Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪,

কুষ্টিয়ার খামারিদের ঘুম হারাম

নজরুল ইসলাম মুকুল, কুষ্টিয়া

জুলাই ১৩, ২০২০, ০৫:২৭ এএম


কুষ্টিয়ার খামারিদের ঘুম হারাম

কুষ্টিয়া সদর উপজেলার আইলচারা গ্রামের আলমগীর হোসেন, দীর্ঘ ২০ বছর ধরে কোরবানির জন্য গরু পালন করে আসছেন। প্রতি বছর কমবেশি লাভের মুখও দেখেন তিনি। গরু পালনের মাধ্যমে সংসারে সুদিন ফিরিয়েছেন এই খামারি। এবার কোরবানির ঈদ উপলক্ষে তিনি ৯টি গরু লালন পালন করেছেন।

তবে এবারের ঈদ সামনে রেখে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে আলমগীরের। করোনার কারণে দেশের টালমাটাল অবস্থায় গরু বেচে লাভ তো দূরে থাক আসল ফেরত আসবে কি-না তা নিয়ে ঘুম হারাম হয়ে গেছে তার। শুধু আলমগীর হোসেন নয়, একই অবস্থা জেলার ৩৪ হাজার গোখামারির।
বেশ কিছু বছর ধরে কোরবানির বাজারে কুষ্টিয়ার গরুর আলাদা কদর রয়েছে। এ কারণে এ জেলায় দিন দিন গরু পালনে ঝুঁকছেন মানুষ।

জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের হিসাব মতে, জেলায় এবার প্রায় এক লাখ পাঁচ হাজার গরু পালন করা হয়েছে কোরবানির জন্য। গত বছর এ সংখ্যা ছিলো ৯০ হাজার।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সিদ্দীকুর রহমান বলেন, এখানে উৎপাদিত গরুর ৩০ ভাগেই স্থানীয় মানুষের চাহিদা মিটে যায়। বাকি ৭০ ভাগ গরু চলে যায় ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাজারে। তবে এবার করোনার কারণে গরুর বাজার অনেকটা সংকুচিত হয়ে পড়তে পারে। এতে করে খামারিরা বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন।

খামার মালিক আলমগীর হোসেন বলেন, প্রতি বছর তিনি বড় সাইজের গরু পালন করেন। তার খামারের গরু ঢাকা-চট্টগ্রামের বাজারে প্রতিটি পাঁচ থেকে আট লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন। ঈদের দেড় মাস আগে থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম থেকে ব্যাপারীরা হয় ফোনে অথবা সরাসারি যোগাযোগ করে গরু কিনে নিতো। তবে এবার ঈদ এগিয়ে এলেও কোনো ব্যাপারী তার সাথে যোগযোগ করেনি। এতে তার মনে মারাত্মক শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

তিনি বলেন, এবার হয়তো গরু বেচে আসল টাকাও উঠবে না। কুমারখালী উপজেলার সদকী ইউনিয়নের দরবেশপুর গ্রামের  খামার মালিক সোহেল রানা বলেন, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে গরু পালন করছেন। গরুর খাবার গমের ছাল, ভুসি, বিচুলির দাম নাগালের বাইরে।

এই অস্থায় গরু পালন করে এখন তিনি বড় ধরনের লোকসানের মুখোমুখি। তার চিন্তা ব্যাংক ঋণ শোধ দেবেন কি করে। সদর উপজেলার আইলচারার লিপি খাতুন দুটি গরু পালন করেছেন। কথা ছিল তার স্বামী এই গরু নিয়ে ঢাকার গাবতলী হাটে নিয়ে যাবেন।

কিন্তু করোনার ভয়ে তিনি ঢাকা যেতে চাইছেন না। তাই রু কোথায় কিভাবে বিক্রি করবেন তা নিয়ে চিন্তাই পড়ে গেছেন লিপি খাতুন। তবে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন অনলাইনের মাধ্যমে গরু বিক্রির মাধমে গোখামারিদের দুর্ভোগ লাঘবে চেষ্টা চালাচ্ছেন।

জেলা প্রশাসক জানান, ইতোমধ্যে একটি ফেসবুকে পেজ খোলা হয়েছে। সেখানে অনেক খামারি তাদের গরুর ছবি, ওজন ও প্রত্যাশিত দাম উল্লেখ করে পোস দিচ্ছেন। এ মাধ্যমে এরই মধ্যে কয়েকটি গরুর বিক্রি হয়েছে বলে তিনি জানান। পাশাপাশি খামারিরা যাতে নির্বিঘ্নে গরু নিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রামের হাটে যেতে পারেন, সে ব্যাপারে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে আসলাম হোসেন জানান।

আমারসংবাদ/এআই