ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল

স্বল্প খরচে অত্যাধুনিক সেবা

সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া প্রকাশিত: মে ৭, ২০২৪, ০৩:০০ পিএম
স্বল্প খরচে অত্যাধুনিক সেবা

এক হাজার শয্যা নিয়ে রূপান্তরিত হচ্ছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতাল

নিউরোলজিক্যাল স্বাস্থ্যসেবায় নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতাল সব সময় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবা বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখছে হাসপাতালটি
—অধ্যাপক ডা. কাজী দীন মোহাম্মদ, পরিচালক, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল

হাসপাতালটি এক হাজার শয্যায় উন্নীত হলে দেশে নিউরোলজিক্যাল সেবার পরিধি বৃদ্ধি পাবে। স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী ভাবনার সহযোগী হতে পেরে নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতাল পরিবার গর্বিত
—অধ্যাপক ডা. বদরুল আলম, যুগ্ম পরিচালক, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল

সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা বলতে অনেকে মনে করেন সেবার চেয়ে ভোগান্তি বেশি। কিন্তু এর বিপরীত চিত্রও রয়েছে। এর উদাহরণ হিসেবে রয়েছে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল। হাসপাতালে প্রবেশ করতেই দুই পাশে রয়েছে গ্রীষ্মকালীন ফুলের সমারোহ। প্রচলিত সরকারি হাসপাতালের চেয়ে এটি অনেকটাই পরিপাটি। ২০১২ সালে হাসপাতালটি যাত্রা শুরু করে। এখন প্রতিদিন দেড় থেকে দুই হাজার রোগী সেবা নিতে আসতেন। আগে মানুষ বুঝতেই পারত না যে, তার নিউরোলজিক্যাল সমস্যা হয়েছে। এখন যদি  কেউ দেখেন তার মাথাব্যথা হচ্ছে, মৃগীরোগ হচ্ছে, স্ট্রোক হয়েছে, তাহলে এই হাসপাতালটিতে ছুটে আসেন। 

বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যে এবং সক্ষমতার বাইরে গিয়ে জনগণের সেবা নিশ্চিত করায় এখন সবার কাছে ছড়িয়ে পড়ছে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেসের নাম। শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার নিউরোলজিক্যাল যে কোনো রোগের চিকিৎসা মেলে এ হাসপাতালে। সকাল থেকেই হাসপাতালে শুরু হয় রোগীর চাপ। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রোগীরা ছুটে আসেন এখানে সেবা নিতে। সকালে আউটডোরে দেখার পর প্রয়োজনে বিকালে নেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের  সেবা। তারপর দরকার পড়লে ভর্তি হওয়া, পরীক্ষা-নিরীক্ষা বা অপারেশন— সবই স্বল্প খরচে হয় এ হাসপাতালে। আর এসবই রোগীরা করাতে পারেন খুব কম খরচে। হাসপাতালটি প্রথমে ৩০০ শয্যা নিয়ে শুরু হয়। সময়ের সঙ্গে বাড়তে থাকে রোগী। এক সময় ৫০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। কিন্তু রোগীর চাপে জায়গা সংকুলান হচ্ছিল না। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় এবার আরও ৫০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। ৫০০ শয্যার নতুন ১৫ তলা ভবন শিগগিরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন। হাসপাতালটির তখন শয্যাসংখ্যা দাঁড়াবে এক হাজার, যাতে প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বের বৃহত্তম নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালে পরিণত হবে। 

এত বড় নিউরোলজিক্যাল চিকিৎসার হাসপাতাল বিশ্বের আর কোথাও নেই। যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে ৭৫০ শয্যার একটি হাসপাতাল। নির্মিত হাসপাতালটির নতুন ভবনের আইসিইউ, সিসিইউসহ সব যন্ত্রপাতি আসবে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে। এতে থাকবে ৩০ শয্যার অত্যাধুনিক আইসিইউ,  ২০ শয্যার এসডিইউ, ক্যাথল্যাব থাকবে অত্যাধুনিক। এখানে যেসব অপারেশন হবে, সেগুলো মস্তিষ্ক না কেটে রক্তনালীর মাধ্যমে করা হবে। রক্তনালী চিকন হলে এনজিওগ্রামের মাধ্যমে সচল করা হবে। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এক যুগ আগেও এ দেশে ৮০ ভাগ লোক নিউরোলজিক্যাল চিকিৎসা পেত না। কিন্তু বিশেষায়িত হাসপাতালটি হওয়ার পর যা অনেকাংশেই কমে এসেছে। সেবা ও আস্থার যায়গা হিসেবে হাসপাতাটিতে চিকিৎসা নিয়ে অনেকে সুস্থ হয়ে ফিরে যান। এ হাসপাতালের ডাক্তার-নার্সরা স্পেশালিস্ট। বিদেশি অনেক সার্জন এসেও এখানে অপারেশন করছেন।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালটি এক হাজার শয্যায় উন্নীত হলে সারা বিশ্বে নিউরো চিকিৎসায় বাংলাদেশ নতুন করে নিজের পরিচয় জানান দেবে। আমরা হাসপাতালটি অত্যাধুনিক করতে সব কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্যভাবনার দূরদর্শী চিন্তার আরেকটি প্রতিফলন হলো নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতাল।

হাসপাতালটির পরিচালক প্রখ্যাত নিউরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. কাজী দীন মোহাম্মদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের সব সময় সেবার মানোন্নয়নের দিকনির্দেশনা দেন। তিনি চান মানুষ যেন দেশেই চিকিৎসা নেয়। নিউরোলজিক্যাল সেবায় নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতাল সব সময় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবা বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখবে এই হাসপাতাল।

হাসপাতালটির যুগ্ম পরিচালক অধ্যাপক ডা. বদরুল আলম বলেন, হাসপাতালটি এক হাজার শয্যায় উন্নীত হলে দেশে নিউরোলজিক্যাল সেবার পরিধি বৃদ্ধি পাবে। মানুষ আমাদের কাছে সেবার প্রত্যাশা নিয়ে আসে। নিউরোলজিক্যাল চিকিৎসা ব্যয়বহুল; কিন্তু এখানে মানুষ স্বল্প খরচে বিশ্বমানের সেবা পেয়ে থাকে। অনেক জটিল ও ব্যয়বহুল অপারেশন বিনামূল্যেও করা হয়। হাসপাতালটি সম্প্রসারণ হলে দেশে আরও নিউরো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়বে, যা আমাদের স্বাস্থ্যসেবা খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসবে। স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর একান্ত চেষ্টার সহযোগী হতে পেরে নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতাল পরিবার গর্বিত।