দেশের অর্থনীতির হূৎপিণ্ড চট্টগ্রাম বন্দর। এই বন্দর সচল থাকলে দেশ ভালো থাকে। চট্টগ্রাম বন্দরে ধীরগতি হলে দেশের অর্থনীতি ভালো থাকে না। কথায় আছে, টাকা উড়ে চট্টগ্রাম বন্দরে। আর সেই টাকা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
কতিপয় গোষ্ঠী বা গ্রুপ বন্দরে আগে আধিপত্য বিস্তার করেছেন, এখনো তৎপরতা বন্ধ করেননি তারা। বন্দরকে বাপ-দাদার মালিকানা সম্পত্তির মতো ভোগ করার প্রয়াস তাদের। রাজনৈতিক শক্তির বলয়ে অনিয়ম-দুর্নীতি করে টাকার কুমির বনেছেন তৎকালীন রাজনৈতিক নেতা, এমপি-মন্ত্রীরা।
বরাবরই ক্ষমতাধর রাজনৈতিক নেতা, এমপি-মন্ত্রীর হুকুম পালন করতেই হতো চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তাদের। তাদের হুকুম পালন না করলে নেমে আসত ঘোর অন্ধকার। এতে আবার ওইসব কর্মকর্তারা অলাভজনক হতো তেমন না, তারাও লাভের ভাগ পেতেন।
অনুসন্ধান ও বন্দরের কয়েকজন সিনিয়র কর্মকর্তার সাথে কথা বলে এমন তথ্য নিশ্চিত হয় দৈনিক আমার সংবাদ।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার তেমনটি না থাকলেও একধরনের চাপ সহ্য করতে হচ্ছে কর্মকর্তাদের। এই সরকারের সময়ে বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান ডেসপারেটলি কাজ করে সুনাম বয়ে আনছেন। বন্দরে সুঁই থেকে সুতা পর্যন্ত শক্ত হাতে পরিচালনা করছেন। এতে কোনো কর্মকর্তা কাজে ফাঁকি দেয়া ও অনিয়ম-দুর্নীতির সাথে জড়িত হতে পারছেন না। বন্দর নিয়ে যত ষড়যন্ত্র হোক না কেন তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেন তিনি।
সম্প্রতি নানা ষড়যন্ত্র করেও কর্মকর্তাদের বসে আনতে না পেরে বন্দরের চেয়ারম্যান, পরিবহনের পরিচালক বা ট্রাফিক ডাইরেক্টর এনামুল করিম ও যান্ত্রিক বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী এম হাবিবুল্লাহ্? আজিমসহ সিনিয়র কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে একটি চক্র বিভিন্ন কৌশলে ঘায়েল করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের ইতিহাসে ডাইনামিক চেয়ারম্যান হিসেবে যদি খেতাব দেয়ার সুযোগ থাকে রিয়াল অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামানকে দিতে হবে বলে মনে করেন বন্দর সংশ্লিষ্টরা। চট্টগ্রাম বন্দরের মেধাবী কর্মকর্তা হিসেবে পুরস্কারে ভূষিত করতে হলে ট্রাফিকের ডাইরেক্টর এনামুল করিমকে করতে হবে এবং সাদামাটা কর্মকর্তা হিসেবে যান্ত্রিক বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী এম হাবিবুল্লাহ্? আজিমকে দিতে হবে। এনামুল করিম ও হাবিবুল্লাহ আজীমের চাকরির সময়ও শেষের দিকে। এই সময়টি টার্গেট করে ষড়যন্ত্রকারীরা তাদের উপর এক ধরনের চাপ তৈরি করার চেষ্টা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
হাবিবুল্লাহ আজিমকে কোনো কিছু করতে না পেরে কতিপয় ঠিকাদারের সাথে তার নামও সংযুক্ত করে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ দেন এবং এনামুল করিমকেও চাপ দিয়ে কিছু করতে না পেরে মিথ্যা প্রচারণা করছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি। তার কথা হচ্ছে, ‘চাকরি শেষের দিকে, চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য কি করেছি সাক্ষী চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে জড়িত সবাই। কিছু বলব না, শুধু কাজ করে যাব। আমার চেয়ারম্যান স্যার অত্যন্ত বিচক্ষণ ও কর্মঠ মানুষ। কাজ ছাড়া কিছুই বুঝেন না। তিনি জানেন আমি কেমন এবং উপরে আল্লাহ জানেন, এতটুকুই।’
হাবিবুল্লাহ আজিম বলেন, ‘প্রতিদিন ক্যালেন্ডারের তারিখ কাটি। কখন অবসরে যাব। এতো প্রেসার নিতে পারছি না। চাকরি জীবনের শেষ দিকে এসে যে সব দেখছি তা মেনে নিতে পারছি না। শুধু চুপ মেরে আছি। আমাদের চেয়ারম্যান স্যারের চোখ ফাঁকি দিয়ে বন্দরের একটি সুঁই পর্যন্ত বের হতে পারে না। তিনি কোনো অনিয়ম-দুর্নীতির সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে রাখবেন না। তিনি যেমন সৎ, তেমনি সৎ কর্মকর্তাদের রেখেছেন।’
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ও মিডিয়ার মুখপাত্র আরেক ডায়নামিক কর্মকর্তা ওমর ফারুক দৈনিক আমার সংবাদকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরের এযাবতকালের সৎ, দক্ষ, মেধাবী ও দুর্নীতির জিরো টলারেন্স বাস্তবায়নকারী চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান। তিনি একমাত্র অভিভাবক হয়ে বন্দরকে অর্থনীতির মানদণ্ডের সর্বোচ্চ চূড়ায় নিয়ে গেছেন। সবার ভালো মন্দ তিনি ভালো জানেন। অনিয়মের সাথে জড়িত একজন পিয়নকেও তিনি ছাড় দেন না। কোনো ষড়যন্ত্র তার সময়ে কিছুই করতে পারবে না।’