Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

মানবিক কাজে কুড়িয়েছে প্রশংসা

আসাদুজ্জামান আজম

নভেম্বর ২২, ২০২০, ০৬:৪০ পিএম


মানবিক কাজে কুড়িয়েছে প্রশংসা

নানা প্রতিকূলতার মধ্যেই এক বছর অতিবাহিত করেছে আওয়ামী লীগের অন্যতম সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের বর্তমান নেতৃত্ব। দায়িত্ব গ্রহণের পর বছরজুড়েই মানবিক কর্মকাণ্ডে গুরুত্ব দিয়েছে সংগঠনটির শীর্ষ দুই নেতা। বিশেষ করে করোনা সংকট, বন্যা ও আম্ফান মোকাবিলায় নেয়া কর্মসূচির প্রশংসা কুড়িয়েছে হাইকমান্ডসহ সবার।

বৈশ্বিক মহামারি করোনা সংকটে দেশব্যাপী মাস্ক, হ্যান্ডস্যানিটাইজার বিতরণ, মাইকিং, কর্মহীন ঘরবন্দি মানুষের মাঝে খাদ্য ও অর্থ সহায়তা, ফ্রি টেলিহেলথ সার্ভিস, ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, করোনা রোগী বহন, করোনায় মৃত লাশের গোসল, জানাজা, দাফন ও সৎকার, কৃষকের ধান কেটে মাড়াই করে ঘরে তুলে দেয়া, বৃক্ষরোপণ ও বিতরণ, ঘূর্ণিঝড় আম্ফান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় মানুষের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণসহ নানা মানবিক কর্মসূচি পালন করেছে যুবলীগ।
 
গত বছরের আজকের দিনে অর্থাৎ ২৩ নভেম্বর সপ্তম কংগ্রেসে যুবলীগের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মনির জ্যেষ্ঠপুত্র, পরিচ্ছন্ন ও সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত শেখ ফজলে শামস পরশ।

সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন যুবলীগের মাঠের রাজনীতির দীর্ঘ সময়ের ত্যাগী নেতা মাইনুল হোসেন খান নিখিল। দায়িত্ব গ্রহণের পর যুবলীগের প্রতিষ্ঠাকালীন মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে গত এক বছরে মানবিক রাজনীতিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন পরশ-নিখিল। দেশজুড়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন যুবলীগের নেতাকর্মীরা।

মার্চের প্রথম সপ্তাহে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিলে জনগণকে সচেতন করতে যুবলীগের উদ্যোগে দেশব্যাপী লিফলেট, হ্যান্ডস্যানিটাইজার, মাস্ক বিতরণ ও মাইকিং করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর ৩১ দফা নির্দেশনা মোতাবেক মানবিক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামেন নেতাকর্মীরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সারা দেশে দরিদ্র কৃষকের ধান কেটে মাড়াই করে ঘরে তুলে দিয়ে প্রশংসা পায় যুবলীগের কর্মীরা।

করোনা সংকটে যুবলীগের মাধ্যমে সরাসরি সাড়ে ৪৩ লাখ মানুষ খাদ্যসহায়তা পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে দেয়া ঈদসামগ্রী এবং ভাইরাসের সুরক্ষাসামগ্রী পেয়েছে অন্তত এক কোটি মানুষ। দুর্যোগকালীন সময়ে যুবলীগের মানবিক কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করেছেন খোদ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ১০ জুলাই জাতীয় সংসদে করোনা সংকট মোকাবিলায় যুবলীগের বিভিন্ন কার্যক্রমের ভূয়সী প্রশংসা করে বক্তব্য রাখেন তিনি।

গত ডিসেম্বর এবং জানুয়ারি মাসজুড়ে সারা দেশে অসহায় শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করে যুবলীগ। রাজধানীতে বেশ কয়েকটি বস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে অংশ নেন যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল।

এরপর গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন, যশোর-৬, গাইবান্ধা-২, বগুড়া-৬, ঢাকা-৫, ঢাকা-১৮, সিরাজগঞ্জ-১ আসনের প্রতিটি নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে যুবলীগ। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নৌকা মার্কার সমর্থনে কেন্দ্রীয়, মহানগর, থানা ও ওয়ার্ডপর্যায়ের নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রতিদিনই গণসংযোগ, আলোচনা ও নির্বাচনি কার্যক্রমে অংশ নেন এ শীর্ষ দুই নেতা।

তৃণমূলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করার অংশ হিসেবে প্রতিনিধি সভার উদ্যোগ নেয়া হয়। ১৮ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার ঢাকা বিভাগীয় প্রতিনিধি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ২ মার্চ অনুষ্ঠিত হয় চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রতিনিধি সভা। গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলা যুবলীগের সম্মেলনেও অংশ নেন চেয়ারম্যান শেখ পরশ।

এপ্রিলের শুরুতেই ঢাকা মহানগরের রোগীদের যাতায়াত সংকট বিবেচনা করে যুবলীগ ২৪ ঘণ্টা ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস চালু করে। এরপর বিভিন্ন মহানগর ও জেলা-উপজেলাপর্যায়ে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস চালু হয়। একই সঙ্গে করোনা ভাইরাসসহ অন্যান্য রোগের নির্বিঘ্নে জরুরি চিকিৎসাসেবা পেতে সাধারণ মানুষের জন্য ২৪ ঘণ্টা টেলিমেডিসিন সেবাও চালু করে যুবলীগ।

চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক-নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য রাজধানীর হাসপাতাল, জেলা-উপজেলা হাসপাতাল, ক্লিনিক, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সুরক্ষাসামগ্রী বিতরণ করেছে যুবলীগ। রমজান মাসজুড়ে কর্মসূচিতে ভিন্নতা আনে যুবলীগের হাইকমান্ড। খাদ্যসামগ্রীর পাশাপাশি শুরু হয় ইফতার সামগ্রী ও রান্না করা খাবার বিতরণ। পুরো মাস ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও পান্থপথ মাঠে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয়।

গত ২৮ অক্টোবর যুবলীগের সাংগঠনিক নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৪তম জন্মদিন উপলক্ষে কয়েকশ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী অসহায় মানুষকে নতুন কাপড়, খাবার ও নগদ অর্থ বিতরণ করা হয়। এ সময় এসব অসহায় মানুষকে নিয়ে শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্য কামনা করে মিলাদ ও দোয়া করা হয়।

জন্মশতবার্ষিকী ও মুজিববর্ষকে স্বাগত জানিয়ে মার্চের প্রথম প্রহরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করার মধ্য দিয়ে বছরব্যাপী কর্মসূচি শুরু হয় বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের।

ওইদিন (শনিবার) দিবাগত রাত ১২ টা ১ মিনিটে  রাজধানীর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হয়। এ সময় ধানমন্ডি ৩২নং সড়ক আলোকিতকরণ ও এলইডি বেলুন উড়ানো হয়।

পরে ধানমন্ডি লেকে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করেন তারা। এরপর চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে মাসব্যাপী যুবলীগের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে সারা দেশে যুবলীগের উদ্যোগে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করা হয়।   

গত আগস্ট মাসজুড়ে বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ আগস্ট নিহত সকল শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় মানবিক কর্মসূচি পালিত হয়। পুরো মাস কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কোরআন খতম ও রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয়।

মূলত হাল ধরার পর থেকেই যুবলীগকে মানবিক কর্মকাণ্ডের প্লাটফর্ম হিসেবে মেলে ধরেছেন বর্তমান চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ। করোনা ভাইরাসের কঠিন পরিস্থিতিতে এক মুহূর্তও বসে থাকেননি তিনি। ভার্চুয়াল মাধ্যম ব্যবহার করে প্রতিনিয়ত মাঠপর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।

গত ১১ নভেম্বর যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ বলেন, যুবলীগ কোনো এলিট শ্রেণির সংগঠন নয়, যুবলীগ সাধারণ মানুষের সঙ্গে ছিলো এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। যেখানে অন্যায়-অত্যাচার, সেখানেই যুবলীগ প্রতিবাদ করবে। অসহায়দের পাশে দাঁড়াবে।

যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক  মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, যুবলীগ এখন আর কারো হয়ে কাজ করবে না। রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠাতা শেখ মনি ভাইয়ের নির্দেশিত পথে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় কাজ করবে। গত এক বছরে সে লক্ষ্য নিয়েই আমরা মানবিক কর্মকাণ্ড পারিচালিত করেছি। যেকোনো দুর্যোগে যুবলীগের এ মানবিক যাত্রা অব্যাহত থাকবে।

আমারসংবাদ/এআই