Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর: স্বপ্নের যেনো অপমৃত্যু না ঘটে

মো. গিয়াস উদ্দিন, চট্টগ্রাম

নভেম্বর ২৪, ২০২০, ০৭:০৫ পিএম


মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর: স্বপ্নের যেনো অপমৃত্যু না ঘটে

মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের ঘোষণায়কে বন্দর ব্যবহারকারীরা সাধুবাদ জানালেও একইসাথে জানাচ্ছেন মিশ্র প্রতিক্রিয়া। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষের সাফ কথা— বিশ্ব মানের প্রকল্পটির নির্ধারিত সময়েই শেষ হবে নির্মাণকাজ।

চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য মতে, মাতারবাড়ী প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা। ২০২৬ সালে নির্মাণকাজ শেষে হলে মাত্র এক বছরেই এ সমুদ্রবন্দর দিয়ে এক মিলিয়ন ঘন টিউজ, ২০৩৬ সালে ছয় মিলিয়ন এবং ২০৪১ সালে সাত মিলিয়ন ঘন টিউজ কনটেইনার পরিবহন করা যাবে।

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্য ছাড়াও কলকাতা, হলদিয়া বন্দর, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার ছাড়াও আসিয়ান এবং উপসাগরীয় দেশগুলো এ বন্দরের সুবিধা পাবে।

১ংচট্টগ্রাম সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু বলেন, আমরা অনেক আগে থেকেই দাবি জানিয়ে আসছিলাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে। দেরিতে হলেও মাদারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের কাজ শুরু হচ্ছে জেনে ভালোই লাগছে। এখন দেখার বিষয় মান ঠিক রেখে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হচ্ছে কি না। তবে যত তাড়াতাড়ি কাজ শেষ হয় ততই সবার জন্য মঙ্গল।

চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক মাহমুদুল হক শাহ টেকসই উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে বলেন, সরকারের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। সরকার এবং বন্দর কর্তৃপক্ষ যে পরিকল্পনায় প্রকল্পটি এগিয়ে নিতে চান, তা যেন আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে বাস্তবায়ন করে। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে দেশের মেরিটাইম সেক্টরে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে বিধায় আন্তর্জাতিক সমুদ্র পথের আমদানি-রপ্তানিতে প্রভূত উন্নয়ন ঘটবে।

স্বপ্নের আর কোনো অপমৃত্যু দেখতে চান না জানিয়ে বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আহসানুল হক চৌধুরী আমার সংবাদকে বলেন, দেশের আমদানি-রপ্তানির ৯২ ভাগই হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে।

ভাবতেই কষ্ট লাগে— এ বন্দরের সক্ষমতা আগামী কয়েক বছরে শেষ হয়ে যাবে। এমন সময় মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের নির্মাণের খবর অবশ্যই শুভ উদ্যোগ। তবে এটি যেন বে-টার্মিনাল প্রকল্পের মতো স্বপ্নের অপমৃত্যু না হয়।

তিনি আরও বলেন, আমরা চাইবো টেকসই নির্মাণ শৈলী বজায় রেখে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পটির সমাপ্তি। মোদ্দাকথা মাদারবাড়ী সমুদ্রবন্দর অপারেশনে গেলে আমাদের ব্যবসার খরচ বাঁচবে, এর সুফল ভোগ করবে ভোক্তাগণ।

চট্টগ্রাম চেম্বারের প্রেসিডেন্ট মাহবুল আলম ও প্রকল্পের সময় এবং টেকসই উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে বলেন, আমাদের সময় ক্ষেপণের অবস্থা এখন আর নেই। অগ্রাধিকারভিওিতে আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কাজ শেষ করাই হবে সর্বোত্তম পন্থা।

কারণ মাতারবাড়ী প্রকল্পটি পুরো দেশের অর্থনীতির পরিবর্তনে সহায়তা করবে। চেম্বার প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, বাংলাদেশ ছাড়া দেশি-বিদেশি জাহাজগুলো এই বন্দরে আসবে। এর সুফল পাবে বাংলাদেশ ছাড়াও আমাদের প্রতিবেশী আরও কয়েকটি দেশ। তাই প্রকল্পটি যাতে সময়মতো বাস্তবায়ন হয় আমরা এ কামনাই করছি।

বে-টার্মিনালের প্রক্রিয়া চলমান আছে জানিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক আমার সংবাদকে বলেন, বললেই তো আর প্রকল্পের কাজ শুরু করা যায় না। ধারাবাহিক অনেক কাজ থাকে। বিধি মেনেই এসব করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

বে-টার্মিনাল প্রকল্পের অপমৃত্যুর প্রশ্ন কেন আসছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, বে-টার্মিনালের ভূমি অধিগ্রহণ ইতোমধ্যে প্রায় শেষ হয়েছে, পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হবে সত্বর।

আন্তর্জাতিক মান রক্ষা করে মাতারবাড়ী প্রকল্পের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হবে জানিয়ে বন্দর সচিব আরও বলেন, জাপানি অভিজ্ঞ পরামর্শকদের আওতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে, তাই এখানে কাজের কোনো শিথিলতা, মান কম হওয়ার কোনো অবকাশ নেই। আপনারা নিশ্চিত থাকতে পারেন, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরটি একটি বিশ্বমানের প্রকল্প হবে, সে লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি।

আমারসংবাদ/এআই