Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪,

ফাঁসি হওয়ার পরও জীবিত!

আমার সংবাদ ডেস্ক

জানুয়ারি ৩১, ২০২১, ১১:০০ এএম


ফাঁসি হওয়ার পরও জীবিত!

মাঝে মাঝে আমরা সিনেমার গল্প দেখে অবাক হই। কিন্তু কিছু মানুষের জীবনের গল্প যেন সিনেমার গল্পকেও হার মানায়। তেমনই একজন মানুষ এন গ্রেন, যার জীবনের গল্প শুনে চমকে উঠে পুরো বিশ্ব।

অক্সফোর্ডেশিয়ারের একটি দরিদ্র পরিবারে জন্ম গ্রেনের। দারিদ্রতার কারণে ছোট্ট বয়সে স্যার থমাস রিড নামক এক ব্যক্তির বাড়িতে কাজ করতে শুরু করেন তিনি। সব ঠিক ঠাকই যাচ্ছিল। হঠাৎ সিনেমার গল্পের মতোই গ্রেন তার বাড়ির মালিকের নাতি জেফ্রির প্রেমে পড়ে যায়। সম্পর্কের এক পর্যায়ে গর্ভবতী হয়ে পড়েন গ্রেন।

কিন্তু এই খারাপ সময়ে কাউকে পাশে পাননি গ্রেন।গর্ভবতী হওয়ার ৬ মাস পরেই বাড়ির পাশের একটি ছোট ঘরে একটি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। যদিও শিশুটি খুবই ছোট ও অপুষ্টির শিকার ছিল।

তবে এর পরে যে ঘটনাটা ঘটে সেটি ছিল আরও নির্মম। গ্রেনের প্রসব বেদনার চিৎকার শুনে বাড়ির অন্য চাকররা ঘটনাস্থলে যেয়ে তাকে অন্য ঘরে নিয়ে যায় এবং শিশুটিকে জীবন্ত কবর দেয়। যদিও 
এই বিষয়ে কিছুই জানতো গ্রেন। গ্রেন তার বাচ্চার কথা জানতে চাইলে চাকররা জানাই তারা যা করেছে ঠিক কাজ করেছে। 

গ্রেনকে তারা বিভিন্নভাবে ভয় দেখায়। জানায় এইসব ঘটনা জানলে তাদেরকে মালিক পুলিশে দিবে। সবার চাপে পড়ে চুপ থাকতে বাধ্য হয় গ্রেন। 

তবে সত্যি ঘটনা বেশিদিন চাপা থাকেনা। সবার মুখে মুখে এ ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে। এক সময় বাড়ির মালিকও জেনে যায় এই ঘটনা। তার নাতির কারণেই গ্রেন গর্ভবতী হয়েছিলেন জানা স্বত্তেও  তিনি নিজের নাতিকে বাঁচিয়ে গ্রেনকে পুলিশে ধরিয়ে দেন।

তখনকার সময় শিশুহত্যার বিষয়টিকে অনেক গুরুত্ব সহকারে দেখা হতো। তাই এ ঘটনায়  অপরাধী না হয়েও মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হন গ্রেন। সঠিকভাবেই ১৬৫০ সালের ডিসেম্বরে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

তবে সব সিনেমার গল্পের মতো গ্রেনের গল্পের টুইস্ট শুরু হয় তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার পর। 

মৃত্যুদণ্ডের নির্দিষ্ট সময় পর তার মৃতদেহ যখন ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয় তখন কফিনের ঢাকনাটি খুলে চমকে যান অক্সফোর্ডের সার্জন ও গবেষক উইলিয়াম পেট্টি। তিনি বুঝতে পারেন গ্রেন নিশ্বাস নিচ্ছেন। এমন কাণ্ড দেখে তার শরীরের লোম মুহূর্তেই দাঁড়িয়ে যায় কারণ ফাঁসি হওয়ার পর কারও বেঁচে থাকার ঘটনা বিরল। 

পেট্টি তার সব জ্ঞান ও প্রচেষ্টা দিয়ে গ্রেনকে সুস্থ করার জন্য উদগ্রীব হয়ে ওঠেন। গরম উত্তাপ দিয়ে ও মালিশ করে গ্রেনের জ্ঞান ফেরানো হয়। কাউকে না জানিয়ে এক নার্সকে সঙ্গে নিয়ে গ্রেনের সেবা-যত্ন করা শুরু করেন তিনি। তাদের সেবা যত্নে এক মাসের মধ্যে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠেন গ্রেন।

তবে অনেক চেষ্টা করেও ঘটনাটি লুকিয়ে রাখতে পারেননি পেট্টি। সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে গ্রেনের নাম। এরপর গণমাধ্যমে পেট্টি এ ঘটনার কথা জানান। বিভিন্ন পত্রিকায় গ্রেনের অলৌকিকভাবে বেঁচে থাকার ঘটনা প্রচার হতে থাকে। এরপর পেট্টি গ্রেনের সঙ্গে ঘটা সব ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে জানান। তিনি আরও জানান, কীভাবে তিনি অপরাধী না হয়েও মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন।

সব প্রকাশ্যে আসার পর আদালতে আবারো গ্রেনের মামলাটি খোলা হয়। সব তথ্য-প্রমাণাদি বিবেচনা করে আদালত কর্তৃক খালাস দেন গ্রেনকে। 

গ্রেন পরবর্তীতে বিয়ে করেন। তিন সন্তানের জননী গ্রেন ১৬৬৫ সালে আরেকটি সন্তান প্রসবের সময় মারা যান।

আমারসংবাদ/এডি