- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন
- প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৭টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলবে
- সর্বোচ্চ গতি ১০০ কিলোমিটার
- এমআরটি লাইন-৫ উত্তরা রুটের কাজও উদ্বোধন করা হবে
রাজধানীর যানজট নিরসন ও যাতায়াতে ভোগান্তি কমাতে দেশের প্রথম মেট্রোরেল নির্মাণ করা। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত রেল চলাচল চালু হলেও নির্মাণকাজ বিলম্বের কারণে চালু হয়নি মতিঝিল স্টেশন। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আজ শনিবার বেলা আড়াইটায় মেট্রোরেলের আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পাশাপাশি এমআরটি লাইন-৫-এর আওতায় হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার পাতাল রেল আর সাড়ে ছয় কিলোমিটার উড়াল সড়ক নির্মাণকাজের উদ্বোধনও করবেন তিনি। মেট্রোরেল প্রতি ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী এবং প্রতিদিন পাঁচ লাখ যাত্রী বহন করতে সক্ষম হবে এবং প্রতি চার মিনিট পরপর প্রতিটি স্টেশনে একটি ট্রেন থামবে। ট্রেনে দুই হাজার ৩০৮ জন যাত্রী ধারণক্ষমতা রয়েছে। যার সর্বোচ্চ গতি ১০০ কিলোমিটার।
উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত আজ মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ থাকার ব্যাপারে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএনএ সিদ্দিক বলেন, মতিঝিল অংশের উদ্বোধনের কার্যক্রমের কারণে আজ শনিবার উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত নিয়মিত মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ থাকবে। এ লাইন হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা হয়ে গাবতলী, মিরপুর-১০, গুলশান পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার হবে। ৪১ হাজার ২৩৯ কোটি টাকার এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০২৮ সালে।
উত্তরা-মতিঝিল রুটে আগামীকাল রোববার থেকে প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৭টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত মেট্রোরেল নিয়মিত চলাচল করবে। বেলা সাড়ে ১১টার পর মতিঝিল-আগারগাঁও রুটে মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ থাকবে। উত্তরা-আগারগাঁও সেকশনে রেল চলবে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত। আগারগাঁও থেকে মতিঝিল সেকশনের দৈর্ঘ্য আট দশমিক ৭২ কিলোমিটার। তাছাড়া উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ১৬টি স্টেশন রয়েছে। নির্মাণ ও আনুষঙ্গিক কিছু কাজ বাকি থাকায় প্রথম পর্যায়ে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত চার ঘণ্টা চলবে রেল। মতিঝিল থেকে আগারগাঁও অংশে শুধু মতিঝিল, সচিবালয় ও ফার্মগেট— এই তিন স্টেশনে থামবে মেট্রোরেল। প্রতি ১০ মিনিট পরপর ট্রেন ছাড়বে। আপাতত বিজয় সরণি, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ সচিবালয় স্টেশনে মেট্রোরেল থামবে না।
জানা গেছে, এমআরটি লাইন-৬ প্রকল্পটি ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ১৯ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা দিচ্ছে জাইকা। বাকি ১৩ হাজার ৭৫৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা বহন করছে বাংলাদেশ সরকার। মেট্রোরেল নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১২ সালের ১৮ ডিসেম্বর একনেকে অনুমোদন দেয়া হয়। যদিও নির্মাণকাজের শুরুতে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। গত ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অংশের বাস্তব কাজ শেষ হয়েছে ৯৮ দশমিক ০৮ শতাংশ। ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ জানায়, নির্মাণ ও আনুষঙ্গিক কিছু কাজ বাকি থাকায় মতিঝিল লাইনে পুরোদমে ট্রেন চালু হতে আরও কিছু সময় লাগবে।
এতে প্রতিদিন গড়ে ৮৫ হাজার যাত্রী যাতায়াত করতে পারবেন। মতিঝিল-কমলাপুর পর্যন্ত পুরোদমে চালু হলে প্রতি ঘণ্টায় ৬০ হাজার এবং প্রতিদিন ছয় লাখ ৭৭ হাজার যাত্রী যাতায়াত করতে পারবেন এ ট্রেনে। সময় সাশ্রয়ের (টাইম কস্ট) কারণে দৈনিক প্রায় আট কোটি ৩৮ লাখ টাকা এবং গাড়ির অপারেশন খরচ বাবদ আরও এক কোটি ১৮ লাখ টাকা সাশ্রয় হবে; যা জিডিপির প্রবৃদ্ধি বাড়াতে সহায়ক হবে। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০ টাকা। উত্তরা থেকে পল্লবী ও মিরপুর-১১ পর্যন্ত ৩০ টাকা, মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া ৪০ টাকা, শেওড়াপাড়া ৫০ টাকা এবং আগারগাঁও পর্যন্ত ৬০ টাকা ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু হওয়ার পর উত্তরা থেকে আগারগাঁও-বিজয় সরণি পর্যন্ত ৬০ টাকা, ফার্মগেট ৭০ টাকা, কারওয়ান বাজার-শাহবাগ ৮০ টাকা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রেস ক্লাব (বাংলাদেশ সচিবালয়) পর্যন্ত ৯০ টাকা এবং মতিঝিল পর্যন্ত ১০০ টাকা আদায় করা হবে।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, এমআরটি লাইন-৫, নর্দান রুটের নির্মাণকাজও আজ শনিবার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০২৮ সালের মধ্যে হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা পর্যন্ত ১৩ দশমিক পাঁচ কিলোমিটার পাতাল এবং ছয় দশমিক পাঁচ কিলোমিটার উড়ালসহ মোট ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ রুট নির্মাণের লক্ষ্যে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। গেল অক্টোবর পর্যন্ত বিস্তারিত নকশা তৈরির কাজের অগ্রগতি ৯৪ শতাংশ। প্রকল্পটি মোট ১০টি প্যাকেজে ভাগ করে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বিভিন্ন প্যাকেজের চূড়ান্ত ডিজাইন ও আন্তর্জাতিক দরপত্র দলিল প্রণয়নের কাজ চলমান। হেমায়েতপুর ডিপো ও ডিপো অ্যাকসেস করিডোর নির্মাণে ৯৯ দশমিক ২৫ একর ভূমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।