Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

সংকট আর সম্ভাবনার খুবি

মো. শফিকুল ইসলাম, খুবি প্রতিনিধি

নভেম্বর ২৪, ২০২০, ০৭:৪০ পিএম


 সংকট আর সম্ভাবনার খুবি

শিক্ষা ও গবেষণায় দেশের জন্য অসংখ্য অর্জন আর সুনাম বয়ে আনা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ৩ দশক পূর্ণ করছে আজ (২৫ নভেম্বর)। দক্ষিণবঙ্গের মানুষের বহুল প্রতীক্ষিত এই বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৯১ সালের আজকের এই দিনে যাত্রা শুরু করে। বয়স ৩০ পেরোলেও ১০৫ একরের ছোট এ ক্যাম্পাসের মাথা থেকে সংকটের বোঝা যেন নামছেই না।

ক্লাসরুম, ল্যাবরেটরি, পর্যাপ্ত জায়গা, আবাসন, পরিকল্পিত ইনডোর ও আউটডোর খেলার মাঠ, আধুনিক জিমনেসিয়াম কিংবা দৃষ্টিনন্দন প্রধান ফটক— সবকিছুই এখানে ধরা দিয়েছে সংকট হয়ে।

ক্লাসরুম ও ল্যাব সংকট : খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাসরুম ও ল্যাব সংকট রয়েছে এরকম ডিসিপ্লিনের সংখ্যা ৫-এর অধিক। এর মধ্যে অন্যতম এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স ডিসিপ্লিন, পরিসংখ্যান ডিসিপ্লিন, ইতিহাস ও সভ্যতা ডিসিপ্লিন, আইন ডিসিপ্লিন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিন।

শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা বলছেন, ডিসিপ্লিন খোলার আগে সঠিক পরিকল্পনার অভাবই এ সংকট তৈরি করেছে। এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স ডিসিপ্লিনের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী বিএম নাঈমুর রহমান আক্ষেপ করে বলেন, আমাদের ৫টা ব্যাচের ক্লাসের জন্যে মাত্র দুটো ক্লাস রুম বরাদ্দ। সেখানে বলতে গেলে অনেক কষ্ট করেই ক্লাস করতে হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রস্তাবিত ১০তলা একাডেমিক ভবন তৈরি হয়ে গেলে এ সংকট থাকবে না।

জায়গা সংকট : খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়তন মাত্র ১০৫ একর হওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী অবকাঠামো তৈরি সম্ভব হয় না। আগামী ৫০ বা ১০০ বছরের প্রয়োজন ও চাহিদার নিরিখে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ক্যাম্পাস সমপ্রসারণ অতীব জরুরি বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান আমার সংবাদকে বলেন, আমরা ক্যাম্পাস সংলগ্ন ২০৩ একর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাবনা তৈরি করছি। এই জমি পাওয়া গেলে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় আগামী একশ বছর নির্বিঘ্নে বিকাশ লাভ করতে পারবে।

আবাসন সংকট : খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় সাড়ে ছয় হাজার। এর মধ্যে আবাসন সুবিধা পাচ্ছেন মাত্র দুই হাজার শিক্ষার্থী। যা মোট শিক্ষার্থীর ৩০ শতাংশ।

শিক্ষার্থীদের দাবি— যারা হলে সিট পান তার অধিকাংশই ৩য় বর্ষে ওঠার পর আবাসন সুবিধা পেয়ে থাকেন। ক্যাম্পাস সংলগ্ন এলাকায় বাড়িভাড়ার ঊর্ধ্বগতি এবং চুরির শঙ্কা মেনে নিয়েই থাকতে হয় হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে।

খেলার মাঠ বেহাল : তুলনায় নবীন অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যেখানে গ্যালারিযুক্ত দৃষ্টিনন্দন ইনডোর স্টেডিয়াম রয়েছে। ৩ দশক পরও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেখানে ইনডোর কিংবা আউটডোর কোনো স্টেডিয়ামই তৈরি হয়নি। কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ সারাবছর পড়ে থাকে অযত্ন-অবহেলায়।

নেই পরিকল্পিত কোনো উন্নয়ন। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে আন্তঃডিসিপ্লিন খেলা শুরুর আগে ঘাসকাটা আর নামমাত্র রোলিং করা হয়। এদিকে রাস্তা সংলগ্ন মাঠের কোণে তৈরি করা হয়েছে কংক্রিটের ঢালাই এবং সেখানেই চলে ক্রিকেটের নেট প্রাকটিস। যেখান থেকে প্রতিবছরই ঘটছে দুর্ঘটনা।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিনের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী আ.স.ম. মোহাইমিনুল ইসলাম বলেন, জানুয়ারি মাসে নেট প্রাকটিসের সময় জাল ভেদ করে বল আমার চোখে আঘাত করে। দুর্ঘটনা এড়াতে জালের মান এবং ব্যবস্থাপনায় গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করি।

অপরিপূর্ণ প্রধান ফটক : প্রথম দর্শনে এটাকে ফটক বলা চলে। তবে পরিপূর্ণ কিংবা দৃষ্টিনন্দন বলা চলে না। বিশেষ বার্তা বহনকারী কোনো ব্যানার এখানে টানাতে হলে সাথে টানাতে হয় লম্বা লম্বা বাঁশ নতুবা কাঠ। ফটকটি খুলনা-সাতক্ষীরা এবং খুলনা-বাগেরহাট মহাসড়ক লাগোয়া হওয়ায় ক্যাম্পাসের ভাবমর্যাদা রক্ষার্থে এর সৌন্দর্যের প্রতি গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন শিক্ষার্থীরা।

জিমনেসিয়াম : প্রসঙ্গটা সামনে এলেই শিক্ষার্থীদের বলতে শোনা যায়, এতটা অপরিকল্পিত স্থাপনা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে নাকি এই প্রথম। সাড়ে ছয় হাজার শিক্ষার্থী আর ৫০০ শিক্ষকের জন্য একতলাবিশিষ্ট যে জিমনেসিয়াম তৈরি করা হয়েছে তাতে একসাথে সর্বোচ্চ ২০ জন সেবা নিতে পারবেন কি না সন্দেহ। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় ২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন জিমনেসিয়াম তৈরি করা হবে যা সকলের চাহিদা পূরণে সক্ষম।

সংকটসমূহের ব্যাপারে উপাচার্য বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি কোয়ালিটি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলতে আমরা উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণার গুণগত মানোন্নয়ন এবং অবকাঠামোগত সুবিধা বৃদ্ধির দিকে জোর দিয়েছি।

গত ১০ বছর বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত আনুকূল্যে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার প্রকল্প বরাদ্দে বিভিন্ন উন্নয়ন অবকাঠামো বাস্তবায়নের ফলে বিশ্ববিদ্যালয় পূর্ণাঙ্গতার পথে রয়েছে। চলতি প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ২০২২-২৩ সালের মধ্যে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে।

আমারসংবাদ/এআই