তারুণ্যের সমাবেশে তারেক রহমান

নির্বাচন ডিসেম্বরেই হতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: মে ২৯, ২০২৫, ১২:০৫ এএম
নির্বাচন ডিসেম্বরেই হতে হবে

রাজধানীর নয়াপল্টনে ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ করেছে বিএনপির তিন সংগঠন ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল। বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর সমাগম হয় গতকাল বুধবারের এই সমাবেশে। সমাবেশের মঞ্চ তৈরি করা হয় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের বিপরীতে। সেখানে স্থাপন করা হয় বড় ইলেকট্রনিক পর্দা, যাতে বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। 

বক্তব্যে তিনি বলেন, চলতি বছরের ডিসেম্বরেই জাতীয় নির্বাচন হতে হবে। আবারও বলতে চাই, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’ তারেক রহমান বলেন, ‘নিরপেক্ষতা ও বিশ্বাসযোগ্যতাই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান পুঁজি। তাই তাদের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে, জনগণের বিশ্বাস-ভালোবাসা নষ্ট হয় অন্তর্বর্তী সরকারের এমন কোনো পদক্ষেপ নেয়া ঠিক হবে না।’ 

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘জনগণ ও গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোকে দয়া করে প্রতিপক্ষ বানাবেন না। যদি আপনাদের কেউ রাষ্ট্র পরিচালনায় থাকতে চায়, তাহলে সরকার থেকে পদত্যাগ করে জনগণের কাতারে এসে নির্বাচন করুন।’

তিনি আরও বলেন, ‘পতিত পলাতক স্বৈরাচারের কাছে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা কিংবা নির্বাচন কোনো গুরুত্বপূর্ণ কিছু ছিল না। সুতরাং সংস্কার ইস্যুর পাশাপাশি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের দৃশ্যমান প্রস্তুতি নেয়া উচিত বলে আমরা বিশ্বাস করি।’ ‘অতীতে বিভিন্ন সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকার তিন মাসের মধ্যেই সফলভাবে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেছে। কিন্তু আমরা দেখছি ১০ মাস পার হয়ে গেলেও অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করছে না,’ যোগ করেন তারেক রহমান। 

দেশবাসীর উদ্দেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আপনারা জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান যেন হয় তার প্রস্তুতি নিতে শুরু করুন। কারা রাষ্ট্র পরিচালনা করবে, কারা আপনাদের প্রতিনিধি হবে জাতীয় নির্বাচনে, আপনারা ভোট দিয়ে আপনাদের সেই প্রতিনিধিকে নির্বাচিত করবেন।’

এর আগে বেলা সাড়ে ১১টা থেকেই ছোট ছোট মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা নয়াপল্টনে আসেন। দুপুর ১টায় নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে কাকরাইল থেকে শুরু করে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত সড়ক মুখর হয়ে ওঠে। ঢাকার এই সমাবেশে যোগ দেন ফরিদপুর, সিলেট ও ময়মনসিংহ থেকে আসা যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। 

রঙ-বেরঙের ক্যাপ পরা নেতাকর্মীদের হাতে ছিল লাল-সবুজ জাতীয় পতাকা এবং দলীয় পতাকা। এ সময় ‘তারুণরা বিএনপির ভ্যানগার্ড’ বলে স্লোগান দিয়েছেন। সমাবেশ শুরুর আগে বিএনপির সাংস্কৃতিক সংগঠন জাসাস শিল্পীরা গান পরিবেশ করেন।

সমাবেশ শুরুর আগে এম মুনায়ের মুন্না বলেন, সারা দেশে মাসজুড়ে আমাদের যে কর্মসূচি ছিল এটা সামগ্রিভাবে সফল হয়েছে। তরুণ-যুবক-ছাত্রদের মধ্যে জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। আপনি দেখুন, আজকের এই সমাবেশে লক্ষ লক্ষ তরুণ-যুবকের উপস্থিতি। এটা কী জানান দিচ্ছে? তরুণ-যুবকরাই একটা বিশাল শক্তি। তরুণ-যুবকদের সংগঠিত করতে বিএনপির তিন সংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল এবং ছাত্রদলের উদ্যোগে মে মাসজুড়ে সারা দেশের ১০টি সাংগঠনিক বিভাগকে চারটি বৃহত্তর বিভাগে ভাগ করে চারটি বড় বিভাগ ও শহরে ‘সেমিনার’ এবং ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ করার কর্মসূচির ঘোষণা করেছিল। যা নয়াপল্টনের সমাবেশের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয়েছে। এর অংশ হিসেবে গত ৯ ও ১০ মে চট্টগ্রাম, ১৬ ও ১৭ মে খুলনা এবং ২৩ ও ২৪ মে বগুড়ায় সেমিনার ও সমাবেশ হয়েছে। 

চট্টগ্রামে ‘কর্মসংস্থান ও বহুমাত্রিক শিল্পায়ন নিয়ে তারুণ্যের ভাবনা’, খুলনায় ‘শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও মৌলিক অধিকার নিয়ে তারুণ্যের ভাবনা’ এবং বগুড়ায় ‘কৃষি উন্নয়ন, পরিবেশ রক্ষা ও নাগরিক সমস্যা নিয়ে তারুণ্যের ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। রাজধানীতে মঙ্গলবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটউট মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘তারুণ্যের রাজনৈতিক ভাবনা ও অর্থনৈতিক মুক্তি’ শীর্ষক সেমিনার। 

তারুণ্যের এই সমাবেশের বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহ উদ্দিন আহমেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী ও ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বক্তব্য রাখেন।