Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪,

পাঁচ বছরের প্রেম শেষে ধর্ষণ মামলা!

মিরাজ আহমেদ, মাগুরা

জুন ১৭, ২০২০, ০৬:৫৫ পিএম


পাঁচ বছরের প্রেম শেষে ধর্ষণ মামলা!

কলেজ জীবনে এই প্রেমিক জুটির প্রায় পাঁচ বছরের প্রেম। কয়েক মাস ধরে প্রেমিকার বিয়ের প্রস্তাবে সাড়া দেয় না প্রেমিক। পরে সুযোগ পেয়ে প্রেমিককে ঝাপটে ধরে প্রেমিকার একই কথা ‘আমাকে বিয়ে করো, আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না।’ পরে বিষয়টি গড়ায় মাগুরা জেলা সদর থানা পুলিশ পর্যন্ত। করা হয় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মাগুরা সদর উপজেলার ২ নং আঠারোখাদা ইউনিয়নের মিরকিডাঙ্গা গ্রামের শান্তিরাম মণ্ডলের মেয়ে পপি মণ্ডলের (২৫) সাথে একই ইউনিয়নের ধনুখালি গ্রামের মৃত পরিমল বিশ্বাসের ছেলে মিন্টু বিশ্বাস (৩১) দীর্ঘদিন প্রেমের সম্পর্কের জেরে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তোলে।

মিন্টু সোনালী ব্যাংক কাশিয়ানী উপজেলা শাখায় সিনিয়র অফিসার। কর্মস্থল ফরিদপুর জেলার কাশিয়ানী উপজেলায় তার বাসায় নিয়ে শাঁখা সিঁদুর পরিয়ে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে রাত্রিযাপন করে। একপর্যায়ে পপি মিন্টুকে বিয়ের জন্য চাপ দিলে সে অসম্মতি জানায়। পরবর্তীতে পপি তার বাবা-মাকে ঘটনাটি খুলে বলে। মেয়েটির বাবা শান্তিরাম মণ্ডলের ছেলের বাড়িতে গিয়ে তার অভিভাবক রমেন বিশ্বাস ও বড়ভাই পলাশ বিশ্বাসকে জানালে তারা সামাজিকভাবে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দেয়।

সবাই বিষয়টি মেনে নেয়, একপর্যায়ে মিন্টু গত ৪ জুন অন্য একটি মেয়েকে বিয়ে করে। তারই জেরে ৭ জুন চরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাগুরা সদর আঠারোখাদা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় ব্যক্তিরদের নিয়ে সালিশের ব্যবস্থা করা হয়।

আঠারোখাদা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সঞ্জিবন বলেন, ওই বিষয়টি উভয় পরিবারের সদস্যদের সম্মতিতে জুরিবোর্ড গঠন করে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, ‘উভয় পরিবার আজ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে সামাজিকভাবে তাদের পুনরায় বিয়ে দেবেন।

মিন্টুর চাচা নিরোধ কুমার বলেন, গত ৪ জুন গোপনে মিন্টু অন্য একটি মেয়েকে বিয়ে করে এবং বিষয়টি গোপনীয় রাখে। আমরা সেটি না জেনেই ৭ জুন চরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সালিশে বসি মীমাংসার জন্য। বিষয়টি ইউনিয়নের মেম্বার চেয়ারম্যান সালিশ করে কোনো সমাধান করতে পারেনি বলে জানান।

মিরকিডাঙ্গা ও ধনুখালীর গ্রামবাসী, তারা মনে করেন বিষয়টি আস্তে আস্তে পরিবার দুটির মধ্যে সংঘর্ষের দিকে যাচ্ছে। তৃতীয় পক্ষ এর সুবিধা ভোগ করছে।

১৫ জুন মাগুরা সদর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করে ভুক্তভোগী এবং ঘটনার সত্যতা প্রমাণ করার জন্য একটি ভিডিও বার্তা দেন ভুক্তভোগী ওই কলেজছাত্রী। মিন্টু তার কর্মস্থল ফরিদপুর জেলায় কাশিয়ানী উপজেলায় নিজ বাসায় নিয়ে শাঁখা সিঁদুর পরিয়ে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে রাত্রিযাপন করে।

তিনি আরও বলেন, মিন্টু আমাকে তার একাধিক আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে যায়, বিভিন্ন সময় আমাদের মাঝে নানা শারীরিক সম্পর্ক হয়। মন্দিরে সে আমাকে সিন্ধুর পরিয়ে দেয়।

বাদি পপি মণ্ডল ১৫ জুন মাগুরা সদর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করে। আসামি নাছোড়বান্দা প্রেমিক আগে বিয়ে করতে রাজি হলেও এখন বেঁকে বসেছে। এখন আর বিয়ে করবে না।

তাই পাঁচ বছর প্রেমে শেষে প্রেমিকের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করেছে প্রেমিকা। পপি মাগুরা আদর্শ কলেজের অনার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় একবার পপি আত্মহত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।

এরপর থেকে যোগাযোগ কমিয়ে দেয় প্রেমিক মিন্টু, কিন্তু ততদিনে পপির বিয়ের বেশ কয়েকটি সম্বন্ধ ফিরে যাওয়ায় তিনি দিশাহারা হয়ে পড়েন। সে এখনো মনে করে সব ঠিক হয়ে যাবে এবং তাদের আবার সামাজিকভাবে বিয়ে হবে।


মিরকিডাঙা গ্রামের বাসিন্দা পপির পরিবারের মন্তব্য পেলেও ধনুখালী গ্রামের বাসিন্দা মিন্টু বিশ্বাসের বাড়িতে গেলেও তাদের পরিবারের কোনো সদস্যের সাক্ষাৎ পাওয়া যায়নি।

মিন্টুর প্রতিবেশীদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারা মুখ খুলতে রাজি হননি। তারা আরো বলেন, আমাদের কোনো বিষয় জানা নেই।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে মাগুরা থানার ইন্সপেক্টর (ওসি) জয়নুল আবেদীন বলেন, মিন্টুকে প্রধান আসামি করে গত ১৫ জুন তিনজনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা হয়েছে। মাগুরা জেলা থানা পুলিশ পুরো বিষয়টি সঠিক তদন্ত করছে।

আমারসংবাদ/এসটিএম