অসুস্থ খালেদায় উদ্বিগ্ন বিএনপি

আবদুর রহিম প্রকাশিত: আগস্ট ১৭, ২০২৩, ১২:৩৭ এএম
অসুস্থ খালেদায় উদ্বিগ্ন বিএনপি
  • ফুসফুসে পানি জমে স্বাস্থ্যের অবনতি, রয়েছেন সিসিইউতে
  • রক্তের হিমোগ্লোবিন, প্রেশার ডায়াবেটিস ওঠানামা করছে
  • দোয়া মাহফিল পালন, আজ লিফলেট বিতরণ, শনিবার পদযাত্রা

খালেদা জিয়া হাসপাতালে মৃত্যুর দিন গুনছেন
—মির্জা ফখরুল ইসলাম

খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে
—আমীর খসরু মাহমুদ

ভালো নেই খালেদা জিয়া। হঠাৎ শারীরিক নানা জটিলতা দেখা দিয়েছে। মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব। বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতারাই চিকিৎসকের বরাত দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানাচ্ছেন খালেদা জিয়া খুবই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তার জ্বর বেড়েছে। লিভার সমস্যা দেখা দিয়েছে। এখনি যদি তাকে  অ্যাডভান্স সেন্টারে পাঠানো না হয় তাহলে যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এ নিয়ে গতকাল বুধবার ঢাকাসহ দেশের সব জেলা ও মহানগরে দোয়া মাহফিল করে খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সারা দেশে লিফলেট বিতরণ করে মুক্তি চাওয়া হবে এবং শনিবার ঢাকাসহ সারা দেশে জেলা ও মহানগরে পদযাত্রাও করবে দলটি। এতেও যদি খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যেতে সরকার নরম না হয় তাহলে খালেদা জিয়ার ইস্যুতে আরো শক্ত কর্মসূচি চিন্তা করছে দলটি। 

খালেদা জিয়ার চিকিৎসকরা বলেছেন, প্রতিদিনই খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের একাধিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। লিভারের মতো জটিল সমস্যার শতভাগ চিকিৎসা এ দেশে সম্ভব না হওয়ায় তাদের কিছু জটিলতা সমাধান করতে সম্মুখীন হতে হচ্ছে।  রক্তের হিমোগ্লোবিন, প্রেসার, ডায়বেটিসসহ স্বাস্থ্যের প্রায় সবকটি প্যারামিটারই উঠানামা করছে। অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে তা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা চলছে। তবে পুরোপুরি সম্ভব হচ্ছে না। অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগের মাধ্যমে অন্যান্য জটিলতা নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছেন তারা। ফুসফুসে পানি জমে স্বাস্থ্যের অবনতি হলে মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশে সিসিইউ সুবিধাযুক্ত কেবিনে তাকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এ নিয়ে খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানান, খালেদা জিয়াকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। ভালো-মন্দ নিয়ে এখনই বলার সময় আসেনি। একেবারে ভালো; একেবারে খারাপ কোনোটিই বলা সম্ভব নয়। তার যে উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন, এখানে তা সম্ভব হচ্ছে না।’ 

ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব)  প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম বলেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে গভীর উদ্বেগ রয়েছে। খালেদা জিয়া শারীরিকভাবে অত্যন্ত অসুস্থ। খালেদা জিয়াকে বাঁচাতে হলে বিদেশে অ্যাডভান্স সেন্টারে নিয়ে ট্রিটমেন্ট অতি জরুরি। তার চিকিৎসক দল তার অসুস্থতার যে বিবরণ দিয়েছেন, তা খুবই উদ্বেগজনক। আমরা মনে করি, দেশের একজন শীর্ষ রাজনীতিক, একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিক, একজন নারী হিসেবে উপরন্তু একজন জেলবন্দি ব্যক্তির যথাযথ সুচিকিৎসা পাওয়া ন্যূনতম মানবাধিকারের অংশ। তার মৌলিক অধিকার ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা জাতি হিসেবে আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। 

এ নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, খালেদা জিয়া খুবই অসুস্থ। চিকিৎসকরা উদ্বেগের খবর জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমাদের নেত্রী ভীষণ অসুস্থ। এ পরিস্থিতেও সরকার খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করছে না। তিনি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে মৃত্যুর দিন গুনছেন।’ বিএনপির আমলে আওয়ামী লীগের কোনো সিনিয়র নেতাকে অকারণে জেলে যেতে হয়নি। এমনকি তাদের সাধারণ সম্পাদককেও কোনো দিন জেলে যেতে হয়নি। তাদের দলের প্রধান শেখ হাসিনাকেও জেলে যেতে হয়নি। অথচ বিএনপির প্রধান, দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী, তিনি দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে কারাগারে আছেন।’ 

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত বিদেশে না পাঠালে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচির ঘোষণা করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, উন্নত চিকিৎসা না দিয়ে খালেদা জিয়াকে আজ মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের দায়ভার বহন করতে হবে। সামনে আন্দোলনের কঠোর কর্মসূচি আসছে। সবাইকে সাংগঠনিকভাবে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি ।

গত ৮ আগস্ট সন্ধ্যায় খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, চোখের সমস্যাসহ বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছেন। হাসপাতালে তার সঙ্গে আছেন গৃহপরিচারিকা ফাতেমা আক্তার ও স্টাফ রূপা। মাসুদ নামের নিরাপত্তারক্ষী গুলশানের বাসা ফিরোজা থেকে খাবার নিয়মিত হাসপাতালে পৌঁছে দিচ্ছেন বলে জানা গেছে।