সালমা সুলতানা, নরসিংদী
অক্টোবর ২৩, ২০২০, ০৭:৪২ পিএম
নরসিংদী জেলার সর্বত্র শীতকালীন সবজি চাষের প্রস্তুতি হিসেবে এখন চারা তৈরি করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। ইতোমধ্যে জেলার ছয়টি উপজেলায় শীতকালীন সবজির চারা বিক্রি করে অনেক কৃষকের ভাগ্য বদলে গেছে। বিশেষ করে শিবপুর উপজেলা ও রায়পুরা উপজেলার কৃষকরা তাদের জমিতে শীতকালীন সবজির চারা রোপণ করেছেন।
নরসিংদী জেলা কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এখানকার কৃষকরা একসময় মুন্সীগঞ্জ ও সিলেট থেকে সবজির চারা সংগ্রহ করে তাদের জমিতে চাষ করতেন।
কিন্তু বিগত ২০ বছর ধরে নিজেদের প্রয়োজনে চারা উৎপাদন শুরু করেন এখানকার কৃষকরা। বর্তমানে নরসিংদী জেলার ছয়টি উপজেলায় প্রায় দুইশ একর জমিতে চারা উৎপাদন করা হয়, যার বাজারমূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা। শীতকালীন সবজির এ চারা বিক্রি করে অনেকে লাখপতিও হয়েছেন।
চলতি মৌসুমের জুলাই মাস থেকে শুরু হওয়া অঙ্কুরোদ্গমের মাধ্যমে চারা উৎপাদন করে বিক্রি চলবে নভেম্বর মাস পর্যন্ত। এ চার মাস সময়কালে একই পলিথিনে মোড়ানো শেড তৈরি করে চার-পাঁচবার পর্যন্ত বীজ অঙ্কুরোদ্গমের মাধ্যমে চারা উৎপাদন করে বিক্রি করতে পারেন কৃষকরা।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মৌসুমের জুলাই মাস থেকে শীতকালীন সবজি বীজতলা প্রস্তুত করে এতে বাঁধাকপি, ফুলকপি, বেগুন, চিচিঙ্গা, মরিচ ও টমেটোর বীজ বপন করা হয়।
ওই বীজ অঙ্কুরোদগমের মাধ্যমে চারা গজালে তা পরিচর্যা করে এক মাস বয়সে জমি থেকে তুলে অন্য কৃষকদের কাছে বিক্রি করা হয়। ভালো মানের প্রতিটি ফুলকপির চারা ৮০ পয়সা থেকে এক টাকা এবং বাঁধাকপির চারা প্রকারভেদে ৬০ থেকে ৮০ পয়সায় বিক্রি হচ্ছে।
কৃষকরা আরও জানান, নরসিংদী জেলাসহ পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে কৃষকরা এসে এসব চারা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিদিন নরসিংদী জেলাসহ কুমিল্লা, ফেনী, চাঁদপুর, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট, নেত্রকোনা, গাজীপুর ও টাঙ্গাইল এলাকার কৃষকরা এখানে সবজি চারা ক্রয় করতে আসেন।
চারা ক্রয় করতে আসা কিশোরগঞ্জ জেলার কয়েকজন ক্রেতা জানান, এখান থেকে চারা নিয়ে রোপণ করে ভালো ফলন পেয়েছেন। সে জন্য তারা অনেক কষ্ট করে হলেও এখান থেকে চারা নিতে আসেন।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের শিবপুর উপজেলার কুন্দারপাড়া বাসস্ট্যান্ড-সংলগ্ন এলাকায় মাঠজুড়ে পলিথিনে মোড়ানো বীজতলা। এ সকল বীজতলায় বিভিন্ন জেলা থেকে চাষিরা আসছেন চারা কেনার জন্য। জমির মালিকরা তাদের জমি থেকে চারা তুলছেন বিক্রয়ের জন্য। কেউ কেউ বীজতলার উপরের পলিথিন খুলে উন্মুক্ত করে দিচ্ছেন। আবার কেউ আগাছা পরিষ্কার করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
শিবপুর উপজেলার বাঘাব ইউনিয়নের চাঁনপাশা গ্রামের কৃষক মো. রমিজ মিয়া বলেন, ‘আমি বিগত ২০ বছর ধরে এ ব্যবসা করে আসছি। এ চারা বিক্রি করে আমি অনেক লাভবান হয়েছি। দুই বিঘা জমিতে অঙ্কুরোদ্গমের মাধ্যমে চারা উৎপাদন করে থাকি এবং এগুলো বিক্রি করে প্রতি বছর সমস্ত খরচ বাদ দিয়ে প্রায় দুই লাখ টাকা পেয়েছি।’
রায়পুরা উপজেলার মরজাল গ্রামের কৃষক মো. জসিম উদ্দিন জানান, ইতঃপূর্বে তিনি মুন্সীগঞ্জ থেকে চারা এনে সবজি চাষ করতেন। পরে তিনি সেখান থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে এবং স্থানীয় কৃষি অফিসে যোগাযোগ করে শীতকালীন সবজির চারা উৎপাদন শুরু করেন।
প্রতি বিঘা জমিতে ফুলকপির বীজ বপন করে চারা উৎপাদন করা পর্যন্ত কমপক্ষে এক লাখ টাকা ব্যয় হয়। এতে তিন লক্ষাধিক চারা উৎপাদন করে সমস্ত খরচ বাদে কমপক্ষে দুই লাখ টাকার বেশি চারা বিক্রি করে।
নরসিংদী জেলা কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুভন কুমার ধর জানান, স্থানীয় উপজেলা কৃষি অফিস বিভিন্নভাবে কৃষকদের এ ব্যাপারে পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
তিনি আরও জানান, চলতি বছর জেলার ছয়টি উপজেলায় ১০০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজির চারা উৎপাদন করা হয়েছে। সবজি চারা উৎপাদন লাভজনক ব্যবসা বলে কৃষকরা এদিকে ঝুঁকে পড়েছেন। কৃষি বিভাগ তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিভিন্ন প্রযুক্তি ও চারার গুণগত মান বজায় রাখতে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে আসছেন এবং নতুন নতুন জাত ও আগাম সবজির চারা উৎপাদনে পরামর্শ দিচ্ছেন।
আমারসংবাদ/এসটিএম