Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪,

ইবির গুণগত মানে অসন্তোষ

নভেম্বর ২১, ২০২০, ০৭:১৫ পিএম


 ইবির গুণগত মানে অসন্তোষ

স্বাধীন বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত প্রথম সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়টি ৪২তম বর্ষে পদার্পণ করছে আজ রোববার। ১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কের পশ্চিমে ১৭৫ একর জমিতে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়।

১৯৮০ সালের ২৭ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস হয়। এরপর ১৯৮১ সালের ৩১ জানুয়ারি ড. এ এন এম মমতাজ উদ্দিন চৌধুরীকে প্রথম উপাচার্য নিয়োগ করা হয়। বর্তমানে ১৩তম উপাচার্যের দায়িত্বে আছেন অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম।

১৯৮৫-৮৬ শিক্ষাবর্ষে দুটি অনুষদের অধীনে চারটি বিভাগে মোট ৩০০ জন ছাত্র নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা হলেও বর্তমানে আটটি অনুষদের অধীনে ৩৪টি বিভাগে মোট শিক্ষার্থী ১৫ হাজার ৩৮৪ জন। বর্তমানে একটি ইনস্টিটিউট ও অডিটোরিয়াম রয়েছে।

ছাত্রদের জন্য পাঁচটি ও ছাত্রীদের জন্য তিনটি আবাসিক হল রয়েছে। দেশি শিক্ষার্থীর পাশাপাশি রয়েছে বিদেশি শিক্ষার্থীও। সাধারণ ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে ১৯৯০-৯১ শিক্ষাবর্ষে প্রথমবারের মতো ছাত্রী ও ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রম চালু হয়।

১৯৯২ সালে উচ্চতর ডিগ্রি দেয়ার জন্য ১৯৯৩ সালের দিকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে এমফিল ও পিএইডি কার্যক্রম শুরু হয়। এ পর্যন্ত এমফিল ডিগ্রি দেয়া হয়েছে ৬৭৬ জনকে এবং এমফিল গবেষক হিসেবে আছেন ২৬৫ জন। পিএইচডি ডিগ্রি দেয়া হয়েছে ৪৭৪ জনকে এবং পিএইচডি গবেষক আছেন ৩৩৮ জন।

 উচ্চশিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি এস্যুরেন্স সেল (আইকিউএসি) কাজ করে যাচ্ছে। বিগত ৪১ বছরে শিক্ষার গুণগত মান, পরিবেশ, গবেষণা ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান অসন্তোষজনক বলে দাবি করছেন শিক্ষকরা। শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসবিমুখতা, অনাবাসিকতা, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ভীতিকর সম্পর্ক, শিক্ষক রাজনীতি ও পর্যাপ্ত লজিস্টিক সাপোর্ট  না থাকাই পিছিয়ে পড়ার কারণ বলে জানান শিক্ষকরা।

এ বিষয়ে অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল মুঈদ বলেন, ‘টিচিং স্টাফ যতটা রিচ, গবেষণাধর্মী হওয়া দরকার ছিলো, যে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় যাওয়ার কথা ছিলো তা সন্তোষজনক নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য গবেষণা নয় গবেষণা দেশ, সমাজ, বিজ্ঞানকে নিয়ে। শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশ নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে।

শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক রাজনীতি একটা বাধা। বর্তমানে শিক্ষকদের যে রাজনীতি এটা শিক্ষক রাজনীতি না, এটা গ্রুপিং ও লবিং। পরিচ্ছন্নভাবে ন্যূনতম মাত্রায় ছাত্র রাজনীতি থাকা উচিত তবে লেজুড়বৃত্তিক নয়। ছাত্র নেতারা ছাত্রদের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে কথা বলবে।’

ইবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. কাজী আখতার হোসেন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় হবে গবেষণাকেন্দ্র এ কনসেপ্ট আমাদের দেশে গড়ে উঠেনি। বিশ্ববিদ্যালয় হবে পঠন, পাঠন ও গবেষণার মাধ্যমে নতুনত্ব সৃষ্টি করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়ানো। আনুপাতিক হারে গবেষণার দিক থেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় বেশি এগিয়ে নেই।

তবে একটু ঘুরে দাঁড়িয়েছে আগামীতে ভালো কিছু হবে বলে আমার বিশ্বাস। পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় না হওয়া ও অবস্থানগত কারণে লেখাপড়ায় কোলাহল না থাকায় শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে অন্তরায়।

প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা, গবেষণা আশানুরূপ নয়, উত্তরোত্তর বৃদ্ধি হওয়া উচিত। এদিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিতে লজিস্টিক সাপোর্ট বৃদ্ধি, পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপ দিতে হবে। কেননা, শুধু পাঠদানেই শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত হয় না, লেখাপড়ার পাশাপাশি মনোবিকাশে আড্ডার প্রয়োজন।’

উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের গুণ মান বৃদ্ধি করার জন্য শিক্ষক, গবেষকদের মোটিভেশান দরকার। শিক্ষকতাকে শুধু চাকরি হিসাবে ভাবলে হবে না এটা গবেষণা হিসেবে ভাবতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে স্মুথলি গবেষণার স্রোত তৈরি করবো। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় শিক্ষা, গবেষণায় কতটা এগিয়ে তা আমি জানি না।

তবে ৪১ বছরের বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় গবেষণার চলমান রেশ আছেই। কোভিড ডেতে এই চলমান কার্যক্রম বৃদ্ধি করা ও শিক্ষক, গবেষকদের মনোযোগ বৃদ্ধি করা যায় এ বিষয়ে আমি খুব দ্রুত নজর দেবো।’

উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে আজ প্রশাসন ভবন চত্বরে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, শান্তি ও আনন্দের প্রতীক পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের কর্মসূচির  উদ্বোধন করবেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম। সরকারি স্বাস্থ্যবিধি মেনে ৪২টি ফলজ ও বনজ গাছের চারা রোপণ করা হবে। পরে প্রশাসনভবনের সভাকক্ষে কেক কাটা ও সন্ধ্যা ৬টায় অনলাইন আলোচনা সভার আয়োজন করেছে কর্তৃপক্ষ।

আমারসংবাদ/এআই