Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

নামজারির আবেদনে দলিল থাকছে না   

নিজস্ব প্রতিবেদক 

নিজস্ব প্রতিবেদক 

মে ২৩, ২০২২, ০১:৫৩ এএম


নামজারির আবেদনে দলিল থাকছে না   

ভূমিসেবা ডিজিটালাইজেশনের সরকারি উদ্যোগ কার্যকর করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ভূমি ব্যবস্থাপনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ তথা— নামজারি, ভূমি উন্নয়ন কর, খতিয়ান, পর্চা, জরিপ এবং জমির ম্যাপ সম্পর্কিত কাজ করে ভূমি মন্ত্রণালয়। অন্যদিকে ভূমি নিবন্ধন সম্পর্কিত কাজ করে আইন মন্ত্রণালয়। ভূমি মন্ত্রণালয়ের নামজারি ও খতিয়ানের ডাটাবেজ প্রস্তুত এবং আইন মন্ত্রণালয়ের আওতায় সম্পন্ন নিবন্ধনের কাজগুলো সমন্বয় করা হবে। 

(নিবন্ধন ও নামজারি) শিগগিরই ই-নামজারির জন্য আধুনিক ফরম চালু করা হবে। এই ফরম চালু হলে আবেদন করার সময় আবেদনে ত্রুটি আছে কি-না তা বোঝা যাবে। এ ছাড়া কলসেন্টারের মাধ্যমেও নামজারির আবেদন জমা দেয়া যাবে। জমির যেসব ডকুমেন্ট সরকারের কাছে রক্ষিত আছে তার কপি আর নাগরিককে নামজারি আবেদনের সময় জমা দিতে হবে না। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে নিবন্ধন দলিলমূলেও নামজারি করা হবে। 

এতে জমি হস্তান্তরে নতুন করে নামজারির প্রয়োজন হবে না। এসব উদ্যোগ পুরোদমে কার্যকর হলে জমির মালিকানা হস্তান্তরের ভোগান্তি অনেকাংশে কমে আসবে। ভূমিসেবা সপ্তাহ-২০২২ উপলক্ষে নতুন ফরম চালুর কার্যক্রম দ্রুত অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে আগামী মাসেই নতুন ফরম চালু করা সম্ভব হবে। ইতোমধ্যে ৬৫ লাখ নামজারি আবেদনের মধ্যে ৫৭ লাখ আবেদন নিষ্পত্তি হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ‘ভূমি অফিসে না এসে ভূমিসেবা গ্রহণ করুন’ প্রতিপাদ্যে গত ১৯ মে ভূমিসেবা সপ্তাহ ২০২২-এর উদ্বোধন করা হয়। অনুষ্ঠানে ভূমিসেবা সপ্তাহ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রদত্ত (রেকর্ডেড) শুভেচ্ছা বার্তা প্রদর্শন করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. মকবুল হোসেন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন। 

ভূমি সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান পিএএ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। সেবা সপ্তাহটি আগামী ২৩ মে পর্যন্ত চলার কথা রয়েছে। ২২  মে বাংলাদেশের আটটি বিভাগে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় কমিশনাররা স্থানীয় গণমাধ্যমের সাথে ভূমিসেবা বিষয়ক মতবিনিময় ও সংবাদ সম্মেলন করবেন। 

সারাদেশের ভূমি অফিসগুলো সেবা দেয়ার জন্য সেবা ক্যাম্প স্থাপন করেছে। (খতিয়ান/পর্চা) এ যাবৎ পাঁচ কোটি ১৩ লাখ খতিয়ান ডিজিটাইজ করা হয়েছে। একটি খতিয়ান থেকে পরবর্তীতে কতটি খতিয়ান তৈরি হয়েছে তাও জানা যাবে ডিজিটাল সিস্টেম থেকে। 

এতে বোঝা যাবে মূল খতিয়ানের অন্তর্গত জমি এবং মূল খতিয়ানের অন্তর্গত অন্যান্য খতিয়ানের জমির পরিমাণের মধ্যে সামঞ্জস্য। এ ছাড়া খতিয়ান ডাটাবেজ নিবন্ধন প্রক্রিয়ার সাথে সমন্বয় করা হলে একই জমি বারবার বিক্রি হওয়ার কোনো ধরনের সুযোগ থাকবে না এবং জাল দলিল তৈরি রোধ হবে। এরই সাথে এখন কিউআর কোড দিয়েও দলিলের সঠিকতা এখন যাচাই করা যাচ্ছে। 

