Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

আমি ব্যক্তিগতভাবে সফল হতে চাইনি

অক্টোবর ২৬, ২০২০, ০৬:৩৯ পিএম


আমি ব্যক্তিগতভাবে সফল হতে চাইনি

প্রত্যেক মানুষের সফলতার মূলে থাকে খণ্ড খণ্ড গল্প। আজ সেইরকম একজন সফল মানুষের সফলতার মূলে কী গল্প ছিলো সে বিষয়ে জানার চেষ্টা করবো : সেই সফল মানুষটি আর কেউ নন— চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, খুলনা বিভাগের সর্বপ্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন।

এ বর্ষীয়ান রাজনীতিক ও সফল ক্রীড়া সংগঠক স্বপ্নবাজ মানুষটির জন্ম হয় ১৯৪৬ সালের ১৫ মার্চ চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের আরামপাড়ায়। বাবার নাম মৃত সিরাজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার, মায়ের নাম মৃত আছিয়া  খাতুন।

যিনি চুয়াডাঙ্গা-১ আসন থেকে পরপর তৃতীয় মেয়াদে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে বিজয়ী হন। এ রাজনীতিবিদের শেষ স্বপ্ন চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের  জন্য বহুতলবিশিষ্ট একটি দৃষ্টিনন্দন অফিস নির্মাণ। যেটি ইতোমধ্যেই নির্মাণের শেষ পর্যায়ে। সেই লুকানো গল্প জানতে হলে নিচের প্রশ্নোত্তরগুলো জানতে হবে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আমার সংবাদের চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রতিনিধি ইসলাম রকিব

আমার সংবাদ : মাননীয় এমপি প্রত্যেকটি সফল মানুষের সফলতার মূলে একটি গল্প থাকে, আপনার সফলতার মূলে কী ছিলো?
এমপি : বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। ধন্যবাদ আপনাকে। আমি সফল কি-না তা আমি জানি না। তবে আমি কখনো ব্যক্তিগতভাবে সফল হতে চাইনি। জনগণের সফলতা দেখতে চেয়েছি। তার যে টুকু অর্জন হয়েছে সেটি আল্লাহ প্রদত্ত। আর চুয়াডাঙ্গার মানুষের আশার প্রতিফলন। আর সফলতার মূলে যে গল্পটি ছিলো সেটি যদি জানতে চান তাহলে বলবো— আমার সফলতা, পরিচিতি ও সফল হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে চুয়াডাঙ্গার ক্রীড়াঙ্গন।  

আমার সংবাদ : চুয়াডাঙ্গার ক্রীড়াঙ্গনের আপনি কি ছিলেন এবং এত কিছু থাকতে ক্রীড়াঙ্গনকেই আপনি কেন বেছে নিলেন?
এমপি : ছোটবেলা থেকে খেলাধুলার প্রতি ভালোলাগা এবং ভালোবাসা থেকেই ক্রীড়াঙ্গনের প্রতি আসক্তি জন্মায়। তাই মনের অজান্তেই ক্রীড়াঙ্গনকে বেছে নিয়ে চুয়াডাঙ্গার খেলাধুলার উন্নয়ন করার চেষ্টা  করেছি।

আমার সংবাদ : আমরা জেনেছি যে, আপনি বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার অনেক আগে থেকেই চুয়াডাঙ্গার ক্রীড়াঙ্গনের কর্ণধর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন এবং কত সাল থেকে শুরু ও কত সাল পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালন করেছিলেন?
এমপি : আমি নিজেকে কোনোদিন কর্ণধর মনে করিনি। নিজেকে একজন সংগঠক হিসেবে দল-মতের ঊর্ধ্বে থেকে চুয়াডাঙ্গার খেলাধুলাকে এগিয়ে নিতে চেয়েছিলাম। আমি ১৯৬২ সাল থেকে চুয়াডাঙ্গা মহাকুমা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক  হিসেবে দায়িক্ত পালন শুরু করি এবং বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর চুয়াডাঙ্গা যখন ১৯৮৪ সালে পূর্ণাঙ্গ জেলা হলো, আমি তখনো চুয়াডাঙ্গা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সেক্রেটারি হিসেবে  দায়িত্ব পালন করেছি।

