Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

পদ্মাসেতুর নির্মাণকাজ: মহামারিতেও থেমে নেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন

অক্টোবর ২১, ২০২০, ০৭:৩৬ পিএম


পদ্মাসেতুর নির্মাণকাজ: মহামারিতেও থেমে নেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন

করোনা মহামারির মধ্যেও দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে পদ্মা সেতুর কাজ। ৩২তম স্প্যান বসানোর আটদিন পর পদ্মা সেতুতে বসানো হলো ৩৩তম স্প্যান। গত ১৯ অক্টোবর দুপুর ১২টার দিকে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তের ৩ ও ৪ নম্বর পিলারের উপর ‘ওয়ান সি’ নামে স্প্যানটি বসানো হয়।

এর মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতুর প্রায় ৫ কিলোমিটার (৪ হাজার ৯৫০ মিটার) দৃশ্যমান হলো। ৪২টি পিলারের ওপর দাঁড়াবে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। দ্রুত সময়ে এই সেতু নির্মাণ শেষ হোক-এটাই প্রত্যাশা।

পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক ঋণ চুক্তি বাতিল করেছিল। একই পথ অনুসরণ করেছিল অন্য উন্নয়ন সহযোগীরাও। পদ্মা সেতু প্রকল্পে সম্ভাব্য দুর্নীতির পরিপ্রেক্ষিতে মামলা হয় কানাডার একটি আদালতেও।

ইতোমধ্যেই সে মামলার রায়ে আদালত একে নিছকই ‘অনুমান ও গুজব’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। এবং কানাডার সেই কোম্পানির অভিযুক্ত তিন কর্মকর্তাকে অব্যাহতিও দেন। দুর্নীতির অভিযোগটি কেবল কিছু ব্যক্তি, সরকারের বিরুদ্ধে ছিল না। ছিল বাংলাদেশের বিরুদ্ধেও। এ কারণে চরম অস্বস্তির মধ্যে পড়তে হয় সরকারকে।

তখনকার যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে সরে যেতে হয়। একজন সচিব ও একজন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল এবং তাদের কিছুদিন কারাবাসও করতে হয়েছিল। অভিযোগ ছিল, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়োগ পেতে কানাডার একটি কোম্পানি ঘুষ দিতে চেয়েছিল।

বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ ব্যাপারে দুই দফা তদন্ত করেও অভিযোগের সত্যতা পায়নি। সরকারও পদ্মা সেতু প্রকল্পে কোনো দুর্নীতি বা দুর্নীতির ষড়যন্ত্র হয়নি বলে জোর দাবি জানালেও কোনো কিছুকেই তোয়াক্কা করেনি বিশ্বব্যাংক।

এটা ছিল বাংলাদেশের মানুষের জন্য এক বিরাট দুঃসংবাদ। সরকারও বিশ্বব্যাংকের এই সিদ্ধান্তে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে। কারণ আওয়ামী লীগের নেতত্বাধীন তৎকালীন মহাজোট সরকারের অন্যতম নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি ছিল পদ্মা সেতু নির্মাণ। সে জন্য ক্ষমতায় এসেই পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে সরকার।

বিএনপি সরকারের সময় যে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল সেই বিশ্বব্যাংককে আবার বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রকল্পে সংযুক্ত করতে সক্ষম হয় আওয়ামী লীগ সরকার। সঙ্গত কারণেই ২৯০ কোটি ডলারের পদ্মা সেতু প্রকল্পে এককভাবে ১২০ কোটি মার্কিন ডলার (৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা) বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্বব্যাংক।

যদিও বিশ্বব্যাংক ঋণ চুক্তি বাতিল করার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রয়োজনে নিজস্ব অর্থায়নেই পদ্মা সেতু করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। এতে দেশে এক অভূতপূর্ব জনজাগরণের সৃষ্টি হয়।

সকল শ্রেণি পেশার মানুষের মধ্যে এক অভিনব দেশাত্মবোধের উন্মেষ ঘটে। সকলেই ‘যার হাতে যা আছে’ তাই নিয়ে পদ্মা সেতুর জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। অন্যদিকে মালয়েশিয়াসহ অনেক দাতা গোষ্ঠীও এগিয়ে আসে।

সরকার সকল পথই খোলা রাখে। এমনকি বিশ্বব্যাংক যেসব কারণ দেখিয়ে ঋণ চুক্তি বাতিল করে সেগুলোও প্রতিকারের চেষ্টা করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মন গলেনি বিশ্বব্যাংকের। অবশেষে এতদিন পর কানাডার আদালতের রায়ে সবকিছু মিথ্যা ও গালগল্প হিসেবে প্রমাণিত হওয়ায় চুক্তি বাতিলের বিশ্বব্যাংকের সিদ্ধান্তটি যে ভুল ছিল সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না।

বিশ্বব্যাংকের হঠকারি সিদ্ধান্তের কারণে মাশুল গুণতে হচ্ছে দেশের মানুষকে। যদিও নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু হচ্ছে। নানামুখী অসুবিধা ও প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও পড়তে হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের আচরণ ছিল স্পষ্টতই অপেশাদারি। এর পেছনে দেশে বিদেশে অনেকেই কলকাঠি নেড়েছেন এমন অভিযোগও আছে। নিজস্ব অর্থায়নে সেতুর কাজ এগিয়ে চলছে।

স্বপ্নের এই সেতু এখন দৃশ্যমান বাস্তবতা। বাংলাদেশ যে অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারে তার প্রমাণ পদ্মা সেতু। পদ্মা সেতু বাংলাদেশের আর্থিক সক্ষমতা ও দৃঢ় সংকল্প নেতৃত্বের সাহসের প্রতীক হয়ে থাকবে এটাই আমাদের বিশ্বাস।

আমারসংবাদ/এআই