Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪,

ওদের একজন সামসুল আলম সাদ্দাম আছে 

ওয়াহিদ তাওসিফ মুছা

নভেম্বর ৩, ২০২১, ০৫:২০ পিএম


ওদের একজন সামসুল আলম সাদ্দাম আছে 

বিভিন্ন অনুষ্ঠানকে ঘিরে প্রচুর টাকা খরচ করে নতুন জামাকাপড়, প্রসাধনী আরো নানা রকম কেনাকাটা আজকালকার দিনে এক নতুন সংযোজন। বিশেষ করে পরিবারের শিশুদের জন্য বাড়তি কেনাকাটা তো থাকেই। কিন্তু উৎসব ঘিরে এতো সব আতিশয্যের ভিড়ে কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছে মানবিকতা।

সব কিছু থাকলেও কোথায় যেন ছিড়ে যায় শান্তির সুতা। যদি আমরা সত্যিকারের শান্তি খুঁজে পেতে চাই এবং মিথ্যার বিরুদ্ধে সত্যের যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চাই, তবে তা শুরু করতে হবে শিশুদের দ্বারা। শান্তিময় পৃথিবীর অন্বেষণ মানবসভ্যতার আদি লক্ষ্য এবং নিঃস্বার্থ ভালোবাসাই সেই লক্ষ্যপূরণের একমাত্র হাতিয়ার। সৃষ্টির জন্মলগ্ন থেকে শিশুরা নিঃস্বার্থ ভালোবাসার একমাত্র প্রতীক। তথাকথিত আধুনিক সভ্যতার জাঁতাকলে পিষ্ট নিষ্পাপ শিশুদের পরিচয় এখন বিভক্তিময়। আজ তাদের একটি অংশ সমাজে পথশিশু, ছিন্নমূল, টোকাই, পথকলি ইত্যাদি নামে পরিচিত।

রাজধানীসহ সারা দেশে লাখ লাখ শিশু রয়েছে, পথেই যাদের জন্ম, পথেই বেড়ে ওঠা আর পথেই বসবাস। তাদের অধিকাংশের আবাসস্থল হল রাস্তাঘাট, রেলস্টেশন, বাস টার্মিনাল, অফিস চত্বর, পার্ক অথবা খোলা আকাশের নিচে। জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে নানা ধরনের অবহেলা আর বঞ্চনার শিকার হতে হয় এসব শিশুকে। শৈশব পেরিয়ে কৈশোরে উত্তীর্ণ হওয়ার আগেই অনেকটা বাধ্য হয়ে তারা জড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে। প্রশ্ন হল, সমাজের মূলধারা থেকে ছিটকে পড়া এসব শিশুর জন্য কী করা হচ্ছে? কোনো বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে কি তাদের জন্য?
আপনার সন্তান কিংবা পরিবারের ছোট সদস্যটির বয়সীই অন্য একটি শিশু যারা পরিবারের টাকা খরচ করে দামি পোশাক কেনার সামর্থ্য নেই, একমুঠো মাংসের জন্য যারা দাঁড়িয়ে থাকে আপনাদের দরজায় সেসব শিশুদের কথা কজনেই বা ভাবে? যারা ভাবেন তাদের সংখ্যাও ঢের কম। তাদের মাঝে এমনই একজন সামসুল আলম সাদ্দাম।

সবাই যখন ব্যস্ত থাকেন পরিবার ও বন্ধুদের সাথে, তখন ঢাকার বস্তি থেকে বস্তিতে ঘুরে বেড়ান তিনি। ঘুরে বেড়ান টিএসসিসহ ঢাকার চেনা- অচেনা রাস্তায়। ঘুরে ঘুরে সুবিধাবঞ্চিত-আনন্দবঞ্চিত শিশুদের পাশে। কখনও বা ময়লা জামা গায়ে দেয়া শিশুদের পরম স্নেহে জড়িয়ে নেন বুকে। শিশুদেরকে নিজ হাতে নতুন পোশাক পরিয়ে দেয়ার মাঝেই তারা খুঁজে নেন তার নিজেকে। সুবিধাবঞ্চিত এসব শিশুদের নিয়ে তার রয়েছে নানা পরিকল্পনা, স্বপ্ন, অনুভূতি, ভালবাসা। পৃথিবীর সবকিছু শেষ হয়ে যেতে  পারে তবু বিধাতা মাথার উপরে আছেন৷ বিশাল সাগরের বুকে প্রবল ঢেউ আসলেও তিনিই পথ বাতলে দেন৷ পাশে দাঁড় করিয়ে দেন সাদ্দামদের৷ তাদের সাথেই বসেন সাদ্দাম, শুনেন তাদের কথার আড়ালে অতৃপ্ত যন্ত্রণাকে, জানতে চান জীবনকে, জীবনের সাথে জীবনের গল্পকে। দেখতে চান পর্দার আড়ালে অযত্ন-অবহেলায় ঝরে যাওয়া সম্ভবনাকে। কাছে গিয়ে আরও অনেক কিছুই শুনতে ইচ্ছে করে তার, কিন্তু কি লাভ বিষাদ বাড়িয়ে!

আমারসংবাদ/এমএস