Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

যোগাযোগ নেটওয়ার্কে অর্থনীতি সচল রয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

নভেম্বর ২২, ২০২০, ০৬:৩০ পিএম


 যোগাযোগ নেটওয়ার্কে অর্থনীতি সচল রয়েছে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারে এসে সারা দেশে ব্যাপক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে সমর্থ হয়েছে বলেই এখনো দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রয়েছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর আমরা সারা দেশে যোগাযোগের ব্যাপক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছি। যার ফলে, আজকে আমাদের অর্থনীতির চাকা অনেক সচল। আরও অনেক কাজ আমরা শুরু করেছি সেগুলোও সম্পন্ন করবো, ইনশাআল্লাহ।

২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর ধারাবাহিকভাবে সরকারে আছি বলেই আজকে আমরা দেশের মানুষের উন্নতিটা করতে পারছি।

গতকাল রোববার সকালে মাগুরা, নারায়ণগঞ্জ এবং যশোরে তিনটি সেতু এবং পাবনায় একটি স্বাধীনতা চত্বরের উদ্বোধনকালে একথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।

করোনার মধ্যে সরকারের সাফল্য প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দারিদ্র্য সীমা যেমন আমরা কমিয়ে এনেছি, মাথাপিছু আয়ও আমরা বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছি, মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হচ্ছে। গ্রামপর্যায় পর্যন্ত মানুষের জীবন মান যে উন্নত করা যায় সেটাও আমরা প্রমাণ করেছি।

সেই সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত করা এবং উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার সুযোগ, বিদেশ থেকে বিনিয়োগ আনার ব্যবস্থা, সর্বোপরি অর্থনীতির চাকাটা যাতে সব সময় সচল থাকে সে সব দিকে বিশেষভাবে নজর দিয়েই তার সরকার পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং উন্নয়নের কাজ বাস্তবায়ন করছে, বলেন তিনি।

নিজ দল আওয়ামী লীগ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কিন্তু হঠাৎ করেই কিছু করিনি। আওয়ামী লীগ যখন বিরোধী দলে তখনো কিন্তু আমাদের পরিকল্পনা ছিলো। কেননা, জাতির পিতা আমাদের যে সংবিধান দিয়ে গেছেন সেখানে দেশের মানুষের উন্নয়নের কথা, মৌলিক চাহিদাগুলো বাস্তবায়নের কথা স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। কাজেই, যখনই সরকারে এসেছি পরিকল্পিত উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছি এবং যার সুফল এখন দেশের মানুষ পাচ্ছে।

তিনি বলেন, এই তিনটি সেতু মহম্মদপুর, রূপগঞ্জ এবং অভয়নগরবাসীর জন্য মুজিববর্ষের উপহার। তিনি এ সময় করোনার সেকেন্ড ওয়েভ সম্পর্কে জনগণকে পুনরায় সচেতন করে দিয়ে মাস্ক ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী যে প্রকল্পগুলোর উদ্বোধন করেন সেগুলো হচ্ছে- মাগুরা জেলার মহম্মদপুর উপজেলাধীন মধুমতি নদীর উপর এলাংখালী ঘাটে ৬০০ দশমিক ৭০ মিটার দীর্ঘ শেখ হাসিনা সেতু, নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলাধীন মুড়াপাড়া ফেরিঘাট রাস্তায় শীতলক্ষ্যা নদীর উপর ১০০০০ মিটার চেইনেজে ৫৭৬ দশমিক ২১৪ মিটার দীর্ঘ বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক) সেতু এবং যশোর জেলার অভয়নগর উপজেলায় সড়ক ও জনপথের যশোর-খুলনা সড়কের ভাঙ্গাগেট (বাদামতলা) হতে আমতলা জিসি ভায়া মরিচা, নাউলী বাজার সড়কে ভৈরব নদীর উপর ৭০২ দশমিক ৫৫ মিটার দীর্ঘ সেতু। এছাড়া, উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার পাবনায় বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল স্বাধীনতা চত্বরেরও উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে গণভবনের সঙ্গে সচিবালয় থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, মাগুরা, নারায়ণগঞ্জ ও যশোর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এবং পাবনার বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল স্বাধীনতা চত্বর সংযুক্ত ছিলো।

অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এলজিআরডি ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেলাল উদ্দিন এবং পাবনা প্রান্ত থেকে স্বাধীনতা চত্বর বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক এবং স্কয়ার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা অঞ্জন চৌধুরী বক্তৃতা করেন।

এলজিআরডি ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টচার্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রান্তে এবং নারায়ণগঞ্জ প্রান্তে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, বীর প্রতীকসহ স্থানীয় সংসদ সদস্য, গণমান্য ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি এবং জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং উপকারভোগী জনগণ নিজ নিজ প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন।

গণভবন প্রান্ত থেকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। অনুষ্ঠানে নবনির্মিত তিনটি সেতু এবং ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল স্বাধীনতা চত্বর’-এর ওপর দুটি পৃথক ভিডিও চিত্র প্রদর্শিত হয়। প্রধানমন্ত্রী ৭৫-এর হত্যাকাণ্ডের পর ছয় বছর প্রবাস জীবন কাটাতে বাধ্য হয়ে ৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হলে জোর করে দেশে ফিরে আসেন।

সে সময়ের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘বাবা-মা, ভাই সব হারিয়ে নিঃস্ব, রিক্ত হয়ে বাংলাদেশে ফিরে এসেছিলাম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আকাঙ্ক্ষার ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত এবং উন্নত সোনার বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন পূরণ করবো বলে।’

তিনি বলেন, একটাই সিদ্ধান্ত ছিলো- এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতেই হবে। যা আমার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আন্তরিকভাবে চেয়েছিলেন এবং দেশের মানুষকে উন্নত জীবন দেয়ার জন্য নিজের জীবন তিনি উৎসর্গ করেছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী এসময় নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ায় দেশের জনগণের প্রতি তার কৃতজ্ঞতা পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা জানাই তারা বারবার আমাদের নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে দেশসেবা এবং তাদের জন্য কাজ করার সুযোগ দিয়েছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, প্রকৃতপক্ষে ৭৫-এর পর বাংলাদেশ অন্ধকারে ছিলো। তবুও ৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর একটু আলোর ঝলকানি পেয়েছিল। তবে, আমরা একটা চক্রান্তের কারণে পুনরায় ক্ষমতায় আসতে না পারায় আবারো অন্যায়-অত্যাচার, নির্যাতন আর অন্ধকারে দেশ ডুবে যায় এবং বাংলাদেশের মানুষের জীবন থেকে আরও আটটি বছর চলে যায়। তিনটি সেতু নির্মাণের কারণে স্থানীয় জনগণের জীবন মানে পরিবর্তন ঘটবে বলে সরকার আশা করছে- তার একটি খতিয়ান তুলে ধরে পাবনার বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুলের জীবনের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, রফিকুল ইসলাম বকুল একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন। তিনি (শেখ হাসিনা) যখন ৮১ সালে প্রবাস জীবন থেকে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দেশে ফেরেন তখন বারংবার বাধার সম্মুখীন হন। তখন যে কয়েকজন তার পাশে দাঁড়িয়েছেন এবং সাহসে ভর করে সে কঠিন অবস্থার মোকাবিলা করেছেন তার মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল অন্যতম।

স্মৃতি রোমন্থনে বহু বছর আগে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অভিযাত্রায় এই রফিকুল ইসলাম বকুলের সঙ্গে তার একটি স্মরণীয় ঘটনা অনুষ্ঠানে তুলে ধরে- কি প্রতিকূলতার মধ্যে তাকে রাজনীতি করতে হয়েছে তারও একটি নমুনা উপস্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী।

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, বাংলাদেশে আসার পর থেকে বারবার আমি বাধাগ্রস্ত হতাম, বিএনপি প্রতিটা ক্ষেত্রে আমাকে বাধা দেয়। কোপাকুপি, বোমাহামলা, গাড়ি আক্রমণ, মঞ্চ পুড়িয়ে দেয়া, জনসভায় হামলা সবই চলতো।

