়। ওই বৈঠকেই নেতাকর্মীদের সংযতভাবে এসব কর্মসূচি পালনের নির্দেশ দেয়া হয়।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে আছি। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে নানা ধরনের কর্মসূচি দেবো। নির্বাচন বানচাল করার ষড়ষন্ত্রের চেষ্টায় যেকোনো কর্মসূচি প্রতিহত করতেও আমরা কঠোর কর্মসূচি দেবো। শান্তি সমাবেশ জনসংযোগসহ অন্যান্য সভা-সমাবেশ কর্মসূচি নিয়মিত চলতে থাকবে। এদিকে নগরের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এরই মধ্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তরের পক্ষ থেকে বর্ধিতসভা করে থানা, ওয়ার্ড ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিভিন্ন ধরনের দিকনির্দেশনা আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে আছি। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে নানা ধরনের কর্মসূচি দেবো। নির্বাচন বানচাল করার ষড়ষন্ত্রের চেষ্টায় যেকোনো কর্মসূচি প্রতিহত করতেও আমরা কঠোর কর্মসূচি দেবো। শান্তি সমাবেশ জনসংযোগসহ অন্যান্য সভা-সমাবেশ কর্মসূচি নিয়মিত চলতে থাকবে।

এদিকে নগরের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এরই মধ্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তরের পক্ষ থেকে বর্ধিতসভা করে থানা, ওয়ার্ড ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিভিন্ন ধরনের দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। গত ১২ জুলাই শান্তি সমাবেশে ব্যানার নিয়ে বিড়ম্বনার বিষয়টি মাথায় রেখে শান্তি ও উন্নয়ন শোভাযাত্রার কর্মসূচিতে ব্যানার আনতে নিষেধ করা হয়েছে। শুধু প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুনের মাধ্যমে সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরতে বলা হয়েছে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণে সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী বলেন, আমরা বর্ধিতসভা করে নেতাকর্মীদের সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণভাবে যথাসময়ে শান্তি ও উন্নয়ন শোভাযাত্রায় যোগ দিতে বলেছি।