নেই বাজেট উত্তাপ

মশলার বাজার গরম

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: জুন ১১, ২০২৪, ০২:১০ পিএম
মশলার বাজার গরম

কোরবানির ঈদ দরজায় কড়া নাড়ছে। এই ঈদে গরুর মাংস রান্নার অন্যতম অনুষঙ্গ মশলা। বিপুল চাহিদা থাকায় আমদানিকারকরা এ সুযোগে ভোক্তাদের কাছ থেকে বেশি দামে মশলা বিক্রি করে থাকেন। সদ্যঘোষিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট মশলা বাজারের ওপর কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। তবে সরবরাহ কমের অজুহাত দেখিয়ে প্রায় সব ধরনের মশলার দাম বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে আসন্ন কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে বাজারে আদা, রসুন, জিরা, লং, এলাচ, দারুচিনি, গোলমরিচসহ বেশকিছু মশলাজাত পণ্যের দাম বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, কোরবানির ঈদ ঘিরে তিন-চার মাস আগে থেকেই মশলা আমদানি শুরু করা হয়। এর ফলে দেশের বাজারে বিপুল পরিমাণ মশলা আমদানি হলেও অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে প্রতিবছরই গরম মশলার দাম লাফিয়ে বাড়ে।

জানা গেছে, টাকার বিপরীতে ডলারের বিনিময় হার বাড়ার অজুহাতে কোরবানির আগেই মশলার বাজারে এমন অস্থিরতা। অথচ এসব মশলা আমদানি হয়েছে তিন থেকে চার মাস আগে। আর চাহিদার বিপরীতে অতিরিক্ত আমদানি হওয়ায় এ মুহূর্তে বাজারে মশলার কোনো সংকট নেই বলে দাবি কাস্টমসের। গত দুই মাস ধরেই দেশের বাজারে এলাচের দাম লাগামহীন। দুই হাজার টাকা কেজির এলাচের দাম এসে ঠেকেছে চার হাজার টাকায়। এবার শুধু এলাচ নয়, অজুহাতের ওপর ভর করে জিরা, লবঙ্গ, দারুচিনি, গোলমরিচ এবং জয়ত্রির দামও বাড়িয়েছেন পাইকারি বিক্রেতারা।

মশলা বিক্রেতারা বলছেন, দেশের বাজারে যে-সব মশলা বিক্রি হচ্ছে, তার অধিকাংশই ভারত থেকে আমদানি করা। হিলি স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিনই জিরাসহ অন্যান্য মশলা আমদানি হচ্ছে। আগে প্রতিদিন দু-তিন ট্রাক মশলা আমদানি হলেও কোরবানি উপলক্ষে এখন হচ্ছে ৮ থেকে ১০ ট্রাক। বর্তমানে পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি জিরা বিক্রি হচ্ছে ৮৭০ থেকে ৯৫০ টাকায়। বিভিন্ন হাত ঘুরে এই জিরা খুচরা পর্যায়ে ১০০০ টাকারও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এলাচ বিক্রি ১৭০০ টাকা হলেও কোথাও কোথাও বিক্রি হচ্ছে সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকা পর্যন্ত। ব্যবসায়ীদের দাবি, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া ও এলসি খোলায় জটিলতার কারণেই মশলার দাম বেড়ে গেছে। তবে নিয়মিত বাজার তদারকি হলে এত দাম বাড়ত না বলেও মনে করেন কোনো কোনো ব্যবসায়ী।

দেশের প্রধান পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানান, তিন মাস আগেও ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে জিরা, যা এখন প্রায় ৬৫০ টাকা। একইভাবে কেজিতে ৫০০ টাকা বেড়ে বর্তমানে প্রতি কেজি এলাচ ১৭০০ টাকা থেকে ৪০০০ টাকা, ৭০০ টাকা বেড়ে লবঙ্গ ১৫০০ টাকা, ১০০০ টাকা বেড়ে জায়ফল ৩৫০০ টাকা, ২০০ টাকা বেড়ে মিষ্টি জিরা ৩১০ টাকা, ১৫০ টাকা বেড়ে গোল মরিচ ৬৭০ টাকা, ১৫০ টাকা বেড়ে জয়ত্রি ৭৫০ টাকা, ৭০ টাকা বেড়ে দারুচিনি ৩২০ টাকা, ৬০ টাকা বেড়ে ধনিয়া ১৮০ টাকা, ৫০ টাকা বেড়ে সরিষা ১০৫ টাকা এবং ২০ টাকা বেড়ে তেজপাতা বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়।

মশলার বাজার কেন এত অস্থিতিশীল— এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুরান ঢাকার পাইকারি গরম মশলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও এফবিসিসিআই সদস্য হাফেজ হাজী মো. এনায়েত উল্লাহ আমার সংবাদকে বলেন, মশলার বাজার নিয়ন্ত্রণে আমাদের সমিতির কোনো ভূমিকা নেই। যে যার মতো আমদানি করে, দামও তাদের ইচ্ছেমতো নেয়। আমাদের গরম মশলা আমদানিকারক মাত্র চার-পাঁচজন আর আমাদের সমিতির পাইকারি মশলা বিক্রেতা প্রায় দুই শতাধিক। তবে সারা দেশে এই সংখ্যা কত, তার সঠিক কোনো হিসাব আমাদের কাছে নেই। সমিতির সদস্য হওয়া বাধ্যতামূলক না হওয়ার সুযোগে বাজারের ওপর কোনো প্রভাব বিস্তার করার কোনো ক্ষমতাও আমাদের হাতে নেই। সবাই যার যার ইচ্ছেমতো দাম বাড়ায়। রমজান ও কোরবানিতে সেটা কম-বেশি সবাই করেন। তাহলে সমিতির কাজ কী— জানতে চাই তিনি বলেন, সরকারের সঙ্গে দেনদরবার করাই আমাদের কাজ।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘বাজেট হয়েছে শুনেছি। যদিও বাজেটের সঙ্গে আমাদের মতো মানুষের কোনো সম্পর্ক নেই। এই বাজেটে আমাদের কোনো কাজে আসবে না। আমরা চাই বাজারে জিনিসপত্রের দাম ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকুক। কিন্তু হচ্ছে উলটো, তাই এতে খুশি হওয়ার কিছু নেই। আগে দুটা টিউশনি করিয়ে যে টাকা পেতাম, এখনও তা-ই পাই। বাজারের ব্যাগও হালকা হচ্ছে। ভার্সিটির খরচও বাড়ছে।

গত ৬ জুন সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এর আকার ধরা হয়েছে সাত লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। আর ঘাটতি ধরা হয়েছে দুই লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি পরিস্থিতিতে বাজেটে মূল্যস্ফীতি ছয় দশমিক পাঁচ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার। পণ্যবাজার স্থিতিশীল রাখা ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে অন্তত ২৭টি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম এবং খাদ্যশস্য সরবরাহের ওপর উৎসে কর কমানো হচ্ছে। এসব পণ্যে উৎসে কর দুই শতাংশ থেকে কমিয়ে এক শতাংশ করা হচ্ছে।