(জরিপ এবং ম্যাপ) ‘মৌজা ও প্লট ভিত্তিক ডিজিটাল ভূমি জোনিং’ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের সব মৌজায় ডিজিটাল ও স্যাটেলাইট ইমেজের মাধ্যমে মানচিত্র তৈরি করে ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে। গত ১২ মে মৌজা ও প্লট ভিত্তিক জাতীয় ডিজিটাল ভূমি জোনিং প্রকল্পের ক্রয় পরিকল্পনা অনুমোদন দেয়া হয়েছে। 

দেশের এক লাখ ৩৮ হাজার ৪১২টি মৌজা ম্যাপ ডিজিটাইজ করার ব্যবস্থা নেয়া হবে। ওই ডিজিটাইজ ম্যাপের সাথে ক্রয়কৃত স্যাটেলাইট ভূমির ছবি সমলয় করা হবে। এই প্রকল্প কার্যকর হলে কার্যকর ডিজিটাল ক্যাডাস্ট্রাল ম্যাপ তৈরি হবে। একটি ক্লিকেই দেখা যাবে জমির শ্রেণি কি এবং জমির মালিক কে। 

এছাড়া, অল্প কিছু দিনের মধ্যে পটুয়াখালী এবং বরগুনা জেলায় ‘বাংলাদেশ ডিজিটাল সার্ভে’ তথা ‘বিডিএস’ শুরু হবে, যা পর্যায়ক্রমে সব জেলায় সম্প্রসারণ করা হবে। বিডিএস শেষ হলে বাংলাদেশে মাঠ পর্যায়ে গিয়ে ভূসম্পদ সংক্রান্ত জরিপ তথা ক্যাডাস্ট্রাল সার্ভে করার আর প্রয়োজন হবে না।

(ভূমি উন্নয়ন কর) ২.৫ কোটি হোল্ডিং ডিজিটাইজ করা হয়েছে, বাকিগুলোও খুব দ্রুত শেষ হবে। মানুষ এখন ইউনিয়ন ভূমি অফিসে না গিয়েই ভূমি কর দিতে পারছেন। বর্তমানে এনআইডি দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে কিংবা রেজিস্ট্রেশন ছাড়া— দুভাবেই ভূমি কর জমা দেয়া যাচ্ছে। 

এনআইডি নম্বর দিয়ে রেজিস্ট্রেশন ছাড়া সরাসরি ভূমি উন্নয়ন কর প্রদানের ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, মূল ভূমি উন্নয়ন কর ব্যবস্থায় জমির মালিকের প্রোফাইলে না ঢুকেই জমির মালিকের নিবন্ধিত ও হোল্ডিং এন্ট্রি সম্পন্নকৃত জমির ভূমি উন্নয়ন কর দেয়া যাবে। অর্থাৎ যেকোনো ব্যক্তি ভূমি উন্নয়ন কর অপরের পক্ষেও দিতে পারবেন। 

এই ব্যবস্থা অতিকর্মব্যস্ত মানুষের জন্য সুবিধাজনক হবে। তবে সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য দাখিলা যেন কেবল জমির মূল মালিক গ্রহণ করতে পারেন তা নিশ্চিত করা হবে। ভূমি উন্নয়ন কর প্রদানের সাথে সাথে দাখিলা প্রদানের বিষয়টিও বিবেচনাধীন আছে।

এখন পর্যন্ত প্রায় তিন কোটি আট লাখ সুবিধাভোগী অতিরিক্ত খরচ ছাড়াই ভূমি উন্নয়ন কর প্রদানের জন্য নিবন্ধন করেছেন। জমির তিন কোটি জমির তথ্য ইতোমধ্যে ম্যানুয়াল থেকে ডিজিটালে রূপান্তরিত হয়েছে। প্রায় ৭০ শতাংশ নাগরিক স্বচ্ছভাবে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করেছেন। 