আমার সংবাদ : কত  সাল পর্যন্ত সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন? চুয়াডাঙ্গা ক্রীড়াঙ্গনের নবজাগরণ সম্পর্কে যদি বলতেন?
এমপি : স্বাধীনতার আগে মরহুম আবুল হোসেন ডুডি মিয়ার পর থেকে একনাগাড়ে এবং পরবর্তীতে ১৯৮৪ সালে চুয়াডাঙ্গা পূর্ণাঙ্গ জেলা ঘোষণা পর থেকে  ১৯৯০ সালের আগ পর্যন্ত আমি সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। অর্থাৎ প্রায় দুই যুগের বেশি সময় ধরে এ দায়িত্ব পালন করেছি। আর হ্যাঁ, চুয়াডাঙ্গার ক্রীড়াঙ্গনের নবজাগরণ, উন্নয়ন, সোনালি সময় যাই বলুন না কেন, এগুলো কিন্তু ’৯০ দশকের আগেই অর্জিত হয়েছে। এখন আর চুয়াডাঙ্গা জেলা ক্রীড়া সংস্থায় খেলাধুলা হয় না। এখন শুধু চুয়াডাঙ্গার ক্রীড়াঙ্গনে বসে বসে আড্ডাবাজি হয় এবং খেলাধুলার পরিবেশ কিভাবে নষ্ট করে ক্ষমতা ধরে রাখা যায় সেই পরিকল্পনা করা হয়।

আমার সংবাদ : শুনেছি আপনি মহকুমা ক্রীড়া সংস্থায় দায়িত্বে আসার কয়েক বছরের মাথায় নিজের তত্ত্বাবধানে একটি ক্লাব প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন, সেটি কত সালে ও ক্লাবের নাম কি ছিলো?
এমপি : সালটি ছিলো ১৯৬২। ক্লাবের নাম ছিলো অ্যাথলেটিক্স কিংস ক্লাব, সংক্ষেপে একেসি ক্লাব।

আমার সংবাদ : আপনার দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে কয়েকজন খেলোয়াড়ের নাম বলুন, যাদেরকে সারা বাংলাদেশ একনামে জানে ও চেনে এবং কোথায় কোন ক্লাবে তারা খেলেছেন?
এমপি : (...একটু হাসি দিয়ে) আসলে প্রশ্নটি সহজ, তবে এর উত্তর খুব কঠিন। আমার সময় চুয়াডাঙ্গার ক্রীড়াঙ্গনে সকল ধরনের খেলাধুলার উন্নয়নের চেষ্টা করা হতো। কিবা ফুটবল, কিবা অ্যাথেলেটিকস, কিবা ক্রিকেট। তখন খেলোয়াড়রা নিজের তাগিদে মাঠে আসতো। আর তাদের খেলার সরঞ্জাম, কোথাও যাওয়া-আসা, খাওয়া, হাতখরচ সব দায়িত্ব ছিলো আমার। সকলের নাম হয়তো এই মুহূর্তে মনে নেই, যেহেতু কয়েকজনের নাম বলতে বলা হয়েছে। তাই বলছি, এদের মধ্যে আ. হামিদ তোতা (সাধারণ বিমা, ঢাকা মোহামেডান), মাহমুদুল হক লিটন (ঢাকা ইস্ট অ্যান্ড ক্লাব, ঢাকা ব্রাদার্স ইউনিয়ন, ঢাকা আবাহনী, ফরাসগঞ্জ, পিডাব্লিউডি, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ), মামুন জোয়ার্দ্দার  (আজাদ স্পোর্টিং, ভিক্টোরিয়া, মোহামেডান, আবাহনী)। এ ছাড়া মেঘে ঢাকা তারকার মতো বড় মানের খেলোয়াড় ছিলেন মিজানুর রহমান মানিক (ওয়ান্ডারার্স, আজাদ স্পোর্টিং, ওয়ারী), গিয়াস উদ্দিন পিনা (ব্রাদার্স, ওয়ারী, মুক্তিযোদ্ধা)।

