Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

অন্তরঙ্গ ছবিতে উষ্ণতা ছড়ালো নব দম্পতি

আমার সংবাদ ডেস্ক

নভেম্বর ১, ২০২০, ১২:৪৫ পিএম


অন্তরঙ্গ ছবিতে উষ্ণতা ছড়ালো নব দম্পতি

নব বিবাহিত এক যুগল নিজেদের অন্তরঙ্গ ছবিগুলো নেট দুনিয়া দিয়ে উষ্ণতা ছড়ালো ভারতীয় এক দম্পতি। লজ্জা ভুলে একজন যুবক আর একজন যুবতী তুলে ধরেছেন তাদের গভীর ভালোবাসা। তাদের এমন উন্মুক্ত ভালোবাসা প্রকাশে কে কি চিন্তা করল তা নিয়ে আসে যায় না এই দম্পতির।

কেরালার এই যুগলের নাম লক্ষ্মী আর হ্রুশি কার্তিক। তাদেরকে দেখা যায় একটি চা বাগানের ভেতর দিয়ে একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে রেখেছেন। তাদের ওপরে শুধু সাদা একটি সিল্কের আবরণ।

শরীরের অন্য কোথাও কোনো কাপড় আছে কিনা তা বোঝা দায়। একে অন্যকে এভাবে জড়িয়ে থাকা নিয়ে নানা রকম কথা চারদিকে। কেউ কেউ প্রশ্ন করেছেন, সাদা ওই সিল্কের পরে কোনো আবরণ আছে, নাকি সবটাই উদোম। লক্ষ্মী আর হ্রুশি কার্তিকের বিয়ে হয় সেপ্টেম্বরে এক ছোট্ট অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। তারপরই তারা সিদ্ধান্ত নেন, যেহেতু বিয়েতে বড় আয়োজন সম্ভব হয়নি, তাই তারা বিয়ে বা বিয়ের পরবর্তী দিনগুলোপকে স্মরণীয় করে রাখবেন। যেমন ভাবা তেমন কাজ।

লক্ষ্মী বলেছেন, পারিবারিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে তাদের বিয়ে। লক্ষ্মীর বাড়ি কেরালার আর্নাকুলামে। তিনি বলেন, গত বছর পরিবারের সদস্যদের মধ্যে দেখাশোনা। তারপর তারা বিয়ের তারিখ ঠিক করেন। এরপরই দু’জনে একে অন্যের প্রেমে পড়ে যাই। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।

হ্রুশি একটি টেলিফোন কোম্পানিতে চাকরি করেন। লক্ষ্মী সবেমাত্র ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন। গত এপ্রিলে তারা বিলাসী এক আয়োজনে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু করোনা ভাইরাস মহামারী সব শেষ করে দিয়েছে। মার্চের শেষের দিকে দেশজুড়ে লকডাউন দেয় ভারত। সব রকম সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। তবে লকডাউন শিথিল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছোটখাট আয়োজনের বিয়ে অনুমোদন দেয়া হয়। ফলে আর দেরি করতে রাজি নন লক্ষ্মী আর হ্রুশি কার্তিক। তারা ১৬ই সেপ্টেম্বর বিয়ের দিন ধার্য করেন। এদিনই কোল্লাম শহরের একটি মন্দিরে তাদের বিয়ে হয়।

লক্ষ্মী বলেন, আনন্দঘন বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল সেটা। কারণ, এতে শুধু পারিবারিক বন্ধু ও কিছু ঘনিষ্ঠ বন্ধু উপস্থিত ছিলেন। পুলিশ আমাদেরকে মাত্র ৫০ জন অতিথির অনুমতি দিয়েছিল। এ ছাড়া ছিল নানা রকম বিধিনিষেধ। হয়ে গেল বিয়ে।

তবে এই যুগল তাদের বিয়েকে স্মরণীয় করে রাখতে একটি ফটোস্যুটের সিদ্ধান্ত নেন। হ্রুশি চেয়েছিলেন তাদের বিবাহ পরবর্তী ফটোশুট হবে রোমান্টিক ও অন্তরঙ্গ, তাই তিনি ইন্টারনেট ঘাঁটেন এবং নতুন নতুন ও যথার্থ কিছু আইডিয়া পেয়ে যান। তার বন্ধু অখিল কার্তিকিয়ান। তিনি ভাল ছবি তোলেন। তিনিই তাকে সহায়তা করেন। তারা তাকে ভাড়া করেন চায়ের বাগানে। হোটেলরুমে। সেখানেই ফটোশুটে অংশ নেন লক্ষ্মী আর হ্রুশি কার্তিক। লক্ষ্মী বলেন, সে ছিল আনন্দের বেলা। আমাদের মাঝে ছিল হাসিখেলা। আমরা ছিলাম উদ্বেলিত। এটা ছিল আসলে আমাদের হানিমুনের অংশ। যেহেতু আমরা সবেমাত্র বিয়ে করেছি, মনে হচ্ছিল এখন আমরা মুক্ত। বিবাহিত নরনারীর মধ্যে যেমন যৌবনকে উপভোগের উপলক্ষ্য থাকে আমাদের মধ্যে তার চেয়ে কম কিছুই ছিল না।

