ছুটি শেষে ঢাকামুখী মানুষের ঢল, পথে ভোগান্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: জুন ১৫, ২০২৫, ১২:১১ এএম
ছুটি শেষে ঢাকামুখী মানুষের ঢল, পথে ভোগান্তি
  • ঈদের ছুটি শেষে কমলাপুরে ভিড়, ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়
  • টানা ১০ দিনের ছুটি শেষে আজ খুলছে সরকারি অফিস

পবিত্র ঈদুল আজহার দীর্ঘ ছুটির শেষ দিন গতকাল শনিবার । শেষ মুহূর্তে কর্মজীবী মানুষ কর্মস্থলে ফেরার জন্য রাজধানীমুখী হন। ঈদের পর থেকেই রাজধানীতে ফেরার ঢল শুরু হলেও গতকাল শনিবার যাত্রীচাপ সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। 

রাজধানীর গাবতলীসহ বিভিন্ন আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে দেখা গেছে ফেরতযাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়। উত্তরবঙ্গ থেকে আসা যাত্রীরা বলছেন, পুরো সড়কে খুব বেশি না হলেও তাদের সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে যমুনা সেতুতে। 

রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কর্মস্থলে ফিরতে আসা মানুষ বাস থেকে দল বেঁধে নামছেন। কিছু সময় পরপর বিভিন্ন জেলা থেকে বাস এসে পৌঁছাচ্ছে। 

দিনাজপুর থেকে ঢাকায় ফেরা বেসরকারি চাকরিজীবী আবু ইবনুল আজিজ জানান, ‘আজ ছুটির শেষ দিন। সকাল ৮টায় ঢাকায় পৌঁছানোর কথা থাকলেও এসেছি সাড়ে ১২টায়। যমুনা সেতুতে ৪-৫ ঘণ্টা সময় নষ্ট হয়েছে। চার লেনের গাড়ি এসে দুই লেনে আটকে যাচ্ছে, বাসগুলো নিয়ম মানছে না। ফলে সেখানে বিশৃঙ্খলা তৈরি হচ্ছে। তার ওপর তীব্র গরমে যাত্রা আরও কষ্টকর হয়ে উঠেছে।’ 

একই রুটে যাত্রা করেছেন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার নাইব হাসান নিয়ম। তিনি বলেন, ‘আমার অফিস শুরু সোমবার, তাই একদিন আগেই ফিরছি। আগেও ঈদে বাড়ি গিয়েছি, কিন্তু যমুনা সেতুতে এত ভোগান্তি কখনো হয়নি। টোল প্লাজায় ৪-৫ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে। সরকারের উচিত এ বিষয়ে নজর দেয়া, তাহলে আমাদের মূল্যবান কর্মঘণ্টা নষ্ট হবে না।’ 

অন্যদিকে সিরাজগঞ্জ থেকে আসা পোশাক শ্রমিক ইমন আলী বলেন, ‘আগামীকাল থেকে অফিস, তাই আজই ফিরেছি। দীর্ঘ ছুটিতে পরিবারের সঙ্গে ভালো সময় কাটিয়েছি। তবে ফেরার পথে তেমন কোনো সমস্যায় পড়িনি।’ 

এদিকে ঈদের সময় ছুটি না পাওয়া কিছু মানুষ এখনো পরিবারের কাছে যাচ্ছেন। তাদেরই একজন বাসচালক মো. আলমাস। তিনি বলেন, ‘ঈদের সময় ছুটি পাইনি, ডিউটি করতে হয়েছে। এখন ছুটি পেয়েছি, তাই বাড়ি যাচ্ছি। আমার বাড়ি মাদারীপুর।’

 রংপুরগামী ডিপজল এন্টারপ্রাইজের চালক মো. মাসুদ বিশ্বাস বলেন, ‘এখন যাত্রী কম, তাই শুধু গাড়ি চালু রাখার জন্যই যাত্রী নিয়ে যাচ্ছি। ফিরতি পথে বাস ফুল হয়েই আসছে।’

গাবতলীর কোটালীপাড়া স্টার এক্সপ্রেসের কাউন্টার মাস্টার আল মাসুদ বিন বাপ্পী বলেন, এবার কোরবানির ঈদে ভালোসংখ্যক যাত্রী পেয়েছি। সময়মতো যাত্রীদের পৌঁছাতে পেরেছি। রোজার ঈদের তুলনায় এবার যাত্রীর চাপ বেশি ছিল। ছুটি শেষ হচ্ছে, ফলে ফিরতি যাত্রায় বাসগুলো সিটভর্তি যাত্রী নিয়েই ঢাকায় আসছে। তবে এখনো কিছু মানুষ ঢাকার বাইরে যাচ্ছেন, সংখ্যাটা কম- প্রতিটি বাসে ১২-২০ জন করে যাত্রী হচ্ছে। 

