- এবার রাজপথে নামছেন ইশরাক
সমর্থকদের সঙ্গে রাজপথে নামার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। গতকাল বুধবার বিকালে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেয়া এক পোস্টে এ ঘোষণা দেন। ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘আন্দোলনকারী জনতার প্রতি সর্বাত্মক সংহতি জানাতে এবং তাদের সঙ্গে যতদিন প্রয়োজন রাজপথে সহাবস্থান করার জন্য অল্প সময়ের মধ্যেই হাজির হবো ইনশাআল্লাহ।’
এর আগে, দুপুরে ফেসবুকে তিনি আরেকটি পোস্ট দেন। ওই পোস্টে সমর্থকদের রাজপথ না ছাড়ার নির্দেশনা দেন তিনি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র পদে শপথ না পড়ানোর আগ পর্যন্ত সমর্থকদের উদ্দেশে রাজপথ না ছাড়ার নির্দেশনা দিয়ে ইশরাক হোসেন বলেন, ‘নির্দেশ একটাই- যতক্ষণ দরকার রাজপথ ছেড়ে ওঠে আসা যাবে না।’
বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে আরেক পোস্টে ইশরাক হোসেন লিখেছেন, ‘গেজেট প্রকাশের পর পতিত ফ্যাসিবাদের অন্যতম শীর্ষ কর্তা অপসারিত মেয়র তাপসের পক্ষ নিয়ে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার চাপ প্রয়োগ করে নির্বাচন কমিশনে রীতিমতো চিঠি লিখে। গেজেট প্রকাশের পর শপথ অনুষ্ঠান না করে এ ধরনের চিঠি দিয়ে নির্বাচন কমিশনকে এক প্রকার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। এটি দেখে আইন সম্বন্ধে যারা জানে তারা হতবাক ও চরম বিস্মিত হয়েছিলেন। নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ স্বাধীন ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান। কোর্টের রায় কার্যকর করতে তাদের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। তাপসের এ কাজটি করে না দিতে পেরে এখন তাপসের টাকা খেয়ে নির্বাচন কমিশন অভিমুখে বিক্ষোভ করেছে একটি রাজনৈতিক দল। এই অভিযোগকেও তুললে কি ভুল বলা হবে?’
এদিকে দুপুরে ডিএসসিসি মেয়র হিসেবে শপথ না পড়ানোর নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের শুনানি গতকাল আবারও গ্রহণ করা হয়। আজ বৃহস্পতিবার আদেশের দিন ধার্য করা হয়েছে। বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর বেঞ্চ গতকাল এ দিন ধার্য করেন।
এর আগে গতকাল বুধবার সকাল থেকেই রাজধানীর মৎস্য ভবন মোড়, কাকরাইল মসজিদ এবং প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় যাওয়ার রাস্তায় অবস্থান করেন তার সমর্থকরা। তাদের স্লোগানে উত্তাল হয়ে পড়ে আশপাশের এলাকা। সপ্তম দিনের আন্দোলনে দাবি না মানলে পুরো ঢাকা অচল করে দেয়ার হুঁশিয়ারি দেন তারা।
ছয়দিন ধরে নগর ভবনের সামনে আন্দোলনরতরা গতকাল সকালে ওই এলাকা ছেড়ে মৎস্য ভবন ও এর আশপাশে আসতে থাকেন। একপর্যায়ে মৎস্য ভবন মোড় ছাড়িয়ে একদিকে কাকরাইল অন্যদিকে হাইকোর্ট গেটসহ আশপাশের এলাকায় বিপুল লোকসমাগম ঘটে। এ সময় চারদিকে রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়। দুপুরে প্রচণ্ড রোদ ও গরম এবং বিকালে বৃষ্টি উপেক্ষা করে পিচঢালা রাস্তায় বসেই স্লোগানে স্লোগানে এলাকা মুখর করে রাখেন ইশরাকের সমর্থকরা। তারা অবিলম্বে ইশরাককে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দাও, দিতে হবে, দফা এক দাবি এক, আসিফের পদত্যাগ, আসিফ ভূঁইয়ার কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও, শপথ নিয়ে টালবাহানা চলবে না চলবে না- স্লোগান দেন।
মেয়র হিসেবে ইশরাকের শপথ না পড়ানো নিয়ে রিটের আদেশ আজ
বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে শপথ না পড়ানোর নির্দেশনা চেয়ে দায়ের করা রিটের ওপর দ্বিতীয় দিনের শুনানি শেষ হয়েছে। এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ১১টায় আদেশ দেবেন হাইকোর্ট।
গতকাল বুধবার বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আদেশের জন্য এ দিন ধার্য করেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহফুজুর রহমান মিলন। ইশরাক হোসেনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। তাদের সহযোগিতা করেন ব্যারিস্টার এ কে এম এহসানুর রহমান ও অ্যাডভোকেট মাকসুদ উল্লাহ।
এর আগে গত ১৪ মে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ঘোষণা করে দেয়া রায় স্থগিতের পাশাপাশি তাকে মেয়র পদে শপথ না পড়ানোর নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। এছাড়া নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণায় প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগ করে সংশ্লিষ্ট বিচারকের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা চাওয়া হয়। মো. মামুনুর রশিদ নামে এক ব্যক্তির পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কাজী আকবর আলী হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি দায়ের করেন।