আমার সংবাদ : আমরা জানি আপনার গোটা পরিবার এবং পরিবারের রক্তে ক্রীড়ার স্রোতধারা বহমান। আপনার এক সহোদর স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের গোলরক্ষক ছিলেন, তার সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন?
এমপি : বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে চুয়াডাঙ্গার একটি আলাদা গুরুত্ব আছে। এ মাটিতেই বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাজধানীর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছিল। ঐতিহাসিক বিচারে চুয়াডাঙ্গা জেলার রয়েছে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামী ইতিহাস। মহান মুক্তিযুদ্ধে জেলাবাসীর অবদান বিশ্বজনবিদিত। স্বাধীনতা অর্জনের গৌরবময় ইতিহাসের সাথে চুয়াডাঙ্গার সুমহান ক্রীড়াও জড়িত। ১৯১৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ভারত অভ্যন্তরে সীমান্তবর্তী মুক্তিবাহিনী ক্যাম্পে রিক্রুটিং অফিসিয়াল হিসেবে দায়িক্ত পালন করতো আমার সহোদর আ. মোমেন জোয়ার্দ্দার। তৎকালীন নবগঠিত স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টু মোমেনকে খুঁজে এনে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের গোলরক্ষকের দায়িত্ব দেন। এ স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল ভারতের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে চ্যারিটি ফুটবল খেলে তা থেকে অর্জিত অর্থ প্রবাসী সরকারের ফান্ডে জমা হতো। মূলত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্বব্যাপী জনমত গঠন ও অর্থ সংগ্রহ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে আর্থিক সহায়তা করাই ছিলো স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল গঠনের মূল উদ্দেশ্য।

আমার সংবাদ : চুয়াডাঙ্গার ক্রীড়াঙ্গনকে আপনি কি স্বপ্ন দেখেছিলেন। সে স্বপ্ন কি বাস্তবায়ন করতে পেরেছেন?
এমপি : হ্যাঁ আমি চুয়াডাঙ্গার ক্রীড়াঙ্গন নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলাম। তার কিছু আমি বাস্তবায়ন করতে পেরেছি। তবে সবার তো সব স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার সৌভাগ্য হয় না।

আমার সংবাদ : চুয়াডাঙ্গা ক্রীড়াঙ্গনের যে স্বপ্নগুলো বাস্তায়ন হয়েছে সেগুলোর মধ্যে দু-একটি যদি বলতেন?
এমপি : আমি যখন প্রথম টার্মে চুয়াডাঙ্গা মহকুমা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদকের দায়িত্ব পাই, তখন স্বপ্ন দেখতাম চুয়াডাঙ্গা থেকে অন্তত একজন খেলোয়াড়কে জাতীয় দলে খেলাতে হবে। দেশ স্বাধীনের আগে সেটি সম্ভব না হলেও স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলে আমার জেলার দু’জন ফুটবলারকে (লিটন ও মামুন) জাতীয় দলে খেলার সুযোগ করে দিতে পেরেছি। তবে একটি কথা বলতেই হয়— আমার সময় জাতীয় দলে খেলার মতো আরো অনেক প্রতিভাবান ফুটবলার, অ্যাথলেট, হকি খেলোয়াড় তৈরি হয়েছিল। তারা কিন্তু একাগ্রচিত্তে ঢাকায় থাকতে না পারায় সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

