Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪,

সেনাপ্রধানকে নিয়ে থেমে নেই ষড়যন্ত্র

এম. আব্দুল্লাহ আল মামুন খান

অক্টোবর ৯, ২০২০, ০৬:২০ পিএম


সেনাপ্রধানকে নিয়ে থেমে নেই ষড়যন্ত্র

চলতি বছরের জুলাইয়ের শেষ রাতের বর্বরোচিত একটি হত্যাকাণ্ড। আকস্মিক নাড়িয়ে দেয় গোটা দেশ। পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাসেদ খানের এ মৃত্যু একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত, অনভিপ্রেত এবং দুঃখজনক। জনে জনে তৈরি হলো বিক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া। হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিষয়ে সেনা পরিবার থেকে শুরু করে বিবেকবান প্রতিটি মানুষের ঘৃণা-ক্ষোভ টালমাটাল করে তোলে পরিস্থিতি।

এ সুযোগ কাজে লাগাতে চাইলেন ষড়যন্ত্রকারীরা। ঘোলাটে পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরেই কক্সবাজার ছুটলেন সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। একই গন্তব্যে সহযাত্রী পুলিশের আইজি ড. বেনজীর আহমেদও।

ওঁৎপেতে থাকা ষড়যন্ত্রকারীরা নানা কথা বললেও সামনে থেকেই নেতৃত্ব দিলেন সেনাপ্রধান। দুই বাহিনী প্রধান মিলে সিদ্ধান্তে পৌঁছলেন হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শাস্তির বিষয়ে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ‘বিরল’ এক সংবাদ সম্মেলন। পাশাপাশি সেনা-পুলিশপ্রধান।

গোটা দেশের মানুষের দৃষ্টি সেই সংবাদ সম্মেলনে। মেধা-মনন, পেশাদারিত্ব আর অকাট্য যুক্তির নিরিখে তাৎপর্যপূর্ণ বক্তব্যই দিলেন জেনারেল আজিজ আহমেদ। ততক্ষণে সব টিভির মাইক্রোফোনই তার সামনে। এ এক অপরিমেয় আস্থা ও গ্রহণযোগ্যতার বহিঃপ্রকাশ যেনো! দুই বাহিনীকে মুখোমুখি করতে গভীর ষড়যন্ত্রের বোনা জাল ছিন্নভিন্ন হয়ে গেলো। ছাই পড়লো বিশেষ কুচক্রী মহলের মুখেও।

এর ঠিক এক মাস পরই বীর চট্টলায় নিজ বাহিনীর প্যারেড অনুষ্ঠান শেষে সিনহা হত্যাকাণ্ডে খুনিদের বিচারের বিষয়ে প্রায় চার মিনিটের ঐতিহাসিক বক্তব্য প্রকারান্তরে সেনাপ্রধানের সাহসী, আপসহীন, প্রাসঙ্গিক ও অপরিহার্য উচ্চারণ কতিপয় অতিউৎসাহী, করিৎকর্মার মুখ নিকষ কালো আঁধারে ঢেকে দেয়।

আবার অন্তরের শ্রদ্ধায় পরিপ্লুত করে দেশপ্রেমিক প্রতিটি মানুষের হূদয়-মনও। দেশপ্রেমিক এই বাহিনীর প্রধানের বক্তব্য যেনো সজোরে চপেটাঘাত করে দেশদ্রোহীদের —বলছিলেন রাজধানীর মীরপুর এলাকার একটি বেসরকারি কলেজের শিক্ষক জোবায়ের হোসেন।

পুরো বিষয়টি নিয়ে নিজের তীক্ষ্ম দৃষ্টির কথা জানিয়ে এই কলেজশিক্ষক আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বিচক্ষণতার মাধ্যমে সেনা ও পুলিশ বাহিনীর মুখোমুখি সঙ্ঘাতের পটভূমি রুখে দিয়ে দেশকে শান্ত ও নিরাপদ করেছেন সেনাপ্রধান। সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও কার্যকর বাস্তবায়নে তার দূরদর্শিতা এর মাধ্যমে আবারো প্রমাণিত হয়েছে।’

বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা কল্যাণ সমিতির সভাপতি নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘সেনাপ্রধান হতে না পারার স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় কাতর দেশের সব সেনানিবাসে অবাঞ্ছিত (পিএনজি) সেনাবাহিনীর সাবেক লেফটেন্যান্ট জেনারেল চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী রাজনীতি আর ক্ষমতার খোয়াব থেকে চরম মিথ্যাচার করে ‘ধরাশায়ী’ হয়েছিলেন। দেশের মানুষ তার ‘নাটক’ সহজেই বুঝেছিল। আসলে এসব প্রতিটি ঘটনাই মিথ্যার চাদরে মোড়ানো। ফলে এসব হঠাৎ ইউটিউবারদের অসত্য ও বিভ্রান্তিমূলক উচ্চারণ দেশের মানুষ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে।

সূত্র মতে, সিনহা মোহাম্মদ রাসেদ হত্যাকাণ্ডের ইতিবাচক অগ্রগতিতে দেশের মানুষের মাঝে স্বস্তির এক আবহ সৃষ্টি হলেও এবার একটি ফোনালাপকে ‘গুটি’ হিসেবে ব্যবহার করে ‘পুরনো বোতলে নতুন মদ’ কায়দার পুনরাবৃত্তি ঘটানো হয়েছে। দৃশ্যত এ চক্রটি এবারো শনাক্ত।

প্রযুক্তির চতুরতায় ফোনালাপের অংশবিশেষকে জোড়াতালির মাধ্যমে নিজেদের পছন্দের ‘জুতসই’ শব্দকে সুকৌশলে ঢুকিয়ে পুরো বিষয়টি ‘সেনাপ্রধানের ফোনালাপ’ বলে চালিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা সচেতন মানুষের কাছে দিবালোকের মতোই পরিষ্কার।

পর্নোগ্রাফি মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত এক দেশত্যাগীকে সঙ্গে নিয়ে জাল-জালিয়াতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত সেনাবাহিনীর কর্নেল (অব.) শহীদ উদ্দিন খানের অডিও জোচ্চুরি প্রতারণা বা ভণ্ডামিতে দশে দশ পাওয়ার যোগ্য বলেই মনে করেন হালের প্রযুক্তিসচেতনরা।

কথিত ফোনালাপটির অনুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশ সংবাদপত্র সম্পাদক পরিষদের মহাসচিব মো. শামসুল আলম খান বলেন, ‘প্রযুক্তির উৎকর্ষতার সময়ে দেশের মানুষ বোকার স্বর্গে বাস করে না।’ স্পর্শকাতর বিষয়ে একেকটি শব্দের হেরফের করে পুরো ভাবকেই পরিবর্তন করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের ঘৃণ্য পরিকল্পনা নিয়েছিল চক্রটি। দেশবাসী ধুরন্ধর স্বভাবের এ চক্রের ঠগ, ভাঁওতাবাজি বুঝে গেছে।’

আমারসংবাদ/এসটিএম