চট্টগ্রামে দুদকের জিরো টলারেন্স: অস্বস্তিতে দুর্নীতিবাজরা

মামুনুর রশিদ প্রকাশিত: মে ৮, ২০২৫, ১২:১০ এএম
চট্টগ্রামে দুদকের জিরো টলারেন্স: অস্বস্তিতে দুর্নীতিবাজরা

চট্টগ্রামে অনিয়ম-দুর্নীতি ও লুটপাটের মাফিয়া আমলের সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত কর্তারা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নজরে এসেছেন। ফ্যাসিস্ট সরকার আমলে কাজের বিনিময়ে খাদ্য প্রকল্পে লুটপাটের হরিলুট ছিল।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরশাসকের লুটপাটের মহারাজারা পালিয়েছে। শুধুমাত্র চট্টগ্রাম বন্দরের সাবেক চেয়ারম্যান সোহায়েল আটক হয়েছেন।

দুর্নীতি দমন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, গত সরকারের আমলে দুদক থেকে দায় মুক্তি পাওয়া অনেকের বিরুদ্ধে ফের তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম দুর্নীতি দমন কমিশন ৫ আগস্টের পর বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। নিয়মিত বিভিন্ন দপ্তরে দিচ্ছে হানা। ভয়ে কাঁপছে প্রতিষ্ঠানগুলো।

গতকাল চট্টগ্রাম বিআরটিএতে দুদক অভিযান চালায়।

এর আগে ষোলশহর এলজিইডি ভবনে এলপি গ্যাস কার্যালয়, স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) এবং সিটি কর্পোরেশনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালায়। ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় দুর্নীতি দমন কমিশন দৃষ্টি কাড়ে এমন ঘটনা দেখাতে পারেনি। শুধু পজিটিভ রিপোর্ট বা  দুদক থেকে দায় মুক্তি দিয়েছিল। তবে তখন সরকারের এমপি-মন্ত্রীদের চাপে ছিল দুদক। 

স্বৈরশাসনামলে অনিয়ম-দুর্নীতি ও লুটপাটে মাইলফলকে পৌঁছে গিয়েছিল চট্টগ্রাম বন্দর পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে এলজিইডি জেলা প্রশাসক কার্যালয় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ, মাদার প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) অধীনস্থ কোম্পানিসমূহ ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড, পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড, মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড, যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড, ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস ব্লেন্ডার্স পিএলসি, এলপি গ্যাস লিমিটেড, স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেড, পেট্রোলিয়াম ট্রান্সমিশন কোম্পানি পিএলসি।

দুর্নীতির প্রতিযোগিতায় তাদের সাথে কোনো অংশে পিছিয়ে ছিলেন না বিআরটিএ কর্ণফুলী গ্যাস  ডিস্ট্রিবিউশন (কেজিডিসিএল), চট্টগ্রাম কাস্টমস, শিক্ষা স্বাস্থ্য, গণপূর্ত সড়ক ও জনপথ এবং বনবিভাগসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।

প্রতিষ্ঠানগুলো অনিয়ম-দুর্নীতি ও লুটপাটে জড়িত থাকার অভিযোগে এবার কঠোর নজরদারিতে রয়েছে বলে দৈনিক আমার সংবাদকে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চট্টগ্রাম- ১ জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক সুবেল আহমেদ।

জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা খোলস পাল্টিয়ে অনেকেই স্থানান্তরিত হয়েছেন। সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতিবাজ মহারথীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে সময়ক্ষেপণ হলে ফের অনিয়ম-দুর্নীতি ও লুটপাটের আগের চিত্র ফিরে আসবে বলে সংশয় প্রকাশ করেন বিশিষ্টজনরা। 
চট্টগ্রাম দুর্নীতি দমন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত কর্তা ছাড়া বিভিন্ন ঠিকাদার ব্যবসায়ীসহ আরও অনেকের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। যমুনা ওয়েলের সাবেক এমডি, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতালের সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর চৌধুরী ও টয়েটা জিপের পরিবর্তে বিএমডব্লিউ গাড়ি ও টেলিভিশন আমদানি করে পাঁচ কোটি টাকা কর ফাঁকির মামলায় মেসার্স এইচ কে ইন্টারন্যাশনালের মালিক কামরুল হাসানসহ অনেকের বিরুদ্ধে দুদক দ্রুত ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে।

দুর্নীতি দমন কমিশন চট্টগ্রাম-১ জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক সুবেল আহমেদ দৈনিক আমার সংবাদকে আরও বলেন, কমিশনের নির্দেশ পেলে আমরা দ্রুত কাজ শুরু করি।

চট্টগ্রাম দুর্নীতি দমন কমিশনের পরিচালক আবুল হোসাইন দৈনিক আমার সংবাদকে বলেন, স্বৈরশাসন সরকারের সময়ে দুদক স্বাধীন ছিল না। আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠান ছিল। আমরা এখন একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। রাজনৈতিক ছাড়াও সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত কর্মজীবী দুর্নীতিবাজদের কঠোর নজরে রেখেছি। আপনারাও তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করবেন।