আমার সংবাদ : চুয়াডাঙ্গায় জাতীয় মানের একটি স্টেডিয়াম তৈরির ব্যাপারে আপনার কোনো স্বপ্ন ছিলো কি-না?
এমপি : আরে ভাই আপনি একসাথে কয়টি  স্বপ্নের কথা শুনতে চান, সেগুলো আমাকে একে একে বলতে দিন। তারপরই না হয় আবার প্রশ্ন করেন। ক্রীড়াঙ্গন নিয়ে আমার স্বপ্নের সফল বাস্তবায়নের কথা যদি বলতে হয় তাহলে বলবো, ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে চুয়াডাঙ্গায় একটি জাতীয় ও আধুনিক মানের জেলা স্টেডিয়াম তৈরি। এ স্টেডিয়াম তৈরির পেছনে আমাকে অনেক ঘাম, শ্রম ও অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে। যেটি এ প্রজন্মের ছেলেরা হয়তো সেভাবে বুঝবে না। স্টেডিয়ামের জমি অধিগ্রহণসহ স্টেডিয়াম তৈরির বরাদ্দ পেতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে হাঁটাহাঁটি করতে করতে আমার পায়ের চামড়ার জুতা ক্ষয় হয়েছে অনেক। চুয়াডাঙ্গা জেলার কয়েকজন ডিসিও আমার এ কাজে যথেষ্ট সহযোগিতা করেছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম ভোলানাথ দে। এ স্টেডিয়ামকে ঘিরে আমার আরো অনৈক স্বপ্ন ছিলো আমার। কিন্তু সেগুলো বাস্তবায়ন হয়নি। স্টেডিয়াম তৈরির পর যারা সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তারা খেলাধুলার উন্নয়ন করেনি, করেছে নিজের ও নিজের দোসরদের উন্নয়ন। আমার খুব কষ্ট লাগে । এই কথাগুলো বলতে। আমার সময় তো কোনো ভালো মানের স্টেডিয়াম চুয়াডাঙ্গায় ছিলো না। শুধু টাউন মাঠ, ভিজে স্কুল মাঠ ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ভাঙাচোরা মাঠ ছিলো। তখন ভালো খেলোয়াড় চুয়াডাঙ্গা থেকে তৈরি হতো। আর এখন জাতীয় মানের আধুনিক মাঠ হওয়া সত্ত্বেও ভালো খেলোয়াড় তৈরি হচ্ছে না। এ দায় কাদের? নিশ্চয় বর্তমান কর্মকর্তাদের। যা হোক, অনেক অনেক কথা বলে ফেললাম। আর কোনো প্রশ্ন আছে?

আমার সংবাদ : আপনার প্রিয় মানুষ কে?
এমপি : মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা:। এরপর আমার মরহুম  বাবা-মা।

আমার সংবাদ : আপনার প্রিয় ব্যক্তিত্ব কে?
এমপি: হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার যোগ্যকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আমার সংবাদ : চুয়াডাঙ্গাকে ঘিরে আপনার শেষ ইচ্ছা কী?
এমপি : মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মানুষের ইচ্ছার কোনো শেষ থাকে না। তবে চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের জন্য বহুতল বিশিষ্ট একটি দৃষ্টিনন্দন অফিস নির্মাণের ইচ্ছা ছিলো। যেটি ইতোমধ্যেই নির্মাণের শেষ পর্যায়ে। এ অফিসকে ঘিরে চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগ ও তার ভাতৃপ্রতিম সকল সংগঠন এবং জাতি-ধর্ম-বর্ণ, দল-মত নির্বিশেষে সকল মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার বাতিঘর হয়ে উঠুক আমি সেই ব্যবস্থা করে যাবো। দৈনিক আমার সংবাদের সম্পাদক-প্রকাশক কেন্দ্রীয় যুবলীগের অন্যতম নেতা প্রধানমন্ত্রীর স্নেহভাজন হাশেম রেজা ও তার আমার সংবাদ পরিবারকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। জয়বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।  

আমারসংবাদ/এসটিএম