Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

বৈদেশিক অনুদান ৮৪ থেকে নেমেছে ৩ শতাংশে

নিজস্ব প্রতিবেদক

নভেম্বর ২৩, ২০২০, ০৭:১৫ পিএম


বৈদেশিক অনুদান ৮৪ থেকে নেমেছে ৩ শতাংশে

দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হওয়ায় বৈদেশিক সহায়তায় অনুদানের পরিমাণ ন্যূনতম পর্যায়ে নেমে এসেছে। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে বৈদেশিক সহায়তায় অনুদানের পরিমাণ ছিলো ৮৪ থেকে ৮৬ শতাংশ, বাকিটা ছিলো ঋণ। এখন সেই অনুদানের পরিমাণ নেমেছে ৩ শতাংশে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের বৈদেশিক সহায়তা সম্পর্কে মন্ত্রিসভাকে অবহিত করার প্রতিবেদনে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।

গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।

গণভবনপ্রান্ত থেকে প্রধানমন্ত্রী এবং সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মন্ত্রীরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে যোগ দেন। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘বৈদেশিক সহায়তার অবস্থা কী সে বিষয়ে ছিলো এই উপস্থাপনাটি।

সেখানে ১৯৭১-৭২ থেকে এই পর্যন্ত ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত যদি একটা তুলনা করি সেখানে দেখা যাবে, ১৯৭১-৭২ অর্থবছর আমাদের বৈদেশিক সহায়তার মধ্যে গ্র্যান্ট (অনুদান) ছিলো সর্বোচ্চ ৮৪/৮৫/৮৬ শতাংশ, ঋণ ছিলো ছয় থেকে আট শতাংশ। ম্যাক্সিমামটাই (বেশির ভাগ) দান হিসেবে আসতো।’

তিনি বলেন, ‘২০০৯-১০ অর্থবছরের দিকে গিয়ে অনুদান এসেছে ৩০ শতাংশের মতো, ৭০ শতাংশের মতো আসে ঋণ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে অনুদান আসে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশের মতো, আর ৯৫ শতাংশই আসে ঋণ হিসেবে। আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা কিন্তু এটা থেকে বোঝা যাচ্ছে, কীভাবে শিফট হয়ে যাচ্ছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে অনুদান আরও কমে গেছে, ২-৩ শতাংশের মধ্যে রয়েছে, ৯৭ শতাংশই আসে ঋণ হিসেবে। আমরা আর দানের ওপর নির্ভর করছি না। আমরা আমাদের নিজস্ব দক্ষতার ওপর নির্ভরশীল।’

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সবচেয়ে মজার বিষয় হলো আমরা রি-পেমেন্টের ক্ষেত্রে কোনো দিনই ডিফল্ডার হইনি। এটা একটা বড় সাকসেস। তিনি বলেন, ১৯৯৭-৯৮ সালে আমাদের (বৈদেশিক সহায়তার) ডিসবার্সমেন্ট (অর্থছাড়) ছিলো ৭৪৮ মিলিয়ন ডলার, তখন আমাদের জিডিপির ৩০ দশমিক ৪৭ শতাংশ ছিলো ঋণের পরিমাণ।

 ২০১৯-২০ অর্থবছরে আমাদের ডিসবার্সমেন্ট হচ্ছে সাত হাজার ১২১ মিলিয়ন ডলার, কিন্তু এটা আমাদের জিডিপির মাত্রা ১৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ। এর মধ্যে আমাদের ডমেস্টিক ইনভেস্টমেন্ট অনেক বেড়ে গেছে। এত টাকা বাড়ার পরও জিডিপির সঙ্গে এর অনুপাতটা অনেক কমে এসেছে।

শুরু থেকে এখন পর্যন্ত আমাদের ৪৪ হাজার ২৩ মিলিয়ন ডলার। এটা জিডিপির ১৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ। ঋণের মধ্যে ৩৭ শতাংশ বিশ্বব্যাংকের, ২৪ দশমিক ৪৬ শতাংশ এডিবির, জাপানের জাইকার ১৭ দশমিক ৯ শতাংশ, চীনের ৬ দশমিক ৮১, রাশিয়ার ৬ দশমিক ১৪, ভারতের এক দশমিক ৩ এবং অন্যান্য ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। এই হচ্ছে আমাদের বৈদেশিক ঋণ।

১৯৮৯-৯০ অর্থবছরে আমাদের এডিপি (বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি) পাঁচ হাজার ১০৩ কোটি টাকা ছিলো জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এর মধ্যে বৈদেশিক সাহায্য ছিলো তিন হাজার ২৫৬ কোটি টাকা। এর মানে এডিপির ৬৩ শতাংশ ছিলো বৈদেশিক সহায়তা। ২০০৯-১০ অর্থবছরে এডিপির বরাদ্দ ২৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক সহায়তা ছিলো ১১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এডিপিতে ফরেন এইডের কন্ট্রিবিউশন ছিলো ৩৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ।

তিনি বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আমাদের এডিপি হছে এক লাখ ৭৬ হাজার ৬২০ কোটি টাকা, বৈদেশিক সাহায্য আসে ৫১ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা। বৈদেশিক সাহায্য বেড়েছে কিন্তু পার্সেন্টেজ নেমে এসেছে ২৯ দশমিক ২৫-এ। আমাদের নিজস্ব বিনিয়োগ এত বেড়েছে যে, বাইরের ঋণ এলেও এটা শতাংশের হারে অনেক নিচে।

খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আমাদের ঝুঁকি নেই। বৈদেশিক ঋণ যখন জিডিপির ৪০ শতাংশ বা এর বেশি হয়ে যায় তখন ঝুঁকি থাকে। আমাদের জিডিপির তুলনায় বৈদেশিক ঋণ হলো ১৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। আমরা অনেক সেফটিতে আছি আল্লাহর রহমতে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও বলেন, বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করছি জিডিপির ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০ শতাংশ পর্যন্ত সেফটি রেঞ্জ। আমরা অনেক নিচে আছি।

আমারসংবাদ/এআই