- দুপুর থেকে মুখে কালো কাপড় বেঁধে শহীদ মিনারে অবস্থান
- আবেদন ফি সর্বোচ্চ ২০০ টাকা ও মামলা প্রত্যাহারের দাবি
- শাহবাগ থানা ঘেরাওয়ে পুলিশের লাঠিচার্জআহত ৫, গ্রেপ্তার ৩
চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ সহ চার দফা দাবিতে টানা ১০ দিনের মতো আন্দোলনে রয়েছেন চাকরিপ্রার্থীরা। গতকাল দুপুর ২টা থেকে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মুখে কালো কাপড় বেঁধে আন্দোলনে নামেন তারা। এ সময় মুহুর্মুহু স্লোগানে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ মুখরিত ছিল। চাকরিপ্রার্থীদের স্লোগান ছিল : ৩০-এর শৃঙ্খল ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও; এক-দুই-তিন-চার ৩৫ আমার অধিকার; এক দফা এক দাবি ৩৫ আমার প্রাণের দাবি; আর নয় কালক্ষেপণ এবার চাই প্রজ্ঞাপন।
এরপর বিকালে শাহবাগ থানা ঘেরাও করতে গেলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। এর ফলে পাঁচজন আহত হওয়ার কথা জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। আন্দোলনের আহ্বায়কসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। চাকরিপ্রার্থীরা বলেন, টানা ১০ দিন লাগাতার আন্দোলনে থাকলেও প্রশাসনের কেউ আমাদের দেখতে আসেননি। সেজন্য আমরা আজ রাজপথে নেমেছি।
জানা যায়, বয়সসীমা বৃদ্ধির দাবিতে গত ৩০ আগস্ট থেকে আন্দোলন করছেন চাকরিপ্রার্থীরা। ১০ম দিন বন্ধের দিন হওয়ায় বিপুলসংখ্যক চাকরিপ্রার্থীর উপস্থিতি দেখা গেছে। গত কদিনে সামাজিকমাধ্যম ও ব্যক্তিগত যোগাযোগে এ দিনকে টার্গেট করে আন্দোলনে নামেন তারা। বিকালে শাহবাগ থানার গণগ্রেপ্তার হতে যান। সেখানে তারা জুন মাসের মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানোর কথা থাকলেও পুলিশের লাঠিচার্জে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পুলিশের লাঠিচার্জের ফলে পাঁচজন আহতের খবর জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। এরপর সন্ধ্যায় রাজু ভাস্কর্যের সামনে সংবাদ সম্মেলন করেন তারা। চাকরিপ্রার্থীদের চার দফা দাবি হলো— চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ ও অবসরের বয়সসীমা বৃদ্ধি; আবেদন ফি সর্বোচ্চ ২০০ টাকা; ঢাবির আইন অনুষদে বঙ্গবন্ধু ল কমপ্লেক্স, বঙ্গবন্ধু চেয়ার ও একটি ম্যুরাল স্থাপন এবং চাকরিপ্রার্থীদের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার।
আন্দোলনে অংশ নেয়া সুফিয়ান আহমেদ বলেন, চাকরির বয়সসীমা আন্দোলনের জন্য দীর্ঘদিন ধরে আমরা আন্দোলন করে আসছি।
গত জুন মাসে আমাদের আন্দোলনের সঙ্গে মুঠোফোনে জনপ্রশাসনমন্ত্রী মৌখিকভাবে একমত পোষণ করেন। কিন্তু ওইদিন সন্ধ্যায় আমাদের ওপর আক্রমণ করে গ্রেপ্তার করে আমাদের ৪০০ থেকে ৫০০ মানুষের নামে মামলা করা হয়। দাবি জানানো আমাদের অধিকার। আমাদের কেন বাধা দেয়া হয়। আন্দোলনের যৌক্তিকতা তুলে ধরে শামীমা সুলতানা বলেন, করোনার পর থেকে সেশনজট এক স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। আমাদের স্নাতক শেষ হতে ২৬ থেকে ২৭ বছর সময় লাগে। চাকরির আবেদনে আমরা তিন থেকে চার বছর সময় পাই। এ স্বল্পসময়ে অনেকেই চাকরি পান না। পৃথিবীর সব দেশে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫-এর বেশি।
চাকরির আবেদন ফি কমানো এবং অন্য দাবির বিষয়ে নাসির খান বলেন, বেকার হিসেবে যেখানে সরকার আমাদের সহযোগিতা করা উচিত, সেখানে উল্টো আবেদন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। আমরা চাই আবেদন ফি থাকুক কিন্তু সেটা সর্বোচ্চ ২০০ টাকা হোক। এর বেশি হলে আমাদের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। উল্লেখ্য, সরকারি চাকরিতে বয়সসীমা বৃদ্ধির ব্যাপারে দীর্ঘ ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে দাবি জানিয়ে আসছে চাকরিপ্রত্যাশীদের একটি অংশ। কিন্তু বিভিন্ন সময় দাবি মানার আশ্বাস দিলেও এ দাবি মানা হচ্ছে না। সম্প্রতি এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরও তিন দফা দাবি।