উল্লেখ্য, ঈদযাত্রার শুরুতে ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে কয়েকগুণ যানবাহনের চাপ দেখা দেয়। গত ৪ জুন মধ্যরাত থেকে এ সড়কে যানজট শুরু হয়। ৫ জুন বৃহস্পতিবার সকাল থেকে এলেঙ্গা থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত প্রায় ১৩ কিলোমিটার এলাকায় যানজট সৃষ্টি হয়, যার ফলে ঘরমুখো মানুষ পড়েন চরম দুর্ভোগে। 

এদিকে পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটির শেষ দিনে রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে ট্রেনযাত্রীদের ভিড় উপচে পড়েছে। গ্রাম থেকে ফেরা মানুষে স্টেশন হয়ে উঠেছে জনারণ্য। ট্রেনের সময়সূচি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে, বিলম্ব ঘটেছে বেশ কয়েকটি ট্রেনের যাত্রায়। 

গতকাল শনিবার বেলা ১১টার দিকে কমলাপুর রেলস্টেশনে সরেজমিন দেখা যায়, প্রতিটি ট্রেন থেকেই ধারণক্ষমতার তুলনায় অনেক বেশি যাত্রী নামছেন। অনেকে ট্রেনের ছাদেও ভ্রমণ করেছেন। এমন চিত্র দেখা গেছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) কামড়াগুলোতেও। যাত্রীদের বেশিরভাগের মুখে নেই মাস্ক, স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়েও অনীহা চোখে পড়েছে। 

এদিকে শুধু ঢাকামুখী নয়, ঢাকার বাইরে কর্মরতরাও গন্তব্যে রওনা হয়েছেন। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানায়, রোববার (আজ) সরকারি অফিস খোলার কথা থাকায় যাত্রীচাপ বেড়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসা বনলতা এক্সপ্রেসের এক যাত্রী জমির আলী বলেন, ‘কাল থেকে অফিস, তাই আজই ফিরতে হলো। যাত্রীচাপ আর ধীরগতির কারণে ট্রেন একটু দেরিতে এসেছে।’ 

অন্যদিকে, বেলা সোয়া ১১টার দিকে সিলেটগামী জয়ন্তিকা এক্সপ্রেসের যাত্রী শামীম আহমেদ জানান, তিনি কামরাঙ্গীরচরের বাসিন্দা। ঈদের ছুটি শেষে কর্মস্থল সিলেটে ফিরে যাচ্ছেন। কমলাপুর রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক মো. সাজেদুল ইসলাম দুপুর ১১টায় সাংবাদিকদের জানান, এ পর্যন্ত ঢাকা থেকে ২৩টি এবং ঢাকায় এসে পৌঁছেছে ১৪টি ট্রেন। আজ পুরো দিনে আসা-যাওয়ার কথা রয়েছে ৭১ জোড়া ট্রেনের। 

এর মধ্যে পশ্চিমাঞ্চলের রংপুর, একতা ও বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেন তিনটি দেড় থেকে দুই ঘণ্টা দেরিতে এসেছে। এছাড়াও আরও কয়েকটি ট্রেন ১৫-২০ মিনিট দেরিতে ছেড়েছে বলে জানান তিনি। স্বাস্থ্যবিধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি নিয়ম মানাতে, তবে যাত্রীদের সচেতনতাও এ ক্ষেত্রে অত্যন্ত জরুরি।’

টানা ১০ দিনের ছুটি শেষে আজ খুলছে সরকারি অফিস : ঈদুল আজহা উপলক্ষে টানা ১০ দিনের ছুটি শেষে আজ রোববার খুলছে সরকারি অফিস, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। গত ৭ জুন দেশে মুসলমানদের দ্বিতীয় বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়। ঈদের ছুটি উপলক্ষে গত ৪ জুন ছিল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শেষ কর্মদিবস। দেশের সব গণমাধ্যমেও শেষ কর্মদিবস ছিল ওই দিন।

৫ জুন থেকে শুরু হয় সংবাদ কর্মীদের পাঁচ দিন আর সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারিদে ১০ দিনের ছুটি। সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নোয়াবের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশের সব গণমাধ্যমের ঈদের ছুটি শেষ হয় ৯ জুন। আর সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি শেষ হচ্ছে ১৪ জুন। 

এর আগে ৬ মে সচিবালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় নির্বাহী আদেশে সরকারি অফিস ১১ ও ১২ জুন ছুটি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া ঈদের আগে দুই গতকাল শনিবার অফিস চালু রাখারও সিদ্ধান্ত হয়। নির্বাহী আদেশে দুদিন ছুটির ফলে সবমিলিয়ে টানা ১০ দিনের ছুটি পান সরকারি চাকরিজীবীরা। 

উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১১ ও ১২ জুন নির্বাহী আদেশে ছুটি ঘোষণা করে গত ৭ মে প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে ১৭ ও ২৪ মে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে অফিস খোলা থাকবে বলেও প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়। সে অনুযায়ী দুই গতকাল শনিবার অফিস খোলা ছিল।