তিনি বলেন, আমি যখন খুলনা থেকে রাজশাহী রওনা হলাম পথিমধ্যে হাজারো মানুষের ঢল। ভিড় ঠেলে যেতে অনেক সময় লেগে গিয়েছিল। ঈশ্বরদী পৌঁছাতেই রাত প্রায় ১১টা বেজে যায়। সেখানে পৌঁছে শুনলাম আমাদের নাটোরের জনসভার মঞ্চ ভেঙে দিয়েছে। সেখানে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর আক্রমণ করে তাদের কুপিয়েছে, গুলি করেছে, আমাকে সেখানে যেতে দেবে না এবং সেখানেই আমি সিদ্ধান্ত নিলাম আমি পিছিয়ে যাবো না। আমি যাবোই।

প্রধানমন্ত্রী স্মৃতি রোমন্থনে বলেন, আমরা তখন তাকে বকুল মামা (মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল) বলে ডাকতাম। তাকে বললাম আমার সাথে আপনার কর্মী দিতে হবে এবং ট্রাক ভাড়া করতে হবে যেহেতু অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মঞ্চ পুড়িয়েছে, বিএনপি আমাদের ঢুকতে দেবে না, কিন্তু আমরা ঢুকবোই। সেখানে ৪০-৫০ জন কর্মীও একটি বাহিনী নিয়ে ট্রাক ভাড়া করে বকুল মামা আমাদের সাথে ছিলেন।

তিনি বলেন, আমাদের গাড়ি ছিলো না, খুলনার লাইনের একটা বাস ভাড়া করে আমরা যাচ্ছিলাম, মানুষের চাপে সে বাসের কয়েকটি গ্লাসও ভেঙে যায়। নাটোরে ঢোকার মুখের রেল ক্রসিংয়ে প্রচণ্ড বোমাবাজি শুরু করলো বিএনপি। বকুল মামা তার লোকজন নামিয়ে আক্রমণকারীদের ধাওয়া দিলো। যদিও সেখানে বিএনপি সেদিন একটি ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি করেছিল।

তবুও আমরা সেখানে আহতদের উদ্ধার করে একটি অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে ট্রিপ করে করে অসংখ্য আহত নেতাকর্মীকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে রাস্তার ওপরই একটা জনসভা করে আসলাম। ‘সেই চরম দুঃসময়ে এই রফিকুল ইসলাম বকুল আমার পাশে দাঁড়িয়েছিল,’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, এই পাবনা ছিলো সর্বহারাদের একটা জায়গা। আর স্বাধীনতার পরপর স্বাধীনতাবিরোধী পাকিস্তানের দোসররা আন্ডারগ্রাউন্ড পার্টির সঙ্গে মিশে গিয়েছিল। যার জন্য একদিকে যেমন ছিলো আন্ডারগ্রাউন্ড পার্টি অন্যদিকে জামায়াতের একটা বিরাট ঘাঁটি। একাত্তরের বিজয়ের পরপরই আল্ট্রা লেফটিস্ট পার্টি, রাজাকার, সর্বহারারা সব একসঙ্গে জুটে গেলো সেখানে। যে কারণে সেখানে সব সময়ই একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি ছিলো এবং আমাদের বহু নেতাকর্মীকে সেখানে হত্যা করা হয়।

এক সময় সেখানে দলের গ্রুপিং থাকায় মুকুল মামাকে এক সময় দলত্যাগ করতে হলেও সে গ্রুপিং এখন নেই বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, একটা মানুষ চলে যেতে পারে কিন্তু একটা মানুষের যে অবদান আমি সেটাকে কখনো অস্বীকার করি না এবং আমি তা করবো না। তার অবদানটা আমাদের মনে রাখতে হবে। কারণ, সে একজন মুক্তিযোদ্ধা। তার নামে এই চত্বরটি করায় তিনি অঞ্জন চৌধুরীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান।

আমারসংবাদ/এআই