Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

করোনাযোদ্ধা কেরু অ্যান্ড কোম্পানির সফল এমডি মো. আবু সাইদ

ইসলাম রকিব, চুয়াডাঙ্গা

অক্টোবর ২২, ২০২০, ০৮:১৩ পিএম


করোনাযোদ্ধা কেরু অ্যান্ড কোম্পানির সফল এমডি মো. আবু সাইদ

অপ্রয়োজনীয় পাহারাদার ছাঁটাই, আট প্রজাতির অধিক চিনিযুক্ত আখবীজ রোপণ, ডিস্টিলারির উৎপাদন কার্যক্রমে আধুনিকায়ন, আখচাষে কৃষকদের ভর্তুকি দেয়ার মাধ্যমে ৮২ বছরের পুরনো যন্ত্রপাতি নিয়ে কর্মরত শ্রমিকদের উন্নয়ন ও সরকারের অর্থনেতিক চাকা সচল করতে দিন-রাত পরিশ্রম করে চলেছেন দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

এমনটিই জানালেন এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ চিনিকল খ্যাত চুয়াডাঙ্গার জেলার ঐতিহ্যবাহী দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবু সাইদ।

একান্ত আলাপচারিতায় কেরুর এমডি দৈনিক আমার সংবাদকে জানান, ‘চলতি বছরের এপিলে আমি দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানিতে যোগদানের পর এ প্রতিষ্ঠানের টোটাল কার্যক্রম গভীরভাবে পর্যেবেক্ষণ করেছি। পর্যবেক্ষণে এ প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের দুঃখ-দুর্দশা, আখচাষিদের আর্থিক দৈন্যতা, এশিয়ার বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ধারবাহিক লোকসান আমাকে ভাবিয়ে তুলেছে।

তাই এ প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের উন্নয়নের পাশাপাশি কিভাবে সরকারের অর্থনৈতিক অবস্থাকে আরো শক্তিশালী করা যায় সে মানসে করোনা দুর্যোগেও ছুটে চলেছি। কেরু কোম্পানির এখতিয়ারভুক্ত সকল ফার্মে স্থায়ী স্টাফের সাথে কথা বলেছি। স্টাফের বাইরে যারা ডেইলি হাজিরা    (পাহারাদার) তাদের সাথে কথা বলেছি। সবিনয়ের সাথে কথা বলে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ডেইলি (পাহারাদারদের) হাজিরা শ্রমিকদের অব্যাহতি (ছাঁটাই) করে কোম্পানির দুই কোটি ২৫ লাখ টাকার বেতন সাশ্রয় করেছি।’

নামে-বেনামে লিজ দেয়া জমি উদ্ধার করে প্রায় ৬০০ একর জমি লিজ দিয়ে কোম্পানির কোষাগারে জমা করেছি কোটি টাকা। আখের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে অধিক চিনিযুক্ত আট প্রজাতির ৭২০ একর জমির কৃষকদের মধ্যে ১৮০ মে.টন আখবীজ বিতরণ করেছি। ১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির ৮২ বছরের পুরনো যন্ত্রপাতি দিয়ে সাধ্য, সামর্থ্য এবং সম্পদের সমন্বয়ের মাধ্যমে চিনি উৎপাদন বাড়িয়ে প্রতিষ্ঠানকে কিভাবে লাভজনক করা যায় সেদিকে নজর দিয়েছি।

একই সাথে শ্রমিকদের স্বার্থ সংরক্ষণের পাশাপাশি তাদের পাশে দাঁড়িয়ে কিভাবে নিয়মতান্ত্রিকভাবে কাজ করা যায় সেদিকেও লক্ষ রেখেছি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ মোতাবেক স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাদেরকে হ্যান্ড সেনিটাইজার, মাস্ক, গ্লাভস বিতরণ করে সকলকে এক পরিবারের মতো করে কাজে উৎসাহ যুগাচ্ছি।’

শ্রমিক কর্মচারীর দুঃখ-দুর্দশার কথা শুনতে সর্বদা মিলের অফিস ও কৃষকের মাঠে এপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত ছুটে চলা, বিভিন্ন সমস্যার কথা শোনার পাশাপাশি সর্বদায় শ্রমিক-কর্মচারীর উন্নয়নের কথা চিন্তা করা একজন চুয়াডাঙ্গার দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সাইদ। সদালাপি মিষ্টভাষী অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপসহীন একজন আবু সাইদ ব্যবস্থাপনা পরিচালকে দায়িত্ব পালন করছেন।

এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে নিয়ে ভালো ব্যবহার করে তাদেরকেও দেশের উন্নয়নে কাজ করার উৎসাহ যুগিয়েছি। গরিব, কর্মঠ, অসুস্থ-অসচ্ছল কর্মচারীদের জন্য একটা ফান্ড গঠন করেছি। যেখান থেকে তারা বিপদে পড়লে আর্থিক সহায়তা পেতে পারে। শ্রমিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য অর্ধেক বেতনে স্কুলে পড়ালেখার ব্যবস্থা করেছি, মেধাবীদের জন্য উপবৃত্তির ব্যবস্থা করেছি।

এত কিছুর পরও আমি শঙ্কায় আছি। কারণ এ প্রতিষ্ঠান থেকে এক কেজি চিনি উৎপাদনে খরচ হয় ২০৮ টাকা। সেই চিনি সরকার নির্ধারিত ৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে হয়। প্রতি কেজিতে ১৪৩ টাকা লোকসানে থাকে প্রতিষ্ঠান। লোকসানের এই টাকাটা সরকার কোম্পানিকে দেয়ার কথা থাকলেও তা পাওয়া যায় না। ফলে প্রতি বছরই প্রতিষ্ঠানকে লসের বদনাম নিতে হয়।

১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্পে যোগদানারী বর্তমানে দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িক্ত পালনকারী আবু সাইদ আরো বলেন, বিভিন্ন সুগারমিলে আমি দীর্ঘদিন চাকরি করেছি। এরপর আমি সদর দপ্তরে জিএম হিসেবে ছিলাম চার বছর। সেখান থেকে আমি গত এপ্রিল মাসে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে যোগদান করেছি।

চলতি মৌসুমে ১০ হাজার মে.টন আখ উৎপাদনের টার্গেট নিয়েছি। এক লাখ ৩০ হাজার মে.টন আখ রিকভারির রিকভারি বাড়ানোর ইচ্ছা আছে। এ ছাড়া কোম্পানির লোকশান কমাতে অনেক পরিকল্পনা আছে। ডিস্টিলারির মুনাফা বৃদ্ধিতে উৎপাদন কার্যক্রম নিরবছিন্ন করার লক্ষ্যে অটো বোতলজাত (সেমি-অটোমোশন) স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।

চিনি কারখানায় যন্ত্রাংশ প্রতিস্থাপন, ডিস্টিলারি কারখানার বয়লার স্থাপন, ফরেনলিকার ইউনিট সেমি-অটোমোশনকরণ অধিক চিনিসমৃদ্ধ আখের জাত উৎপাদন ও বর্জ্য পরিশোধনাগার স্থাপনে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।

এ বছরই প্রথম আমাদের জৈবসার কারখানা থেকে এক লাখ ১৯ হাজার টাকা লাভ করেছি। আমার সকল শ্রমিক ও প্রশাসনিক সকলকে আমি গতিশীল করতে পেরেছি। শ্রমিকরা আমাকে ভালোবাসে, আশা করি আমি সামনের বছর এই প্রতিষ্ঠানটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যেতে পারবো।

এমডি আরো বলেন, আখচাষিদের আখচাষে উৎসাহ যোগাতে আমি নিজেই আখচাষ করেছি। এ বছরও আখচাষে কৃষকদের ৭৬ লাখ ২৩ হাজার ২০০ টাকা ভর্তুতি দিয়েছি। কৃষকদের নিয়ে বিভিন্ন সময় সভা-সেমিনারের আয়োজনে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। বীজ, সার ও কিটনাশক দিয়ে উদ্বুদ্ধ করছি।

এছাড়াও সরকার আখের মূল্য বৃদ্ধি করছে এবং ম্যাসেজের মাধ্যমে সাথে সাথে টাকা টাকা দেয়ার ব্যবস্থা করেছি। সার্বিকভাবে কোম্পানির অর্থনেতিক উন্নয়নের মাধ্যমে সরকার প্রধান বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে চাই।

আমারসংবাদ/এসটিএম