রিটে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়কে মেয়র পদে ইশরাককে শপথ না পড়াতে এবং আইন মন্ত্রণালয়কে নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের সংশ্লিষ্ট বিচারকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য হাইকোর্টের নির্দেশনা চাওয়া হয়। প্রসঙ্গত, গত ২৭ এপ্রিল বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের দেয়া রায় ও ডিক্রির বিরুদ্ধে আপিল বা রিভিউ করতে সংশ্লিষ্টদের আইনি নোটিশ পাঠান ঢাকার দুই বাসিন্দা। নোটিশে মো. ইশরাক হোসেনের নামে গেজেট প্রকাশ এবং তাকে শপথ পড়ানো থেকে বিরত থাকতেও বলা হয়। কিন্তু ওইদিন রাতেই ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট জারি প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। জানা গেছে, ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটির নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপসকে মেয়র ঘোষণা করা হয়। গেল ২৭ মার্চ ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২০২০ সালের নির্বাচনে ফজলে নূর তাপসকে বিজয়ী ঘোষণার ফল বাতিল করে বিএনপি নেতা ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করেন ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম।
ট্রাইব্যুনালের রায়ের কপি পেয়ে ২২ এপ্রিল গেজেট প্রকাশের বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। পরে ২৭ এপ্রিল ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) নতুন মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে ইসি।
উপদেষ্টা মাহফুজ ও আসিফ মাহমুদের পদত্যাগ দাবি ইশরাক হোসেনের
বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দুই উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদের পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল বুধবার সকালে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি এ দাবি জানান।
ইশরাক লিখেছেন, গণতান্ত্রিক ভাষা ও রাজনৈতিক শিষ্টাচার মেনে, যৌক্তিক কারণেই উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ এবং মাহফুজ আলমকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সব ধরনের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগের আহ্বান জানাচ্ছি। কারণ, এটি প্রতীয়মান যে, আপনারা কোনো না কোনোভাবে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং ভবিষ্যতে সরাসরি রাজনীতিতে যুক্ত হবেন কিংবা নির্বাচনে অংশ নেবেন।
তিনি আরও বলেন, এই প্রেক্ষাপটে আপনাদের পদত্যাগই যুক্তিযুক্ত এবং সেটিই বর্তমান সরকারের নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে সহায়ক হবে। উপদেষ্টা পদে থেকে কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে সুবিধা প্রদানের আশঙ্কা অমূলক নয়। ক্ষমতা ধরে রাখলে আপনারা নিরপেক্ষ থাকতে পারবেন না, এমনটি ইতিহাসও বলে।
ইশরাক উদাহরণ টেনে বলেন, আপনাদের সহকর্মী নাহিদ ইসলাম যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তা অনুসরণযোগ্য। তিনি চাইলে কিছুদিন মন্ত্রিত্ব ধরে রেখে পরে এনসিপিতে যোগ দিতে পারতেন, কিন্তু তিনি রাজনীতিকে প্রাধান্য দিয়ে পদত্যাগ করেছেন। অতীতে সারজিস আলম কিংবা হাসনাত আবদুল্লাহর মতো নেতারাও মন্ত্রিত্ব না নিয়ে সরাসরি রাজনীতিতে অংশ নেয়ার পথ বেছে নিয়েছেন। হয়তো ভবিষ্যতে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে তারা পূর্ণাঙ্গভাবে ক্ষমতা ফিরে পাবেন। এ সময় ইশরাক নিজের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়েও মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, আজ আমাকে অনেকে সমালোচনা করছেন, আন্দোলনের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, জনগণকে বোঝানো প্রয়োজন ছিল যে, আপনাদের ভুল পথে পরিচালিত করা হচ্ছে। আমার বিরুদ্ধে যে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, তা যৌথ রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ফসল- এটা বুঝতে রাজনৈতিক সচেতনতা লাগে না।
তিনি আরও বলেন, আইন-আদালতের রায় মেনে না নিলে দেশ সংস্কারের পথ কোথা থেকে শুরু হবে? আপনারা চাইলে সমালোচনা করতে পারেন, কিন্তু আমাকে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে হবে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, আপনারা পদত্যাগ করতে চাইছেন না কেন? জনগণ কি আপনাদের পদে থাকার পক্ষে? প্রশ্নটির উত্তর দেয়া এখন সময়ের দাবি।
এদিকে, ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়ার দাবিতে গত ছয় দিন ধরে টানা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন তার সমর্থকরা। গতকাল বুধবার সকাল ১০টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে আল্টিমেটাম দিয়েছে আন্দোলনকারীরা। এর মধ্যে সমাধান না এলে আরও কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা আসবে বলে জানিয়েছেন তারা।
অন্যদিকে, ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে শপথ না পড়ানোর নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে দায়ের করা রিটের শুনানি শেষে আদেশের জন্য দিন ধার্য ছিল গতকাল বুধবার। এদিন শুনানি শেষে আবার আজ বৃহস্পতিবার আদেশের দিন ধার্য করা হয়। বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ বিকেলে শুনানি শেষে এ আদেশের দিন নির্ধারণ করেন।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপসের কাছে পরাজিত হন বিএনপির ইশরাক হোসেন। তবে গত ২৭ মার্চ একটি নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল তাপসের জয় বাতিল করে ইশরাক হোসেনকে বৈধ মেয়র ঘোষণা করে। এরপর গত ২৭ এপ্রিল নির্বাচন কমিশন গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে ঘোষণা করে।