Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪,

বিএনপির সরবে রহস্য

নভেম্বর ২১, ২০২০, ০৫:৫০ পিএম


বিএনপির সরবে রহস্য

রহস্যময় সরব হয়ে উঠছে বিএনপি। চিন্তিত সরকারও। দলটির রহস্য নিয়ে গত বুধবার মুখ খুলেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে বিএনপির দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্র চলছে।

মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে। বিভিন্ন উপ-নির্বাচনে তারা প্রার্থী দেয়। নির্বাচনের আগে খুব হইচই করে, কিন্তু নির্বাচনের দিন দুপুরে পরাজয়ের ভয়ে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেয়। মূলত নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই তারা এরকম করে।’

প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের একদিন পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ‘দলের যে লক্ষ্য সেই লক্ষ্য অর্জনে, কোথায় মৃত্যু হবে কোথায় হবে না, সেটা নিয়েও বিএনপির নেতারা ভাবেন না। তারা শুধু একটা সুযোগ, একটা পরিবেশের অপেক্ষায় আছেন। একটা সুযোগ খুঁজছে বিএনপি।

সেই সুযোগ খুব শীঘ্রই আসবে।’ তিনি নেতাকর্মীদের প্রস্তুতির ইঙ্গিত দেন। বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্রমতে, স্থানীয় সরকার নির্বাচন শুরুর আগেই সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে চাপে রাখার কৌশল নিয়েছে দলটি। প্রায় প্রতিদিনই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে না পারায় সরকার ও নির্বাচন কমিশনের কঠোর সমালোচনা করছে তারা।

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে লোকজনকে মাঠে নামানোর পরিকল্পনা করছে। অনেকেই মনে করছেন, এবার নির্বাচন ইস্যুতে দেশে নানা অঘটন হতে পারে। যেমন— ঢাকা ১৮ আসনের নির্বাচনে হঠাৎ করেই ৯টি বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এ জাতীয় অঘোষিত বার্তার শঙ্কা এখন রাজনৈতিকসহ দেশের বিভিন্ন অঙ্গনে বিরাজ করছে।
 
বিএনপির নীতিনির্ধারণী একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেশ কিছুদিন ধরে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে নানা সমস্যায় রয়েছে দলটি। নাগরিক ঐক্য, জেএসডিসহ আরো কয়েকটি রাজনৈতিক দল সাময়িক ইস্যুতে কিছুটা সরব থাকলেও ড. কামালের গণফোরাম একেবারেই নীরব। দলটিতে চলছে ভাঙনের উৎসব। বিব্রত ও প্রশ্নের মুখোমুখি হচ্ছে বিএনপি।

এছাড়া ইসলামপন্থি দলগুলোর সঙ্গেও ভালো সম্পর্ক গড়া যাচ্ছে না। দল জোটের, জোটের সমন্বয়ে মানুষের চাহিদা পূরণ সম্ভব হচ্ছে না।

তবে সমপ্রতি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের লোকজনও আর ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে যাচ্ছে না। দলটির যে কমিটি গঠন করা হচ্ছে তাতে বিতর্কিত মুখ বাড়ছে। স্বয়ং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই শেখ হাসিনার দেয়া কমিটি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। তাই বিএনপি এই দুই ইস্যুকে কেন্দ্র করে জামায়াতের মতো একলা চলো নীতি গ্রহণ করে অঘোষিত কিছু বিচ্ছিন কর্মসূচি পালন করবে— এমন পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে।

আগ থেকে মাঠ তৈরিতে কর্মসূচির মাধ্যমে দলের সঙ্গে কৌশলে সম্পৃক্ত বাড়াচ্ছে। বিএনপি দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৫৬তম জন্মদিন উপলক্ষে শুক্রবার ঢাকায় সাতটি বড় কর্মসূচিসহ সারা দেশে প্রায় শতাধিক কর্মসূচি পালন করেছে দলটি। গত শুক্রবার সকাল ১০টায় নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় অফিসে নিচতলায় দোয়া মিলাদ মাহফিলে দলীয় সিনিয়র নেতারা ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

এরপর মহানগর বিএনপি অফিসে ভাসানী মিলনায়তনে কেক কাটার অনুষ্ঠান পর্ব চলে। বেলা ১১টায় ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটিতে সাগর-রুনি হলে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান প্রধান অতিথি ছিলেন। বেলা ৩টায় সুপ্রিম কোর্ট অডিটোরিয়ামে আলোচনা ও দুস্থদের শীতের কাপড় বিতরণ ও কেক কাটা হয়।

প্রধান অতিথি ছিলেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। বিকেল ৪টায় ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটিতে সাগর-রুনি হলেও আরেকটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওখানেও সেলিমা রহমান অতিথি ছিলেন। বাদ আসর গুলশান চেয়ারপারসন অফিসে দোয়া-মিলাদ মাহফিলের আয়োজনেও দলের দলীয় সিনিয়র নেতারা ও অঙ্গ সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া বেলা ৩টায় ভার্চুয়ালে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

দীর্ঘদিন থেকে লন্ডন থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান শুধু স্থায়ী কমিটিসহ শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ঘরোয়া আলাপ-আলোচনা করে রাজনীতিতে সময় পার করলেও গতকাল থেকে প্রকাশ্য রাজনৈতিক কর্মসূচিতে আসেন।

সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটির প্রথম সভায় তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন। দেশের সামপ্রতিক নানান ইস্যু নিয়ে কথা বলেন, নির্দেশনা দেন। স্বাধীনতায় বিএনপির অতীতের ভূমিকা ও চলমান করণীয় নিয়ে নানা বিষয় তুলে ধরেন।

সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিল সদস্য আব্দুস সালামের পরিচালনায় দলের স্থায়ী কমিটিসহ মাধ্যম সারির বেস কয়েকজন নেতাও অংশগ্রহণ করেন। বিএনপির ভেরিফাইড ফেসবুকে বেলা ১১টা থেকে তিন ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে এ আলোচনা সরাসরি প্রচারিত হয়।

জানা গেছে, স্থানীয় সরকারসহ সব নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দিয়ে বিএনপি এখন প্রস্তুতি জোরদার করছে। স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী দলীয় প্রার্থীদের কাছে ১০ নভেম্বর থেকে মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করেছে বিএনপি। দলের নেতাকর্মীরা করোনা পরিস্থিতি উপেক্ষা করেই স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণার পর বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ে চাঙ্গাভাব সৃষ্টি হয়েছে। মনোনয়ন-প্রত্যাশীদের মধ্যে অনেকেই নির্বাচনি মাঠে নেমে পড়েছেন। করোনা পরিস্থিতি উপেক্ষা করেই তারা জনসংযোগ শুরু করেছেন।

এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ নানা উপায়ে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন। আর দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন। এছাড়া বিভিন্ন দলের সম্ভাব্য প্রার্থী সম্পর্কে খোঁজ খবর নিচ্ছেন।

এ নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা সব নির্বাচনেই অংশ নিচ্ছি। স্থানীয় সরকার নির্বাচন ধাপে ধাপে হবে তাই বিএনপির প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়াও ধাপে ধাপে হবে। সর্বস্তরের স্থানীয় সরকার নির্বাচনেই বিএনপি যোগ্য প্রার্থী দেয়ার চেষ্টা করছে। গণতন্ত্রের স্বার্থে বিএনপি স্থানীয় সরকার নির্বাচনসহ সব নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

গত বুধবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় ভিডিও কনফারেন্সে শেখ হাসিনা বিএনপির সরব নিয়ে রহস্যর ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, ‘সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্র চলছে। ফেসবুক-ইউটিউবে গুজবে অপপ্রচার চলছে। এসবের ওপর ভিত্তি করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের অপচেষ্টা চলছে, আমরা দেখতে পাচ্ছি।’  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। বিভিন্ন উপ-নির্বাচনে তারা প্রার্থী দেয়। নির্বাচনের আগে খুব হইচই করে, কিন্তু নির্বাচনের দিন দুপুরে পরাজয়ের ভয়ে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেয়। মূলত নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই তারা এরকম করে।’

এদিকে ভোটারবিহীন এই সরকারকে ক্ষমতার মসনদ থেকে নামাতে ‘গণজাগরণের’ প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়  বলেছেন, ‘শুধু একটা সুযোগ একটা পরিবেশের অপেক্ষায় আছি। একটি গণজাগরণের মধ্য দিয়ে এই সরকারকে বিদায় করে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র একাত্তরের যে স্বপ্ন সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় আমরা বদ্ধপরিকর।’

গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, ‘দলের যে লক্ষ্য সেই লক্ষ্য অর্জনে, কোথায় মৃত্যু হবে কোথায় হবে না— সেটা নিয়েও বিএনপির নেতারা ভাবে না।’

বিএনপিপন্থি রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী আমার সংবাদকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী সমপ্রতি বিএনপির ভোটে যাওয়া নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন তা মোটেই সমীচীন নয়। বিএনপি ভোটে যাচ্ছে— প্রধানমন্ত্রীকে তো এটা নিয়ে খুশি হওয়ার কথা। কিন্তু না, তিনি হননি! কারণ এই সরকার ভোটের অধিকার হরণ করেছে। তার উচিত হবে ভোটের অধিকার, জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দেয়া।’ মানুষ যদি ভোটকেন্দ্রে যায় তা এই সরকারের জন্যই সুসংবাদ হবে বলে দাবি এই বুদ্ধিজীবীর।

বিএনপির চলমান কর্মসূচি নিয়ে তিনি বলেন, ‘তারা জন্মদিন, বিয়ের অনুষ্ঠান করে জনগণের কাছে পৌঁছতে পারবে না। বিএনপিকে জনগণের কাছে যেতে হলে রাস্তায় নামতে হবে। তা না হলে বিএনপির জন্য আরো মহাবিপদ অপেক্ষা করছে।’

বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তরের দায়িত্বে থাকা সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স আমার সংবাদকে বলেছেন, ‘বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও জিয়াউর রহমানের কয়েকটি পোগ্রামে আসার পর সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটির প্রথম সভায়ও তিনি প্রকাশ্যে এসেছেন। এতে করে দলের নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত। করোনায় দলের অনেক নেতাই কর্মসূচিতে আসতে না পারলেও তরুণরা তারেক রহমানের উপস্থিতিতে চাঙ্গা হয়ে উঠছে।

গত শুক্রবারও ঢাকাসহ সারা দেশে অনেক কর্মসূচি পালন হয়েছে। আজকে (গতকাল) ও ঢাকায় কেন্দ্রীয়ভাবে অনেকগুলো কর্মসূচি পালন হয়েছে। এখন কর্মসূচির সংখ্যা আরো বাড়বে। তবে নেতাকর্মীদের প্রতি আমাদের নির্দেশনা থাকবে তারা যাতে সামাজিক ও শারীরিক সুরক্ষাসহ সতর্কতা নিয়ে চলেন।

আমারসংবাদ/এসটিএম