রোগীর সেবাতেই ডাক্তারদের ঈদ আনন্দ

সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া প্রকাশিত: এপ্রিল ৯, ২০২৪, ০৪:৩৯ পিএম
রোগীর সেবাতেই ডাক্তারদের ঈদ আনন্দ

ঈদের ছুটিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ১২ নির্দেশনা

ঈদে পরিবার ছেড়ে যেসব  চিকিৎসক মানুষের সেবায় হাসপাতালে কর্মরত থাকবেন, তাদের আত্মত্যাগ প্রশংসনীয়
—অধ্যাপক ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম

পরিচালক, বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট

‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ, তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে, শোন আসমানি তাগিদ’ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের এ গানের মতো ঈদ যেন দরজায় কড়া নাড়ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি হয়েছে অনেক আগেই। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও ছুটির পথে। পরিবার পরিজনের সাথে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে অনেকে ফিরেছেন গ্রামে। তবে ব্যতিক্রমও আছে। মেডিকেল কলেজগুলোর কথাই ধরুন। চূড়ান্ত পেশাগত পরীক্ষার কঠিন ধাপ পেরিয়ে শিক্ষানবিশ হিসেবে কর্মরত চিকিৎসকদের ঈদের সময়টাও ব্যস্ততায় কাটবে। জরুরি স্বাস্থ্যসেবা তো আর বন্ধ রাখা যায় না। ঈদের সময়ও হাসপাতালে ভর্তি থাকে বহু রোগী, আসে নতুন রোগীও। তাই শিক্ষানবিশ থেকে শুরু করে প্রায় সব পর্যায়ের চিকিৎসকেরাই ঈদে দায়িত্বে থাকেন। তাদের ঈদ আনন্দ কেমন কাটে এ গল্প অনেকের অজানা। 

এমবিবিএস পাস করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিক্ষানবিশ চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত আদিব রহমান। আসন্ন ঈদুল ফিতরে ছুটিতে থাকবেন হাসপাতালেই রোগীদের সেবায়। তিনি বলেন, ঈদের সময় এবারই প্রথম পরিবার ছাড়া ঈদ করতে হবে। একদমই নতুন একটি অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে যাচ্ছি। চিকিৎসা বিজ্ঞান নিয়ে যখন পড়েছি তখন শিক্ষকরা প্রায়ই ক্লাসে বলতেন, চিকিৎসক হতে ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। অনেক আনন্দ বেদনা নিজের মাঝেই লুকিয়ে রাখতে হয়। এবারের ঈদে পরিবারের অভাব অনুভব করব। তবুও মানুষের সেবার নিজের আত্মনিয়োগে ভালো লাগা কাজ করছে। সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করে শিক্ষানবিশ চিকিৎসক হিসাবে কর্মরত জান্নাতুল ফেরদৌস। আসন্ন ঈদে তিনিও ছুটি না পেয়ে ঈদ করবেন হাসপাতালে ডিউটিরত অবস্থায়। তিনি বলেন, পরিবার ছাড়া ঈদ আমার কাছে একদম নতুন না। গত বছরও ঈদের ছুটিতে হাসপাতালে ডিউটি করেছি। পরিবারকে ছাড়া ঈদ করা কষ্ট। কিন্তু মানুষের সেবা করতে পেরে সে আনন্দ ভুলে যাই। ঈদের দিন রোগীদের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিই। মনেই হয় না পরিবার ছাড়া আছি। কত মানুষ সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে যায়। তাদের দেখলেই ভালো লাগে।

এদিকে ঈদের ছুটিতে জরুরি স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে হাসপাতালগুলোয় কর্মরতদের জন্য ১২ দফা নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। 

নির্দেশনাগুলো হলো— 

১. ছুটিকালীন কর্মস্থলে পর্যাপ্ত জনবল ও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার জন্য ঈদের আগে ও পরে সমন্বয় করে জনবলকে পর্যায়ক্রমে ছুটি দেয়া যেতে পারে। 

২. প্রতিষ্ঠানপ্রধান নিরবচ্ছিন্ন জরুরি চিকিৎসা কার্যক্রম ও জনস্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে অনুকূলিতভাবে ছুটি মঞ্জুর করবেন। 

৩. প্রতিষ্ঠান সিভিল সার্জন, বিভাগীয় পরিচালককে অবহিত করে শুধু ঈদের ছুটিকালীন নিজ জেলার মধ্যে অতি প্রয়োজনীয় জনবল সমন্বয় করতে পারবেন। 

৪. জরুরি বিভাগে সার্বক্ষণিক চিকিৎসকের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। 

৫. জরুরি বিভাগ ও লেবার রুম, ইমারজেন্সি ওটি সার্বক্ষণিক চালু রাখতে হবে। 

৬. অন্তঃবিভাগে ইউনিট প্রধানরা প্রতিদিন কাজের তদারকি করবেন। মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিশেষায়িত হাসপাতাল, জেলা সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো জরুরি ল্যাব, এক্স-রে সেবা সার্বক্ষণিক চালু রাখতে হবে। 

৭. ছুটি শুরু হওয়ার আগেই ছুটির সময়ের জন্য পর্যাপ্ত ওষুধ, আই ভি ফ্লুয়িড কেমিক্যাল রি-এজেন্ট, সার্জিক্যাল সামগ্রী মজুত ও তাৎক্ষণিকভাবে সরবরাহের ব্যবস্থা রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে স্টোর কিপার অথবা ছুটিকালীন দায়িত্বপ্রাপ্ত স্টাফ অবশ্যই নিজ জেলা ও উপজেলার অবস্থান করবেন। 

৮. অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস সার্বক্ষণিক চালু রাখতে হবে। 

৯. ছুটিকালীন হাসপাতালের নিরাপত্তার জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে আগাম পত্র দিতে হবে। 

১০. প্রতিষ্ঠান প্রধান ও বিভিন্ন বিভাগের প্রধানরা ছুটিকালীন সেবা প্রদানকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করবেন এবং ঈদের দিন কুশল বিনিময় করবেন। 

১১. প্রতিষ্ঠান প্রধান ছুটি নিলে অবশ্যই বিধি মোতাবেক কাউকে দায়িত্ব দিয়ে যাবেন এবং দায়িত্ব গ্রহণকারী কর্মকার্তা সব দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করবেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম ও মোবাইল নম্বর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হবে। 

১২. প্রতিষ্ঠান প্রধান ঈদের দিন রোগীদের উন্নতমানের খাবার পরিবেশন তদারকি করবেন এবং রোগীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।

হাসপাতালের রোগীদের জন্য ঈদে বিশেষ আয়োজন নিয়ে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ঈদ মানুষের মধ্যে আনন্দ নিয়ে আসে। কিন্তু এ আনন্দের মধ্যেও কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। আমাদের হাসপাতালে গড়ে দুই থেকে তিনশ রোগী ঈদের সময় ভর্তি থাকে। চিকিৎসক, নার্স, কর্মচারীদের অনেকে ডিউটি করেন। আমরা সবাই মিলে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিই। তা ছাড়া ঈদে সবার জন্য বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। 

পরিবারের বাইরে হাসপাতালের রোগীরাই হয়ে উঠেন আমাদের আরেকটি পরিবার। ঈদে পরিবার ছেড়ে রোগীদের সেবায় যেসব চিকিৎসক মানুষের সেবায় হাসপাতালে কর্মরত থাকবেন তাদের আত্মত্যাগ প্রশংসনীয়।