Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

জুনায়েদ বাবুনগরীর মৃত্যু ও ভ্যাকসিন গুজব

আগস্ট ২১, ২০২১, ০৩:০০ পিএম


জুনায়েদ বাবুনগরীর মৃত্যু ও ভ্যাকসিন গুজব

আল্লামা বাবুনগরী বাংলাদেশে গত এক দশকেরও বেশি রাজনীতিতে আলোচিত ও সমালোচিত ব্যক্তিত্ব। গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা আমি শাহ আহমেদ শফির মৃত্যুর পর কওমি মাদ্রাসা কেন্দ্রিক সংগঠনটির নেতৃত্বে আসেন বাবুনগরী, গত বছরের ১৫ নভেম্বর সম্মেলন করে তাকে আমির ঘোষণ করেন হেফাজত ইসলাম।

আহমেদ শফির মৃত্যুর পর কম সমালোচিত হননি এই বাবুনগরী। আহমেদ শফির অনেক অনুসারী এখনও মনে করেন থাকেন শফির মৃত্যুর জন্য বাবুনগরী দায়ী। বাবুনগরী ও তার অনুসারীদের কে গ্রেফতার বা শাস্তির দাবিতে গত কয়েক এক মাস যাবত সরকারের কাছে দাবী জানিয়ে আসছেন শফির অনুসারীরা।

সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল শফির মৃত্যুতে হত্যার অভিযোগে যে মামলাটি হয়েছিল সেই অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ার কথা জানায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত সংস্থা পিবিআই। বাবুনগরী হেফাজতের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই একটা অস্থিরতার মধ্যে যাচ্ছিল হেফাজত ইসলাম। অবশেষে ১৮ আগস্ট বাবুনগরীর মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে একটা অধ্যায়ের অবসান হল। 

হেফাজতের আমির বাবুনগরী বেশ কিছুদিন যাবত বিভিন্ন বার্ধক্য জনিত রোগে ভুগছিলেন। বিশেষ করে তিনি ডায়বেটিক,  কিডনি, উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ সহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় ভুগছিলেন। তিনি চলতি মাসের আট আগষ্ট চট্টগ্রামের হাটাজারির স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ গিয়ে চায়নার সিনোফার্মের ভ্যাকসিন/টিকা  গ্রহণ করেন।

গতকাল বাবুনগরীর মৃত্যুর পর ইতিমধ্যেই সারা দেশজোড়ে তার অনুসারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে যে সিনোফার্মের ভ্যাকসিন নেওয়ার পর তাঁর শারীরিক অবস্থা অবনতি দিকে চলে যায় এবং ভ্যাকসিন নেওয়ার বারো দিনের মাথায় উনার মৃত্যু হয়।

যদিও এই বাবুনগরী এক সময়ে করোনার ভ্যাকসিন নেওয়ার ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করেছিলেন এবং এটি (ভ্যাকসিন) ইসলাম সম্মত নয় বলে তার মতামত প্রকাশ করেন,কিন্ত যেই দিন উনি ভ্যাকসিন গ্রহণ করলেন সেই দিন ভ্যাকসিন সম্পর্কে তিনি বলেন ভ্যাকসিনকে হারাম বা নাজায়েজ বলা যাবে না শরিয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে। চিকিৎসা বিজ্ঞান শরিয়তের জায়েজ এবং চিকিৎসা বিধি মেনে চলতে হবে সবাইকে, তাই আমি ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছি। ইনশাল্লাহ কোন সমস্যা হয়নি।

এখানে মূল বিষয় হচ্ছে বাবু নগরীর ভ্যাকসিন গ্রহণ করার পর তাঁর মৃত্যু নিয়ে উনার অনুসারীদের মধ্যে যে ভ্যাকসিন নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সেটি বৈজ্ঞানিক ভাবে সিনোফার্ম বা চায়নার অস্পষ্ট বক্তব্যের কারণেই। কারণ করোনা ভাইরাসের কোন ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে চীনের কোন ভ্যাকসিন বা টিকা কোনটা কার্যকর কিংবা এইসব ভ্যাকসিন এর কোন গুরুতর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে কিনা চীন তার গবেষণায় এখন পর্যন্ত স্পষ্ট করেনি। 

এদিকে আশ্চর্যজনক বক্তব্য দিয়েছেন চীনের সংক্রামকব্যাধি বিশেষজ্ঞ জং নাং সাংকে।

তিনি বলেছেন যেই গবেষণার ভিত্তিতে চীন তাদের ভ্যাকসিন এর কার্যকারতা কথা বলেছেন তা এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছেন। 

শুধু তাই নয় চায়নিজ সেন্টার ফর ডিজিট কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশনের সাবেক উপপরিচালক ফেং জিয়াং সম্প্রতি চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত সেন্টাল টেলিভিশনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন চীনের তৈরি দুইটা ভ্যাকসিন করোনা ডেন্টালের বিরুদ্ধে কম কার্যকর। তবে তিনি কৌশলে ভ্যাকসিন দুইটির নাম উল্লেখ করেন নি ।অথচ মডার্না ও ফাইনার সহ বিভিন্ন দেশ তাদের ভ্যাকসিন এর বিস্তারিত প্রতি মুহুর্তে তুলে ধরেন। যার ফলে চীনের ভ্যাকসিন থেকে অন্যান্য ভ্যাকসিন এর প্রতি গণ মানুষের আস্থা বেড়েছে।ফাইজার মডার্নার ভ্যাকসিন যেই প্রযুক্তিতে তৈরি হয়েছে তা এমআরএনএ নামে পরিচিত। এতে মানুষের দেহে একটি মেসেন্জার সিকুয়েন্স প্রবেশ করানো হয় যাতে জেনেটিক নির্দেশ থাকে।এ নির্দেশে ঐ ব্যক্তির দেহ কৃষকের অ্যান্টিজেন উৎপাদনের কথা বলা হয় এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়।এমআরএনএ আধুনিক বিশ্বে সব চেয়ে প্রযুক্তি সম্পন্ন বলা হয় যা একে বারেই নতুন। 

ফলে যে বিষয়টি পরিষ্কার হচ্ছে পৃথিবীর প্রতিটা ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী রাষ্ট্র তাদের উৎপাদিত ভ্যাকসিন নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা প্রকাশ করলেও চীন বরাবরই তা থেকে বিরত থেকেছে।ফলে স্বাভাবিক ভাবেই সাধারণ মানুষের মাঝে চায়নার তৈরি সিনোফার্মের ভ্যাকসিন নিয়ে একধরনের ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে যা বাবু নগরীর মৃত্যুর মধ্য দিয়েই এই সন্দেহ আরও পাকাপোক্ত হয়েছে।যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদনের মধ্য দিয়ে সিনোফার্ম তার গ্রহনযগ্যতা ফিরে পেয়েছে। তাই সাধারণ মানুষের মাঝে এই ভ্যাকসিন নিয়ে যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে তা চায়নার কর্তৃপক্ষকে আরও বিভিন্ন গবেষণা পত্রে ভ্যাকসিন এর কার্যকারিতা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষের উদ্বেগ দুর করার দায়িত্ব নিতে হবে। না হলে আগামী দিনে সিনোফার্মের ভ্যাকসিন নিয়ে সাধারণ মানুষের মৃত্যুতে এই ভাবে সরকারের ভ্যাকসিন কর্মসূচি মারাত্মক ভাবে ব্যাহত হওয়ার আশঙ্ক রয়েছে।

ইব্রাহিম মনোয়ার
শিক্ষার্থী, 
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
 ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


আমারসংবাদ/ইএফ