অন্তত ৫০ শতাংশ নাগরিকের হয়রানি কমেছে। প্রতিদিন ৩০-৪০ লাখ টাকা তাৎক্ষণিকভাবে সরকারি কোষাগারে জমা দেয়া হয়েছে। (সার্বিক ব্যবস্থাপনা) আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে সমগ্র দেশের ভূমি ব্যবস্থাপনা স্বয়ংক্রিয় করার লক্ষ্যে গ্রহণ করা হয়েছে ‘ভূমি ব্যবস্থাপনা অটোমেশন প্রকল্প’।

 ভূমি মালিকানা প্রমাণের জন্য উপর্যুক্ত অনেকগুলো দলিলাদির বদলে একটি ‘ভূমি মালিকানা সনদ’ তথা ‘সার্টিফিকেট অব ল্যান্ড ওনারশিপ’ চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। (আইন ও বিধি-বিধান) ভূমি সংস্কার আইন, ভূমি উন্নয়ন কর আইন এবং হাট ও বাজার (স্থাপন ও ব্যবস্থাপনা) আইন ইতোমধ্যে মন্ত্রিপরিষদে অনুমোদন পেয়েছে। এছাড়া ভূমি মালিকানা ও ব্যবহার আইন এবং ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকারসহ বেশ কিছু প্রয়োজনীয় আইন খুব শিগগিরই মন্ত্রিপরিষদে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে।

ভূমিসেবা সপ্তাহ-২০২২ এর উদ্বোধনের দিন (গত ১৯ মে) ভূমিমন্ত্রী কর্তৃক উদ্বোধনকৃত ভূমি রাজস্ব মামলা ব্যবস্থাপনা সিস্টেমের উদ্দেশ্য সব অভ্যন্তরীণ মামলা (মিস কেস, রিভিউ ও রেন্ট সার্টিফিকেট) একই প্লাটফর্মে পরিচালনা করা, অনলাইনে মামলার অবস্থা মনিটরিং সুপারভাইজ করা, দেওয়ানি মামলা ব্যবস্থাপনা ও একটি পরিপূর্ণ ডাটাবেজ তৈরি ইত্যাদি। এছাড়া, একই দিন উদ্বোধনকৃত  ভূমিসেবা কিয়স্ক (করড়ংশ) বিভিন্ন জনবহুল এলাকা যেমন স্টেশন, বিপণি-বিতান, উপজেলা অফিস কমপ্লেক্স ইত্যাদি জায়গায় স্থাপন করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। 

নাগরিক প্রয়োজনীয় ফির বিনিময়ে জমির খতিয়ান, জমির ম্যাপ প্রিন্ট করতে পারবেন। দিতে পারবেন ভূমি উন্নয়ন কর। এ ছাড়া জানা যাবে নামজারি আবেদনের আপডেট। (মানবসম্পদ উন্নয়ন) ভূমি মন্ত্রণালয় ভূমি কর্মকর্তাদের পারফরমেন্স মনিটরিং করা শুরু করেছে, অভ্যন্তরীণ প্রতিযোগিতায় পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। ভালো কাজের স্বীকৃতি সরূপ ভূমিসেবা সপ্তাহ-২০২২ উপলক্ষে আটজন সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) বিভাগীয় পর্যায়ে ও একজন জোনাল সেটলম্যান্ট অফিসার ও দুজন চার্জ অফিসারকে জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কার দেয়া হয়েছে। 

গতকাল ২২ মে বাংলাদেশের ৬৪ জেলায় জেলা পর্যায়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি), কানুনগো, সার্ভেয়ার, ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা, ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা, সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার, উপ-সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার এবং সেটেলমেন্ট সার্ভেয়ারদের মধ্যে থেকে জেলা ও জোনাল পর্যায়ে নিজ নিজ পদবির ক্যাটাগরিতে সেরা ভূমি কর্মকর্তাদের পুরস্কৃত করা হবে। প্রয়োজনীয় আইন ও বিধি-বিধান প্রণয়ন এবং সার্বিকভাবে ভূমি ব্যবস্থাপনা সম্পূর্ণভাবে ডিজিটাল হলে বাংলাদেশে ভূমি ব্যবস্থাপনায় যুগান্তকারী ও আমূল পরিবর্তন হবে এবং দক্ষ ও টেকসই  ভূমি ব্যবস্থাপনায় অভূতপূর্ব অগ্রগতি সাধিত হবে।   
 

Link copied!