এরপরেই ওই ফটোশুট। অখিল সেইসব ছবি পোস্ট করলো ফেসবুকে। সঙ্গে সঙ্গে নানা রকম মন্তব্য। কেউ একে কুৎসিত বলছেন। কেউ বলছেন বেলেল্লেপনা। কেউ বলছেন, লজ্জাশরমের মাথা খেয়েছি। কেউ কেউ তো একে পর্নোগ্রাফিও অভিধায় অভিহিত করলো। আবার কেউ বললো এটা কনডমের বিজ্ঞাপন কিনা। কেউ কেউ তাদেরকে একটি রুম বেছে নিতে বললেন। লক্ষ্মী বলেন, দু’দিন ধরে এভাবে অপমানজনক মন্তব্য আসতে লাগলো। লোকজন বলতে লাগলো, আমরা নগ্নতাকে ফুটিয়ে তুলেছি। লক্ষ্মী বলেছেন, বেশির ভাগ অপমানসূচক কথাবার্তা এসেছে তাকে লক্ষ্য করে। তার ভাষায়, এটা আমার জন্য ছিল খুব লজ্জার। আমার স্বামীর চেয়ে আমাকে নিয়ে লোকজন বাজে কথা বলা শুরু করলো। তাদের কেউ কেউ আমাকে পর্নো ছবিতে অভিনয় করতে বললো। এতে লজ্জায় জ্বলে যাচ্ছিল গা।

কয়েকদিন পরের কথা। এবার লোকজন কার্তিককে সমর্থন করে মন্তব্য করতে লাগলো। তারা কার্তিককে সমর্থন করলো। তারা এসব ছবিকে বিস্ময়কর এবং চমৎকার বলে মন্তব্য করলো। সমালোচনাকে মাথায় না নেয়ার পরামর্শ দিল। একজন নারী লিখেছেন, যখন তারা বিয়ে করেন তখন স্বামীর হাত ধরে হাঁটার মধ্যে মানুষ নগ্নতা দেখেছে। অনেকে অনেক কথা বলেছে। লক্ষ্মী বলেন, আমাদেরকে লক্ষ্য করে যারা ট্রোল করছিলেন তাদেরকে চিনি না। আমাদেরকে যারা সমর্থন করছিলেন তাদেরকেও চিনি না। এক পর্যায়ে দেখা গেল আমাদের অভিবাবকরাও হতাশ। আমরা তাদেরকে বোঝালাম। বললাম, এটা নগ্নটা নয়। এক পর্যায়ে তারা বুঝলেন। আমাদেরকে সমর্থন দিলেন। কিন্তু আমরা পশ্চিমা ধারায় যাচ্ছি বলে কিছু আত্মীয় আমাদের সমালোচনা করলেন। তাদের কেউ কেউ আমাদেরকে ফোন করে জানতে চাইলেন, এমন ছবির কি দরকার। আমরা কি আমাদের সংস্কৃতিকে ভুলে যাচ্ছি?

অনেকেই তাদেরকে ছবিগুলো সামাজিক ওয়েবসাইট থেকে মুছে ফেলতে বললেন। পারিবারিক হোয়াটঅ্যাপ গ্রুপ থেকে তাদেরকে বাদ দেয়া হলো। তা সত্ত্বেও ওই ছবি নেট থেকে সরিয়ে নিতে রাজি নন লক্ষ্মী আর হ্রুশি কার্তিক। লক্ষ্মী বলেছেন, আমরা যদি ছবিগুলো প্রত্যাহার করি তাহলে তারা মনে করবে আমরা দোষী। অন্যায় করেছি। কিন্তু আমরা তো কোনো অন্যায় করিনি। এমনকি ওই ছবি তোলার সময় আমাদের শরীরে পোশাক ছিল, যেটা দেখা যায় না।

আমারসংবাদ/এমআর