- প্রকল্পটির দৈর্ঘ্য হবে ৩৫ কিলোমিটার
- সম্ভাব্য ব্যয় ৬০ হাজার ৮৩৬ কোটি টাকা
- জাইকা, এডিবি, কোরিয়ান ব্যাংক অনুদানে আগ্রহ দেখাচ্ছে
- সম্ভাব্য নিরীক্ষা শেষ হলে কাজ শুরু হবে
- উড়াল ও পাতাল দুই ধরনের রুটে চলবে রেল
বৈদেশিক অনুদান ও মন্ত্রণালয় হয়ে প্ল্যানিং কমিশনের সিদ্ধান্ত এলে কার্যক্রম শুরু হবে
—আবদুর রউফ, কোম্পানি সচিব, ডিএমটিসিএল
যোগাযোগ ব্যবস্থায় নাগরিক সেবা সহজ করার জন্য এবার রাজধানীর গাবতলী থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত আরও একটি মেট্রো রেললাইন নির্মাণ করা হবে। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) অন্যতম প্রকল্প মেট্রোরেলের ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইন-২ এই কাজ সম্পন্ন করবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। ২০৩০ সালের ডিসেম্বরে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছে এমআরটি লাইন-২ এর কর্তৃপক্ষ। এমআরটি লাইন-২ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৬০ হাজার ৮৩৬ কোটি টাকা। এটি নির্মাণে টেকনিক্যাল স্ট্যান্ডার্ড ফর দ্য মেট্রিরিয়াল ইন বাংলাদেশ-২০১৫ ব্যবহার করা হবে। এই লাইনে কতটি স্টেশন হবে তার সম্ভাব্য নিরীক্ষা সম্পন্ন হওয়ার পর নির্ধারিত করা হবে।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) তৃতীয় প্রকল্প এমআরটি লাইন-২ এর দৈর্ঘ্য হবে ৩৫ কিলোমিটার। গাবতলী থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলা সদর পর্যন্ত রুটে উড়াল ও পাতাল দুই ধরনের রুটে চলবে রেল। প্রকল্পটি গাবতলী থেকে শুরু হয়ে ঢাকা উদ্যান, মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড, ঝিগাতলা, সাইন্স ল্যাবরেটরি, নিউমার্কেট, আজিমপুর, পলাশী, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, গুলিস্তান, মতিঝিল, কমলাপুর-মান্ডা, দক্ষিণগাঁও, ধার্মিকপাড়া, সাইনবোর্ড, ভূইঘর, জালকুঁড়ি ও নারায়ণগঞ্জ জেলা সদরে গিয়ে শেষ হবে। তাছাড়া ব্রাঞ্চ লাইন হিসেবে গুলিস্তান, নয়াবাজার ও সদরঘাট এলাকা পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল করবে।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) সূত্র বলেছে, এমআরটি লাইন-২ এর ডিপো ও ডিপো এক্সেস করিডোর এবং কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড নির্মাণের জন্য ঢাকা জেলার ডেমরা এলাকায় মাতুয়াইল ও ধার্মিকপাড়া মৌজায় গ্রিন মডেল টাউন এবং আমুলিয়া মডেল টাউনের মধ্যবর্তী স্থানে মোট ৬৫ হেক্টর ভূমি চিহ্নিত করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ডেটাইলেইট এরিয়া প্লান (ডেপ) ২০১৬-২০৩৫ এ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সম্ভাব্য গবেষণা করার জন্য উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা অনুসন্ধানের নিমিত্ত প্রিলিমিনারি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রোপোজাল (পিডিপিপি) পরিকল্পনামন্ত্রী চলতি বছরের আগস্টের ৮ তারিখে অনুমোদন করেছেন। সে অনুযায়ী ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের (লাইন-২) পিডিপিপি অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে প্রেরণ করা হয়েছে।
ডিএমটিসিএল সূত্র জানায়, এই লাইন চালু হওয়ার মাধ্যমে ঢাকার যানজট হ্রাস পাবে। ঢাকা মহানগরী ও পার্শ্ববর্তী এলাকার যানজট নিরসন ও পরিবেশ উন্নয়নে দ্রুতগামী, নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত, সময়-সাশ্রয়ী, বিদ্যুৎচালিত, দূরনিয়ন্ত্রিত ও পরিবেশবান্ধব অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর স্মার্ট গণপরিবহন ব্যবস্থা প্রবর্তন করার লক্ষে এমআরটি লাইন-২ এর প্রকল্পের উদ্যোগ নেয়া হয়। এমআরটি লাইন-২ এর সংযুক্ত স্টেশন হিসাবে থাকবে গাবতলী মেট্রোরেল স্টেশনে এমআরটি লাইন-৫: নর্দার্ন রুট ও এমআরটি লাইন-৫: সাউদার্ন রুট, কমলাপুর মেট্রোরেল স্টেশনে এমআরটি লাইন-৬, এমআরটি লাইন-১ ও এমআরটি লাইন-৪ এবং সাইনবোর্ড মেট্রোরেল স্টেশনে এমআরটি লাইন-৪ এর আন্তঃলাইন সংযোগ থাকবে।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) পরিকল্পনা ও উন্নয়ন পরিচালক মো. আব্দুল বাকী মিয়া আমার সংবাদকে বলেন, এখনো পর্যন্ত তেমন কোনো কার্যক্রম শুরু করতে পারিনি। তবে যদি বৈদেশিক অনুদান পাওয়া যায় তাহলে এর কার্যক্রম শুরু হবে। এমআরটি লাইন-২ এর সব ধরনের সম্ভাব্য নিরীক্ষা শেষ হলে তবেই পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। বৈদেশিক সাহায্য ও সব কিছু ঠিক থাকলে পাঁচ বছরের মধ্যে একটি প্রজেক্ট শেষ করা সম্ভব। তাই আমরা আশা করতে পারি নির্দিষ্ট সময়ে এমআরটি লাইন-২ এর কাজ সম্পন্ন করা হবে।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) যুগ্মসচিব মোহাম্মদ আবদুর রউফ আমার সংবাদকে বলেন, এমআরটি লাইন-২ এর কাজ সম্পন্নে দাতাগোষ্ঠী নির্দিষ্ট করতে বিষয়টি পরিকল্পনা কমিশনে রয়েছে। ইতোমধ্যে আমাদের সমীক্ষার কাজ চলছে, সেই সাথে ডাটা সংগ্রহের কাজও চলছে। তাছাড়া আমাদের টার্গেট হলো ২০৩০ সালের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ সম্পন্ন করব। এমআরটি লাইন-২ প্রকল্প বাস্তবায়নে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকা, এডিবি, কোরিয়ান ব্যাংক (এক্সিম ব্যাংক) সাহায্যের জন্য আগ্রহ দেখাচ্ছে। দাতাগোষ্ঠী নিয়ে সিদ্ধান্তের জন্য বিষয়টি এখন অর্থ মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। সেখান থেকে প্রকল্পটি যাবে প্লানিং কমিশনে। আমরা বিভিন্ন প্রস্তাব পাঠিয়েছি, সেটা মন্ত্রণালয় হয়ে প্লানিং কমিশনের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে। এমআরটি লাইন-২ চালু হলে মানুষের চলার গতি বাড়বে। চলাচলে কোনো ধরনের ভোগান্তি পোহাতে হবে না। অর্থনৈতিকভাবে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। পবিবেশ ও শব্দদূষণ কমে আসবে।